বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই। যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই। তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা, আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা’- গানটির কথাকে ধ্রুব সত্য মেনে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধাবনত মানুষের ঢল নেমেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ফিরে পেতে। কিন্তু তিনি তো আর ফিরবেন না। তাই চির কৃতজ্ঞ, চির ঋণী বাংলার মানুষ শ্রদ্ধাভরে তার প্রতি, তার ত্যাগ, সৃষ্টি ও নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।

আজ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু জাদুঘর প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল নেমেছে। এদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতির জনককে শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে যান আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ছুটে যান ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দলগুলোসহ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সরকারি-বেসরকারি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেতা-কর্মী, ছাত্র-শিক্ষকসহ শুভান্যুধায়ীরা।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে সকাল সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল এ সময় সশস্ত্র সালাম জানায়। বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। পরে কোরআন তিলাওয়াত করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এ সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। শ্রদ্ধা জানানো হয় বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে।

সকাল পৌনে ৭টার দিকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা হোসেন পুতুলসহ বঙ্গবন্ধুর স্বজনরা জাদুঘরের ভেতরে যান এবং সেখানে কিছুক্ষণ সময় অবস্থান করেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। অপেক্ষমাণ হাজার হাজার মানুষ নিজ নিজ সংগঠনের ব্যানার ও ফুলের ডালা হাতে নিয়ে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর চত্বরে প্রবেশ করে। ভ্যাপসা গরমের উত্তাপ উপেক্ষা করে প্রেরণাদায়ী স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধু চত্বর প্রাঙ্গণ।

ঘোষণা মঞ্চ থেকে ভেসে আসতে থাকে শ্রদ্ধা জানানো বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের নাম। পূর্বদিক দিয়ে প্রবেশ করে পশ্চিম দিক বের হয়ে যায় জনতা। হাজারো মানুষের ঢল সামলাতে হিমশিম খায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে ধানমন্ডি লেকে নৌপুলিশ দুটি ওয়াটার বাইকে মহড়া দেয়। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির পেছনের লেকের অপর পার্শ্বে ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণের একটি শ্রদ্ধাঞ্জলি বিলবোর্ড শোভা পাচ্ছে। বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে লেখা হয়েছে- ‘তোমার অভয় বাজে হৃদয়মাঝে হৃদয়হরণী, জাতীয় শোক দিবসে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি’।

১৯৭৫ সালের এই দিনে সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী কর্মকর্তা ও সৈনিকের হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে। ঘাতকের গুলি থেকে রেহাই পায়নি পরিবারের ছয় বছরের শিশু রাসেলসহ অন্তঃসত্ত্বা নারীও। সরকারি কর্মসূচির পাশাপাশি দিবসটি উপলক্ষে দুই দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করার পাশাপাশি তোলা হয়েছে শোকের কালো পতাকা।

বাংলা৭১নিউজ/সিএইস