তিনি বলেছেন, সংলাপের বিষয়টি কেবল দলের উচ্চ পর্যায়ের ভেতরে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয় নয়, বরং দলের সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগ এবং সারা দেশে জনগণের কল্যাণে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়টি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
তবে বাংলাদেশে নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে সংলাপের যে আয়োজন চলছে, তাকে ‘ইতিবাচক অগ্রগতি’ এবং ‘অসাধারণ অর্জন’ হিসেবে দেখছেন বার্নিকাট।
প্রায় চার বছর বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন শেষে মঙ্গলবার বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
সাংবাদিকরা বার্নিকাটের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যখন দুর্নীতি মামলায় কারাগারে, তখন সংলাপের এই উদোগকে তিনি কীভাবে দেখছেন।
জবাবে তিনি বলেন, “সংলাপের বিষয়টি কোনো একজন নেতা বা কোনো একটি দলের ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিৎ নয়।“বরাবরের মতই নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হওয়ার ওপর জোর দিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, “নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে হলে অবশ্যই একটি গ্রহণযোগ্য বিরোধী দল থাকতে হবে, যারা রাজনৈতিক দলের মত কর্মকাণ্ড চালাতে পারবে এবং দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তারের শিকার হবে না।”
তিনি বলেন, নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি, দল বা জোটের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আলাদা কোনো সমর্থন নেই।“আমরা কেবল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র যে আদর্শ নিয়ে চলে, তার প্রতিই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি।”
পূর্বসূরিদের কাছে শোনা ঘটনার কথা তুলে ধরে বার্নিকাট বলেন, ইতিহাসে কখনও কখনও এমন হয়েছে যে রাজনৈতিক নেতারা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে জড়ো হয়েছেন রাজনৈতিক রফা করার জন্য।“আমি মনে করি ওটা একটা বাতিল ধারণা। তাতে সাময়িকভাবে কাজ হতেও পারে, নাও পারে। তবে ইতিহাস সংশোধন করা আমার কাজ নয়।”
বার্নিকাট বলেন, “মোটা দাগে আমি মনে করি, আমরা সেই পর্যন্ত কোনো আলোচনার অংশ হতে পারি, যে পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটা উপকৃত হয়, কোনো নির্দিষ্ট দলকে শক্তি যোগানোর জন্য নয়।” যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসকে কোনো রাজনৈতিক দল কখনও তাদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে কি না- এই প্রশ্ন বার্নিকাটকে করেছিলেন একজন সাংবাদিক। উত্তরে তিনি বলেন, কখনও কখনও সে চেষ্টা হয়েছে।
“আমাদের একটি কাজ হল এখানে আমাদের সরকারের প্রতিনিধিত্ব করা। আরেকটি কাজ হল চলমান পরিস্থিতি বুঝে সেই বিষয়গুলো চিহ্নিত করা, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর সেজন্য সব দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গেই আমাদের কথা হয়।”
বার্নিকাট বলেন, “বাংলাদেশিরা কি তাদের ভোটাধিকার পেয়েছে? তারা কি তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা পেয়েছে? এই প্রশ্নগুলো আমি তুললে, কেউ এটাকে ‘হস্তক্ষেপ’ বলে ভাবতে পারেন। তবে আমি এটাকে সেই মূল্যবোধ বলে মনে করি, যেটা আমাদের দুই দেশেরই আছে। আমরা যদি ওই প্রশ্নগুলো তুলি তাহলে তা হবে সবার স্বার্থে।”
কিন্তু দূতাবাস যদি রাজনৈতিক রফায় মধ্যস্থতা করতে যায়, তাতে রাজনৈতিক অগ্রগতিকেই ‘পেছনে টেনে ধরা’ হয় বলে মন্তব্য করেন এই কূটনীতিক।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য’ থাকলেও বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ইতিবাচক একটি অংশীদারিত্ব রয়েছে। তবে মতপার্থক্যের সেই বিষয়গুলো কী, তা তিনি বলেননি।বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে বার্নিকাট আবারও বলেন, গণতন্ত্রের আগে উন্নয়ন চাওয়া হলে তা হবে একটি ভুল।
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএস