উজানের ঢল নামতেই অরক্ষিত দুই পাড় ভেঙে নতুন চ্যানেলে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তা। সব ভাসিয়ে যেন তিস্তা ছুটছে ভাটির দিকে। তীব্র স্রোতে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট আর জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন বিস্তৃত এলাকার মানুষ। আতঙ্কে কান্না আর হতাশার মধ্যেই এখন দিন কাটছে তাদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তিস্তার মূলপ্রবাহ ছিলো একটি। কিন্তু বছর দুয়েক আগে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে সরে যায় এ প্রবাহ। এবার যখন পানি বাড়তে শুরু করেছে, তখন আবার তা ফিরে এসেছে পুরনো চ্যানেলে। আগে থেকে নেয়া এখানকার যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল, সেগুলো ভাসিয়ে নিয়ে তিস্তা এখন ছুটছে ভাটির দিকে।
দেশের ১২টি উপজেলার ওপর দিয়ে বহমান তিস্তা অন্তত ৬টি স্থানে এভাবে নতুন গতিপথ সৃষ্টিতে উদ্ধত। সর্বগ্রাসী এ নদীর তীরে জিও ব্যাগ আর বালুর বস্তা ফেলে চলছে ঠেকানোর ব্যর্থ চেষ্টা।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের কাওসার, রবিউল, কাশেম ও আমেনা জানান, এখানে ২০ বার পর্যন্ত বাড়ি ভেঙে নতুন করে বাড়ি করেছেন এমন পরিবারও আছে। অনেকে মাথাগোঁজার আশ্রয় হারিয়ে অন্য কোথাও চলে গেছেন। কারও আশ্রয় হয়েছে স্টেশনের প্লাটফর্মে। তিস্তার তীব্র স্রোতে ঘরবাড়ি ও জমি হারিয়ে নিঃস্ব এখন তারা।
বড় পরিকল্পনা গ্রহণের কথা বছরের পর বছর ধরে বলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে বন্যা পরিস্থিতিতে ছোটখাটো ভাঙন রোধ করা ছাড়া কিছুই করছে না – এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, নদীর এক তীরে ৭০ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। অন্য তীরের মানুষ ও সম্পদ রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের জন্যে সার্ভে চলছে। এরপর অর্থ বরাদ্দ পেলে ওই তীরে রক্ষাবাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
নদী বাঁচাও আন্দোলনের সংগঠক বখতিয়ার হোসেন শিশির দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন তিস্তা নিয়ে। তিনি বলেন, একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার পক্ষ থেকে বাঁশের বান্ডেল দিয়ে ভাঙন ঠেকানো গেছে। কিন্তু সেটাও টোটকা চিকিৎসার মতো।
তিস্তা বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান বলেন, বন্যার সময় এলে বালুর বস্তা আর জিও ব্যাগ ফেলা হয়। এটা আসলে সরকারের অর্থ জলে ফেলা ছাড়া কিছু নয়।
প্রয়োজনে যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো তিস্তাপাড়ের মানুষদের রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি নদী বাঁচাও আন্দোলনের নেতাদের।
তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, প্রথমত ভাঙনের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে এখনই ছোট চ্যানেলগুলো বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয়ত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে অভিন্ন তিস্তার বাংলাদেশ অংশে ১১৫ কিলোমিটার অববাহিকার দুপাড়ের মানুষকে রক্ষার দাবি আরও জোরালো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বাংলা৭১নিউজ/একে