শব্দের চেয়ে বেশি গতিতে ছুটে গিয়ে পৃথিবী থেকে ৬৮ লাখ মাইল দূরের এক গ্রহাণু পিণ্ডতে সফলভাবে আঘাত করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার একটি ‘ডার্ট মহাকাশযান’।
বিবিসি জানিয়েছে, পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা কোনো গ্রহাণু হুমকি তৈরি করলে সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য কিভাবে ধাক্কা মেরে এর গতিপথ বদলে দেওয়া যায়, এটি ছিল সেই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রথম পরীক্ষা।
এ পরীক্ষা চালানো হয় মোটামুটি ১৬০ মিটার চওড়া একটি গ্রহাণুর ওপর, যার নাম দেওয়া হয়েছে ডাইমরফোস। ১০ মাস আগে পৃথিবী থেকে রওনা দেওয়া নাসার ‘ডার্ট মহাকাশযান’ সফলভাবে ওই গ্রহাণুর গায়ে আছড়ে পড়েছে।
মোটামুটি একটি ফুটবল স্টেডিয়াম আকারের ওই গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘর্ষের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ডার্টের গায়ে বসানো ক্যামেরা প্রতি সেকেন্ডে একটি করে ছবি পাঠাতে থাকে পৃথিবীতে। পুরো দৃশ্য ওয়াশিংটন ডিসির বাইরে নাসার মিশন অপারেশন সেন্টার থেকে ওয়েবকাস্ট করা হয়।
ছোট ওই মহাকাশযানের ধাক্কায় গ্রহাণু ডাইমরফোসের গতিপথ আদৌ পাল্টানো গেল কি না, কিংবা কতটা পাল্টালো, বিজ্ঞানীরা এখন সেটা দেখবেন টেলিস্কোপের মাধ্যমে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, ঘণ্টায় প্রায় ১৫ হাজার মাইল বেগে ডার্টের ওই আঘাতে ডাইমরফোসেরগতি খুব সামান্য হলেও কমবে, সেটা হতে পারে প্রতি সেকেন্ডে এক মিলিমিটারের ভগ্নাংশ পরিমাণ। তাতেও এর কক্ষপথে সুক্ষ্ম পরিবর্তন আসবে, যা দীর্ঘমেয়াদে এর গতিপথ পাল্টে দেবে।
পৃথিবীর জন্য বিপজ্জনক গ্রহাণুর গতিপথ বদলে দেওয়ার এই কৌশলের নাম দেওয়া হয়েছে কাইনেটিক ইমপ্যাক্টর টেকনিক। নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডাইমরফোসের ক্ষেত্রে গতিপথের পরিবর্তন কতটা হল, তা মাপতে কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে। তবে ডার্ট মহাকাশযান পাঠিয়ে গ্রহাণুকে আঘাত করার অংশটুকু তারা সফলভাবেই শেষ করেছেন।
দূর মহাকাশ ছাড়াও পৃথিবীর তুলনামূলক কাছাকাছি হাজারো বিভিন্ন আকারের গ্রহাণু ঘুরে বেড়াচ্ছে। ‘নিয়ার আর্থ অবজেক্টস’ নামে পরিচিত এ পাথুরে কাঠামোগুলোর ওপর বিজ্ঞানীরা নিয়মিত নজর রেখে চলেছেন। সৌরজগতের এ ধরনের অগণিত গ্রহাণু ও ধূমকেতুর মধ্যে খুব কমই পৃথিবীর জন্য সম্ভাব্য বিপজ্জনক বলে বিবেচিত হয়। তবে নাসার প্রধান বিজ্ঞানী টমাস জারবুচেন বলেন, ‘আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, আরো কিছু সময় অপেক্ষা করলে এমন বস্তু পাওয়া যেতেই পারে, যা বিপজ্জনক। ’
পৃথিবীতে প্রাচীনকালে অনেক গ্রহাণুর আঘাতের নজির রয়েছে। ডাইনোসরের বিলুপ্তির জন্য গ্রহাণুর আঘাতকেই অনেক বিজ্ঞানী দায়ী করে থাকেন। ভূতাত্ত্বিক তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, ছয় মাইল চওড়া চিকসুলুব গ্রহাণু প্রায় সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে পৃথিবীতে আঘাত হানে। ওই আঘাতের ফলে বায়ুমণ্ডল প্রচুর ধুলায় ছেয়ে যায়। সূর্যের আলো আটকে গিয়ে পৃথিবী দীর্ঘ শীতে নিমজ্জিত হয়েছিল। বাধাগ্রস্ত হয় উদ্ভিদের জন্ম। এর পরিণতিতে খাদ্যাভাবসহ নানা কারণে ডাইনোসরসহ প্রাচীন পৃথিবীর ৭৫ শতাংশ প্রাণী ক্রমে বিলুপ্তির পথে চলে যায়।
সূত্র : বিবিসি, এএফপি, নাসা।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ