বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: মনে হতে পারে, শীতকালীন বাইরের তাপমাত্রা হার্টকে প্রভাবিত করে না। কিন্তু সত্য হচ্ছে গবেষকরা ঠান্ডা আবহাওয়া ও হার্ট ফেইলিউরের মধ্যে যোগসূত্র আবিষ্কার করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ছয় লাখ হার্ট ফেইলিউর রোগীকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল- দেখা গেল যে শীতকালে রোগীদের হার্টের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গিয়েছিল, এমনকি মৃত্যুর হারও বৃদ্ধি পেয়েছিল।
শীতকালে হার্টের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বেশি পড়ার অনেক কারণ রয়েছে। যেমন- উচ্চ হারে ইনফেকশন ও শরীরে ঠান্ডার চাপ। হার্ট ফেইলিউর ও হার্ট অ্যাটাক এক নয়। হার্ট ফেইলিউর ধীরে ধীরে ডেভেলপ হয়, যেখানে হার্টের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যায় ও শরীরের কোষে রক্ত পাম্প করতে সমস্যা হয়। অন্যদিকে হার্ট অ্যাটাক হঠাৎ করে হয়ে থাকে, যখন ধমনীতে প্রতিবন্ধকতায় রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। হার্ট অ্যাটাক হার্টকে দুর্বল করে ও হার্ট ফেইলিউরের দিকে নিয়ে যায়। শীতকালে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার ৮ কারণ নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।
রক্তনালীর সংকোচন: শীতে যখন আপনার শরীর উষ্ণ রাখতে চেষ্টা করে তখন মস্তিষ্ক ও ফুসফুসের মতো গুরুত্বপূর্ণ অর্গান এক্সট্রিম টেম্পারেচার থেকে রক্ষা করতে সবচেয়ে বেশি ফোকাস করে। এর একটি প্রতিক্রিয়া হচ্ছে রক্তনালী সংকুচিত হয়ে যাওয়া। ফলে আপনার পুরো শরীরে রক্ত পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে। ইউনিভার্সিটি অব আরিজোনার কার্ডিওলজিস্ট মার্থা গুলাটি বলেন, ‘শীতকালে আপনার শরীর গুরুত্বপূর্ণ অর্গানসমূহে সুষ্ঠু রক্তপ্রবাহ বজায় রাখতে জোর প্রচেষ্টা চালায়।’ এর মানে হচ্ছে শরীরে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করতে আপনার হার্টকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। ফলে হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়। উদাহরণস্বরূপ, বসন্তকালে সিঁড়ি দিয়ে উঠলে সমস্যা অনুভব না করলেও শীতকালে একই দূরত্ব অতিক্রমে বুক ধড়ফড় করতে পারে। এসময় হার্ট রেট ও ব্লাড প্রেসার বৃদ্ধি পায় বলে রক্ত জমাটবদ্ধতা, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। শীতের পোশাকে সজ্জিত হয়ে নিজেকে রক্ষা করুন, বিশেষ করে হাত-পা-মাথা শীতকালীন কাপড়ে আবৃত করতে ভুলবেন না। কারণ এসব অংশ দিয়ে প্রচুর তাপ বেরিয়ে যায়। শীতের কাপড়ে শরীর জড়ালে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হার্টকে কঠিন পরিশ্রম করতে হয় না, বলেন ডা. গুলাটি।
ভারী কিছু উত্তোলনে হার্টের ওপর বাড়তি চাপ: যেকোনো মৌসুমে যেকোনো কাজে বুক ধড়ফড় করতে পারে বা হৃদস্পন্দন দ্রুত হতে পারে, কিন্তু শীতে হার্টে সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়। বিশেষ করে ভারী কিছু উত্তোলন করলে। ওয়েস্টচেস্টার মেডিক্যাল সেন্টারের মেডিসিন বিভাগের পরিচালক উইলিয়াম ফ্রিশমান বলেন, ‘এমনিতেই ঠান্ডা আবহাওয়ায় আপনার হার্ট ওভারটাইম কাজ করে, তাই এসময় ভারী কিছু উত্তোলন করলে হার্টে যে অতিরিক্ত চাপ পড়ে তার কারণে পাম্প করা আরো শ্রমসাধ্য হয়ে পড়ে। এসময় হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ প্রকাশ পেলে অথবা বুকে ব্যথা অনুভব করলে যে কেউ অবহেলা করতে পারেন। কারণ তিনি মনে করেন, ভারী জিনিস উত্তোলনের কারণে এ অনুভূতি হচ্ছে।’ তাই শীতকালে ভারী জিনিস উত্তোলনের সময় বুকে ব্যথা অনুভব করলে, শ্বাসক্রিয়ায় কষ্ট হলে অথবা ঘেমে গেলে কাজ থামিয়ে দিন। এসব উপসর্গ লেগে থাকলে জরুরি নম্বরে কল করুন।
অস্বাস্থ্যকর খাবার: শীতকালে ছুটির দিনে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়, যা আপনার হার্টকে ঝুঁকিতে রাখতে পারে, বলেন ডা. গুলাটি। এসময় হলিডে পার্টিতে মিষ্টি খাবার খাওয়া কমন বিষয়। এসব খাবারে প্রচুর চিনি, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও লবণ থাকে- গবেষণায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও লবণের সঙ্গে কার্ডিওভাস্কুলার ঝুঁকির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। ডা. গুলাটি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে লবণ। কারণ এটি শরীরে পানি জমাতে থাকে। আপনার হার্টে সমস্যা থাকলে এসব পানি পাম্পিং প্রসেসকে কঠিন করে তোলে।’ একারণে ডা. গুলাটি পার্টিতে যাওয়ার পূর্বে ক্ষুধা কমাতে প্রচুর পানি পান করতে ও যথাসম্ভব মিষ্টি খাবার এড়িয়ে যেতে পরামর্শ দিচ্ছেন।
অতিরিক্ত খাবার: শীতকালে কেবলমাত্র খাবারের মানই আপনার হার্টকে ঝুঁকিতে রাখে না, খাবারের পরিমাণও ম্যাটার। সাধারণত লোকজন শীতকালে অন্য মৌসুমের তুলনায় বেশি খাবার খায়। যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, জানান ডা. ফ্রিশমান। যেকোনো সময় আপনি বেশি পরিমাণে খাবার খেলে হজমের জন্য আপনার পরিপাকতন্ত্রে অধিক রক্তপ্রবাহের প্রয়োজন হবে। ভারী খাবার খেয়ে বাইরের ঠান্ডা পরিবেশে গেলে আপনার শরীরের পক্ষে এ চাহিদা পূরণ করা কঠিন। তীব্র ঠান্ডায় রক্তনালীর সংকোচন, হার্টের পাম্পিং প্রসেসে কাঠিন্য ও পাকস্থলিতে প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহে ব্যর্থতা- সবকিছু একত্রে হার্ট অ্যাটাক ঘটাতে যথেষ্ট হতে পারে, বলেন ডা. গুলাটি। শরীর উষ্ণ রাখা ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ছাড়াও ডা. গুলাটি নিয়মিত এক্সারসাইজ করতে পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন: হয়তো খাবার খাওয়ার আগে এক্সারসাইজ করবেন নয়তো খাবার হজম হওয়ার পর। ফলে শারীরিক সক্রিয়তায় হার্টের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে না।
বাংলা৭১নিউজ/সি এইস