সড়কের এক পাশে ঝোপঝাড়, অন্যপাশে কাঠ বাগান। মাঝ দিয়ে চলে গেছে নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক। সড়কটির আশুলিয়ার কবিরপুর এলাকা এখন আতংকের নাম। সেখানে সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয় ছিনতাই। একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে টহল ছাড়া নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কবিরপুরের এ স্থানটিতে সন্ধ্যা হলে নেমে আসে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আশপাশে জনবসতি কম থাকায় অনেকটা নির্জন থাকে পরিবেশ। সেই সুযোগেই সড়কে চলাচলরত যানবাহন থামিয়ে পথচারীদের সর্বস্ব কেড়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। দিনের পর দিন একই স্থানে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায় এলাকাটি এখন স্থানীয়দের কাছে আতংকের নাম।
ছিনতাইয়ের সঠিক পরিসংখ্যান কোনো আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে না থাকলেও স্থানীয়রা বলছেন মাসে অন্তত ১০ থেকে ১২টি ছোট-বড় ঘটনা ঘটছে এই স্থানে। কখনো কখনো নারী পথচারীদের এ পথে হারাতে হচ্ছে সম্ভ্রম। মাসের প্রথম ২০ দিন থাকে অপরাধীদের টার্গেট। পোশাক শ্রমিকদের বেতন হওয়ায় তারা এ ২০ দিন বেছে নেয়।
ওই স্থানে ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন পোশাক শ্রমিক ময়নাল আহমেদ বুলবুল। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জিরানী অফিস থেকে সাইকেলে কবিরপুর যাওয়ার পথে হঠাৎ ৩-৪ জন আমার গতিরোধ করে৷ এ সময় দুইজন আমাকে ধরে মারপিট শুরু করে। একজন ধারালো দা আর আরেকজন পিস্তল উঁচিয়ে আমার সর্বস্ব কেড়ে নেয়। পরে তারা সড়কের পাশে ভাঙা প্রাচীর দিয়ে পালিয়ে যায়।’
পুলিশকে জানিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা করাটা একটা ঝামেলা। তার মধ্যে এ পথেই সব সময় চলাচল করতে হয়। তারা যদি বড় কিছু করে ফেলে। তাই পুলিশের কাছে যাওয়া হয়নি।
শুধু বুলবুল নয়; এমন ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন আলী আকবর, সিজন, সোহরাব, বিল্লাল, মিরাজসহ আরো অনেকে। তাদের ঘটনা প্রায় একই রকম।
সবশেষ ঘটনা ঘটেছে গত সোমবার রাতে। বাইদগাঁও এলাকার আনিস বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় ছিনতাইকারীরা তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাতিয়ে নেয় সর্বস্ব। পরে বিকাশেও পরিবারের কাছ থেকে আদায় করে ১৫ হাজার টাকা। তাদের বাধা দিলে ছিনতাইকারীরা এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাকে কুপিয়ে আহত করে। ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল এলেও এ বিষয়ে কোনো মামলা হয়নি বলে জানান ভোক্তভোগী।
শুধু ছিনতাইয়ের ঘটনাই নয়; একাধিক নারী শ্রমিকের সম্ভ্রম হারানোর খবরও পাওয়া গেছে এই সড়কে।
স্থানীয় এক নারী বলেন, প্রায়ই সড়কের পাশে প্রাচীরের ভেতর থেকে নারীদের চিৎকার শোনা যায়। জঙ্গলের ভেতর থেকে পুলিশ এর আগেও ওড়না, ব্যাগ ও সেন্ডেল উদ্ধার করে। শুধু আটক করতে পারেনি অপরাধীদের।
বিষয়টির সত্যতা জানতে কথা হয় শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম আজারুল ইসলাম সুরুজের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঘটনা সত্য। প্রায়ই ছিনতাই হয়। তবে পুলিশ টহলে থাকে। প্রাচীর টোপকে গজারি বনে অপরাধীরা লুকিয়ে থাকে। অন্ধকার হওয়ায় তাদের ধরা যায় না।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আশুলিয়া থানায় গেলে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে পরিচয় গোপন রেখে একাধিক উপপরিদর্শক (এসআই) বলেন, কোনো বাতি নেই, চারদিক অন্ধকার। দুই পাশেই বিরাট বন। ছিনতাই করে বনের ভেতর চলে যায়। তিনজন পুলিশ দিয়ে রাতে এত বড় জঙ্গলে অভিযান চালানো যায় না। পুলিশ হলেও আমরাওতো মানুষ। দ্রুত স্থানটিতে আলোর ব্যবস্থা করার দাবি জানান তারা।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ