বাংলা৭১নিউজ,(কক্সবাজার)প্রতিনিধি: কক্সবাজার পৌর শহরের প্রধান সড়কসহ অর্ধশত উপসড়ক খানাখন্দকে ভরে মিনি জলাশয়ে রূপ নিয়েছে। এলোমেলো গর্তে ভরা সড়কে চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত যাত্রীসহ দুর্ঘটনায় পড়ছে ইজিবাইক (টমটম), রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মিনি যানবহন। গত এক সপ্তাহে অন্তত পাঁচ শতাধিক বিভিন্ন ধরনের যানবাহন যাত্রীসহ পানিতে উল্টে গিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে। খানাখন্দকের কারণে প্রায় প্রতিটি সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে নাগরিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার হয়ে আসায় সড়কগুলোর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের। রাতের আঁধারে করা সংস্কারে বিটুমিন, মানহীন ইট-কংক্রিট দিয়ে কোনো মতে দায়সারা সংস্কারের কারণে সপ্তাহ পার না হতেই পূর্বের অবস্থায় ফিরছে সড়কের গর্তগুলো।
সরেজমিন দেখা গেছে, বাস টার্মিনাল হয়ে পৌর ভবনের থানা রাস্তার মাথা পর্যন্ত এলাকায় অধিকাংশ স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোটবড় অসংখ্য গর্ত। এর মাঝে আলির জাঁহাল মসজিদ এলাকায় কাউন্সিলর সাহাব উদ্দিনের বাড়ির সামনে, রুমালিয়ারছরা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন স্থান হতে তারাবনিয়ারছরা পর্যন্ত, কালুর দোকান বাজার এলাকা, বার্মিজ মার্কেট এলাকায় জলাশয়ের মতো বেশ কয়েকটি বড় গর্ত রয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে ১০ থেকে ২০ গজ পর্যন্ত দৈর্ঘ্য নিয়ে এসব গর্ত বিস্তৃত।
এছাড়াও উপ-সড়কের মাঝে পিটি স্কুল দক্ষিণ রুপমালিয়ারছরা, উত্তর তারাবনিয়ারছরা, খুরুশকুল রাস্তার মাথা সড়ক, কালুরদোকান-পাহাড়তলী সড়ক, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, হাসপাতাল সড়ক, সরকারি বালিকা ও বালক উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক, চাউলবাজার সড়ক, বড়বাজার মসজিদ সড়ক, আইবিপি রোড, বিকে পাল সড়ক, খানাকামসজিদ রোড, পানবাজার সড়কসহ আরও কয়েক ডজন উপ-সড়কের অবস্থা চরম নাজুক। নাজুক পরিস্থিতি হয়ে আছে ভিআইপি সড়ক হিসেবে পরিচিত সার্কিট হাউস সড়কটিও। এখানে হিলডাউন সার্কিট হাউসের একটু পশ্চিমে বিশাল অংশ জলাশয়ে পরিণত হয়ে আছে। সড়কে সৃষ্ট গর্তে বৃষ্টির পানি জমে পরিণত হয় মিনি পুকুরে। এসব গর্ত দিয়ে মারাত্মক ঝুঁকিতে যান চলাচল করতে গিয়ে নিয়মিত গাড়ি উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনা রোধে ধীর গতি নিতে গিয়ে সকাল থেকে গভীর রাতে লেগে থাকে যানজট। এতে নষ্ট হচ্ছে কর্মমুখী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের কর্ম ঘণ্টা।
ইজিবাইক (টমটম) চালক নুরুল আমিন, আবু তাহের, রফিকুল ইসলামসহ ভুক্তভোগীরা বলেন, গত ৭-৮ দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে গর্তগুলো জলাশয়ের মতোই ঠেকেছে। এসব জলাশয় অতিক্রম করতে গিয়ে নষ্ট হয়েছে শতাধিক টমটমের মোটর। একেকটি মোটরের দাম ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। গর্তের পর গর্ত থাকায় ঢেউয়ের তালে চলতে গিয়ে টমটমের জয়েন্ট খুলে গেছে। নষ্ট হয়েছে অনেক যন্ত্রাংশ। ফলে দুই ট্রিপ চালিয়ে মেকানিকের দারস্ত হতে হয়েছে টমটম চালক বা মালিকদের। এতে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা করে নিতে হচ্ছে। এতে বচসা বাধছে যাত্রীদের সঙ্গে। পৌরসভায় নিয়মতি টোল দিয়েও সড়কগুলোর এ অবস্থা সত্যিই কষ্টের।
কক্সবাজার সিটি কলেজ সাহিত্যিকপল্লীর বাসিন্দা রক্ষিত মার্কেটের ব্যবসায়ী এখলাছুর রহমান বলেন, পর্যটন শহর কক্সবাজার প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। কিন্তু শহরের প্রধান সড়কসহ অর্ধশত উপসড়ক খানাখন্দকে ভরে গিয়ে তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভার চেয়েও খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। বাসা থেকে বেরিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসতে আলির জাঁহাল হয়ে পুরো সড়কের গর্তগুলো অতিক্রম করতে হয়। বাসা থেকে ১৫ মিনিটে বাচ্চাদের স্কুলে (কক্সবাজার কেজি) পৌঁছার কথা থাকলেও মোটরসাইকেল নিয়েও এখন সময় যাচ্ছে ঘণ্টার ওপর।
জানা গেছে, কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান সড়কটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ছিল। কিন্তু প্রশস্ত ও উন্নয়নের আওতায় আনতে বিগত কয়েক বছর ধরে চিঠি চালাচালির পর ২০১৮ সাল হতে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সড়কটি। কিন্তু কউকের দেয়া প্রশস্তকরণ প্রকল্প চূড়ান্ত না হওয়ায় সড়কে হাত দিতে পারেনি তারা। ফলে সওজ বিভাগও আর রক্ষণাবেক্ষণ করেনি সড়কটির। কয়েক বছর সড়কটি অভিভাবকহীন হয়ে থাকায় স্থায়ী সংস্কার হয়নি। তার ওপর যানবাহন চলাচল বেড়ে যাওয়ায় সড়কটি দিন দিন ক্ষয় হয়ে নাজুক অবস্থায় পড়েছে। এছাড়াও উপ-সড়কগুলো পৌর জনপ্রতিনিধিদের সিন্ডিকেটের করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে সংস্কার করায় অল্পদিনেই আবারও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে। চলতি বর্ষায় এ ভঙ্গুরতার মাত্রা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কালুরদোকান এলাকার বাসিন্দা আজিজ মওলা চৌধুরী বলেন, প্রধান সড়কের দুর্ভোগ এড়াতে উপ-সড়কে চলতে গিয়ে ভোগান্তি আরও বাড়ে। সড়কের ঝক্কি ঝামেলার কারণে বাচ্চাগুলো অনিহা প্রকাশ করে বিদ্যালয়ে যেতে। অবস্থা দেখলে মনে হয় পৌরসভাটি অভিভাবকহীন হয়ে চলছে।
কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও প্রধান ও উপ-সড়কগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রশস্ত। কিন্তু এখানে যানবাহন চলাচল ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি। ফলে সংস্কার করা হলেও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সড়ক টিকছে না। শহরের ভেতর খানাখন্দকে ভরে যাওয়া বেশকিছু উপ-সড়ক সংস্থারে ইতোমধ্যে প্রায় ৮৭ কোটি টাকার টেন্ডার সম্পন্ন করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত থামলেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্ক অর্ডার সরবরাহ করা হবে।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, পরিকল্পিত নগরায়নের লক্ষ্যে সড়কটি কউক নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। গত দুই মাসে সড়কটির বিভিন্ন অংশ বিচ্ছিন্নভাবে একাধিকবার সংস্কার করা হয়। যান চলাচলের বাড়তি চাপ ও টানা বৃষ্টিতে আবারও পুরো সড়ক জুড়ে মারাত্মক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান সড়ক প্রশস্তকরণে একনেকে অনুমোদন হওয়া প্রকল্পের কার্যাদেশ অতি শিগগিরই পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। কার্যাদেশ আসার আগেই যথা সম্ভব মেরামত করে সড়কটি যান চলাচলের উপযোগী করা হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এএইচ