করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় বিধিনিষেধের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁ ও পর্যটনকেন্দ্র। বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় প্রায় সাড়ে চারমাস পর আগামী ১৯ আগস্ট থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শর্তসাপেক্ষে সেগুলো খুলে দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
তবে ১৯ আগস্টের অপেক্ষা করেননি পর্যটকরা। এর আগে শুক্রবার (১৩ আগস্ট) থেকেই সৈকতে ভিড় জমিয়েছেন বহু মানুষ। এ অবস্থায় নিষেধাজ্ঞার কথা বলে টুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ড কর্মীরা সৈকতে ভিড় করা পর্যটকদের ফিরিয়ে দিয়েছেন। ফলে ছুটির দিনে বহু মানুষ কক্সবাজারে বেড়াতে গেলেও সাগরে নামতে পারেননি।
সৈকতে হাঁটতে আসা চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার রাসেল বলেন, ‘অনেকদিন বের হতে পারিনি। বাচ্চাদের পাশাপাশি আমরাও হাঁপিয়ে ওঠেছি। গতকাল টিভিতে শুনলাম পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেয়া হচ্ছে। সেই খুশিতে আজ (শুক্রবার) কক্সবাজার সৈকতে এসেছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের লোকজন নামতে দেয়নি। এত কাছে এসেও সাগরের ঢেউটা ছুঁতে পারিনি, এটা খুবই কষ্টের। তারা মাইকিং করে বলছে ১৯ আগস্টের পর আসতে।’
সৈকতে কাজ করা সী সেইফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, ‘আমরাও অকর্মন্য বসে আছি। জনশূন্য সৈকতে বসে থাকতে আমাদেরও খারাপ লাগছে। অনেকে প্রতিদিন সৈকতে এসে বালিয়াড়িতে নামতে চান। কিন্তু সরকারি নির্দেশনার কারণে তাদের ফিরিয়ে দিতে হয়। আজও কয়েকশ ভ্রমণ পিপাসুকে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে তুলে দেয়া হয়েছে।’
ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে কক্সবাজার যান আমিনুল ইসলামসহ চার বন্ধু। তারা বলেন, ‘বিধিনিষেধ শিথিল করেছে জেনে কক্সবাজার চলে এসেছি। মনে করেছিলাম সৈকতেও নামা সম্ভব হবে। কিন্তু প্রশাসনের লোকজনের কঠোরতায় তা সম্ভব হয়নি। শুধু আমরা নই, আরো অগণিত নারী-পুরুষকেও একই ভাবে ফিরিয়ে দিয়েছে।’
তবে ১৯ আগস্ট থেকে পর্যটকদের সেবা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা রক্ষার কথা বলছেন তারা।
এ বিষয়ে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হোয়াইট অর্কিড হোটেলের জিএম রিয়াদ ইফতেখার বলেন, ‘স্থাপনা যখন করা আছে তা তো ফেলে চলে যেতে পারছে না কেউ। তাই পূর্বের মতো পর্যটন সেবা নিশ্চিত করতে হোটেল রেস্তোরাঁ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা শুরু করেছেন সবাই।’
কক্সবাজার গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেলের অর্ধেক কক্ষ ভাড়া দিতে। যেহেতু মহামারির সময়, তাই সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত জরুরি। যারা হোটেল আসবেন তাদের সচেতনামূলক পরামর্শ দিতে হবে সবার।’
সার্বিক বিষয়ে কক্সবাজার বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘সম্ভাবনার পর্যটনশিল্প করোনার কারণে ধুঁকছে। গত বছরের মতো চলতি বছরেও বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি সব ধরনের ব্যবসা সচল করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেভাবেই পর্যটনও সচল করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসায়ী, পর্যটক ও সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে সচেতনতা থাকলে আমরা ব্যবসা সচল করার পাশাপাশি করোনার প্রাদুর্ভাবও নিয়ন্ত্রণ করতে পারব বলে আশা রাখছি। এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নজরদারি থাকবে।’
বাংলা৭১নিউজ/জিকে