পরিবার সন্তানের কাছে ভরসা এবং নিরাপত্তার শ্রেষ্ঠ স্থান। সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার পথে পরিবার-পরিজনের ভূমিকা অপরিসিম। পরিবারের সবার মধ্যে সদ্ভাব না থাকেল ছোটদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। যেখানে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে ভেঙ্গে ছোট ছোট অণু পরিবার হচ্ছে সেখানে বাবা-মা’র উচিত সন্তানকে তাদের চাহিদানুযায়ি সময় দেওয়া। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি পারিবারিক শিক্ষাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য পরিবারের সকলের মধ্যে সুস্থ এবং সুন্দর সর্ম্পক থাকা উচিত। এতে ছোটদের বড় হয়ে ওঠার পথটা যেমন মসৃণ হয় তেমনি তাদের সাথে অগ্রজদের সম্পর্কটাও হয় দৃঢ়। চলুন জেনে নেওয়া যাক সন্তানের সাথে বন্ধন দৃঢ় করার উপায়গুলো-
১.ছোটরা অনুকরণপ্রিয়। যা দেখে তাই শেখে। বাবা-মায়ের ভাষার ব্যবহার, আচরণের উপরই নির্ভর করে সন্তানের ভবিষ্যত ব্যক্তিত্ব। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বৈরী সম্পর্ক থাকলে কিংবা একে অপরকে দোষারোপ বা খারাপ ভাষায় সম্ভাষণ করলে সন্তানের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পরে। মনোমালিণ্য হতেই পারে। এক্ষেত্রে চেষ্টা করুন সন্তানের সামনে ঝগড়া না করতে। একে অন্যের দোষ নয়, ভালো দিকগুলো নিয়ে চিন্তা করুন, প্রয়োজনে আলোচনায় সমাধানে করে নিন। তারপরেও সন্তানের সামনে ঝগড়া করবেন না।
২.ছোট পরিবারগুলোতে সন্তানের অন্যতম সমস্যা একাকীত্ব। বাবা-মা দু’জনই কর্মজীবী হওয়ায় সন্তানকে ঠিকঠাক সময় দিতে পারেন না। এতে সন্তানের ক্ষতি হয়। তাদের বায়না বাড়তে থাকে এবং সেগুলো না পেলে ক্রমশ জেদি ও উদ্ধত স্বভাবের হয়ে যায়। তাই খুব ব্যস্ত থাকলেও অফিস থেকে অন্তত একবার ফোন করে সন্তানের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলুন। বাড়িতে ফিরে শুধু পড়াশোনার খোঁজ না করে তাদের সাথে গল্প করুন। রাতে একসাথে খাবার খান। সময় যতই কম হোক না কেন, সন্তানের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব বাড়তে দেবেন না।
৩.যৌথ পরিবারে অনেকসময় দেখা যায় বাবা-মা শাসন করলে দাদা-দাদী, নানা-নানী, চাচা-মামা কিংবা খালা-ফুফুর কাছে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এই বিষয়টিকে কখনোই প্রশয় দেবেন না। প্রয়োজনে বাড়ির অগ্রজরা সবাই মিলে এই বিষয়ে আলোচনা করুন। সন্তান যেনো বুঝতে পারে অন্যায়টা সবার চোখেই অন্যায়। এতে ছোটদের নিজের ভুল স্বীকার করার সৎসাহস তৈরি হবে।
৪.একাধিক সন্তান থাকলে তাদের মধ্যে ঝগড়া, খুনসুটি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কখনো পড়াশোনা, চেহারা, পারফরমেন্স কোনো কিছুতে দু’জনের মধ্যে তুলনা করবেন না। খেয়াল রাখুন ওরা যেন একে অপরের ভালো গুণ প্রশংসা করতে শেখে। আত্মীয়স্বজনও যাতে কোনোভাবে আপনার সন্তানদের মধ্যে তুলনা না করেন সেদিকে নজর রাখুন।
৫.বয়ঃসন্ধিকালটা একটু বেপয়োরা। এ সময় বড়দের সাথে ছোটদের জেনারেশন গ্যাপের কারণে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে সন্তান যাতে বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসায় মেশানো ব্যবহার করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। পাশাপাশি নিজস্ব মতামত শালীনতার সাথে প্রকাশ করার স্বাধীনতাও দিন।
৬.মাঝেমাঝে ছুটির দিনে পরিবারের সকলে মিলে একটা আউটিং প্ল্যান করুন। প্ল্যানিংয়ের সময় বেড়ানোর জায়গা, লাঞ্চের মেন্যু ইত্যাদি নিয়ে সন্তানেরও মতামত নিন। ওর ইচ্ছেগুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ছোটখাটো কিছু দায়িত্ব দিন। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। সবসময় সন্তানের ভালো কাজের প্রশংসা করতে ভুলবেন না। পারিবারিক রীতি-ঐতিহ্য সন্তানকে বুঝানো উচিত যাতে সে শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠে পরিবারের সকলের প্রতি।
৭.পরিবারের সকলের জন্মদিন পালন করুন। খুব বেশি জমকালো করতে হবে এমন নয়, প্রয়োজনে ছোট করেই আয়োজন করুন। এতে পরিবারের সকলের সঙ্গে সন্তানের বন্ধন সুন্দর ও দৃঢ় হবে। সন্তানের যেকোনো সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দেবেন। পড়াশোনার পাশপাশি নাচ, গান, অভিনয়, বা ছবি আঁকার মতো বিষয়গুলো ছোটদের মানসিক বিকাশের দারুণ সহায়ক।
বাংলা৭১নিউজ/এবি