বাংলা৭১নিউজ, মো. কামাল হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার সময় কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির ফলে ওই এলাকার কয়েকটি বিলে ইরি, বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টির কারণে ওই এলাকার আম ফলেও ক্ষতি হয়েছে বিস্তর। তাছাড়া বড় বড় শিলা বর্ষণের ফলে ওই এলাকার বাড়িগুলোর টিনসেড ছিদ্র হয়ে গেছে। এতে প্রায় এক হাজার ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দাইপুখুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম জুয়েল।
তিনি জানান, সকাল থেকে ব্যাপকভাবে আধা কেজি থেকে এক কেজি ওজনের শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যাওয়ায় দৌলতবাড়ি-কামালপুর-বিলভাতিয়া বিল, কালহোন বিল, হাতিলাগা বিল, কন্দল ভাটি বিল, ক্ষিরির বিলসহ পার্শ্ববর্তী মাঠের প্রায় ৩০ হাজার বিঘা ইরি, বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া আশপাশের আম গাছ থেকে ব্যাপক আম ঝড়ে পড়েছে। এদিকে ঝড়ের ফলে কামালপুর বিজিবি ক্যাম্পের প্রধান ফটকের সামনে শতবর্ষী ছায়তন গাছ উপড়ে গেলে ওই এলাকার কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে।
এতে সকাল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওই এলাকার কৃষকেরা শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত মাঠের ধান দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে। কৃষকেরা কান্না জড়িত কণ্ঠে এ প্রতিবেদককে জানান, কামালপুর-দৌলতবাড়ি-ভাতিয়াবিলে প্রায় ১৬ হাজার বিঘা জমিতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক এবং এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ধানের আবাদ করেছিল। কিন্তু শিলাবৃষ্টির কারণে ওই মাঠের ৯৫ শতাংশ ইরি, বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তারা আরও জানান, যে সকল সংস্থা থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে, তা কিভাবে পরিশোধ করবে এনিয়ে তারা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েছেন।
শুধু ইরি, বোরো ধান ক্ষতি হয়নি, বাড়ির আশপাশের বাগানের ৮০ শতাংশ আম ঝড়ে পড়েছে। কৃষকেরা জানিয়েছেন- ঝড়ে পড়া আম ১ টাকা কেজি দরে কেউ কিনতে চাইনা। ফলে ঝড়ে পড়া আমগুলো আমগাছের নিচে পড়ে রয়েছে। অপরদিকে দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে কামালপুর গ্রামের কৃষক এনারুল ইসলাম, তাজেমুল হক, শাহিন আলী, জেন্টু আলী, আফসার আলী ও দৌলতবাড়ির আশিকুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম রবু, এরফান আলী সঙ্গে কথা হলে তারা কান্না জড়িত কণ্ঠে জানায়, তাদের আবাদকৃত জমির ধান সম্পন্ন নষ্ট হয়ে যাওয়া বিপাকে পড়েছেন।
অনেক কৃষককে ঝড়ে পড়া ধানগাছ গুলো মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। তারা জানায়, মানুষের মুখের আহার শিলার ফলে নষ্ট হয়েছে। কিন্তু এখন ওই সমস্ত ধান গাছগুলো কেটে গবাদি পশুকে খাওয়ানো হচ্ছে। শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দাইপুখুরিয়ার বাসিন্দা সায়েমা খাতুন জানান, সোমবার সকালে বড় আকারের শিলাবৃষ্টি হওয়ার কারণে সহ¯্রাধিক ঘর-বাড়ি, পার্শ্ববর্তী মির্জাপুর হাসিউন সুন্না নূরানী হাফিজিয়া ও কওমি মাদ্রাসার টিনের চালা উড়ে গেছে। একই সঙ্গে ব্যাপক আম ও মাঠের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এতে কৃষক ও আম ব্যবসায়ী দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম আমিনুজ্জামান জানিয়েছেন- সোমবার সকালের শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে উপজেলার উত্তরাঞ্চলের দাইপুখুরিয়া ও শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠের ইরি, বোরো ফসল ও আমের ক্ষতি হয়েছে। কি পরিমাণ ধানের ক্ষতি হয়ে তা তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বলতে পারেননি। তবে তিনি জানান, ওই এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দ্রুত ক্ষয়ক্ষতির হিসাব উপজেলা কৃষি দপ্তরের প্রেরণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবর ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাকে মুঠোফোনে জানিয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ পেলে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস