বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা তাদের পাঠ্যক্রমে থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, মাটিতে হাত দিয়ে চারা রোপণ করলে বা কাজ করলে লজ্জার কিছু নেই।
তিনি বলেন, বরং নিজের হাতে বাগান করলে সেই বাগানে যখন একটি ফল হয়, সেটি ছিঁড়ে খেতে আরও বেশি গর্ববোধ হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েদের আমরা লেখাপড়া শেখাচ্ছি। এখন লেখাপড়া শেখার পর অনেকে আর জমিতে কাজ করতে যেতে চাইছে না। আমি বলব- আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে কৃষিকাজে অন্তত আন্তরিক হয়, সে জন্য তাদের শিক্ষাব্যবস্থায় কৃষির ব্যবহারিক শিক্ষাটা যেন থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য আমি বিশেষভাবে আহ্বান জানাচ্ছি।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার ১৪২৩ বিতরণকালে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
কৃষি আমাদের জীবন এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৃষি থেকে ধীরে ধীরে আমরা শিল্পে উন্নীত হব কিন্তু কৃষিকে বাদ দিয়ে নয়। কারণ কৃষিই তো আমার কাঁচামালের জোগান দেবে। আর আমাদের খাদ্যের জোগান দেবে।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ৩২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাঝে বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার ১৪২৩ প্রদান করেন। এর মধ্যে ৫টি স্বর্ণ, ৯টি রোপ্য এবং ১৮টি ব্রোঞ্চপদক প্রদান করা হয়। স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্চপদকপ্রাপ্তদের মধ্যে পদকের সঙ্গে নগদ এক লাখ, ৫০ হাজার এবং ২৫ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়। পুরস্কারের ক্যাটাগরিতে ক্রপ অ্যাগ্রিকালচার, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও বনায়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
দেশে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি মাছ রফতানি করে জাতীয় অর্থনীতিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মৎস্য অধিদফতর স্বর্ণ পদকে ভূষিত করা হয়।
ব্যক্তিপর্যায়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খামার স্থাপন করে অনুকরণীয় নজীর স্থাপনের মাধ্যমে কৃষিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আলহাজ মো. মকবুল হোসেন এমপি স্বর্ণপদক লাভ করেন।
প্রতিকূল পরিবেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কৃষি খামার স্থাপনের জন্য নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ কৃষি ও কৃষিসহায়ক গবেষণার মাধ্যমে ফসলের মানোন্নয়ন ও নতুন জাত উদ্ভাবনে কাঙ্ক্ষিত জিন প্রতিস্থাপন পদ্ধতি উদ্ভাবনের স্বীকৃতিস্বরূপ কৃষি গবেষণা ক্যাটাগরিতে প্রফেসর রাখহরি সরকার এবং প্রচলিত কৃষিপণ্যের পাশাপাশি অপ্রচলিত কৃষি পণ্য উৎপাদনের স্বীকৃতিস্বরূপ মো. আমিনুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন।
কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়ন সচিব মইনুদ্দিন আব্দুল্লাহ স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং পদক বিতরণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। পদক বিজয়ের অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন যশোরের ফারহানা ইয়াসমিন।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে এখন অনেকেই ছাদের ওপর বাগান করছেন উল্লেখ করে বলেন, গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত সবাইকে এ কাজে উৎসাহিত করা উচিত। প্রত্যেকে অন্তত নিজের ঘরেও যদি বাগান করে বা নিজের যেসব জমি আছে, সেখানে বাগান করেন অথবা অব্যবহৃত যেসব জমি পড়ে আছে কো-অপারেটিভের মাধ্যমে সেসব যদি চাষ করা যায়, তা হলে আমাদের খাদ্যের অভাব তো হবেই না উপরন্তু আমরা বিশ্বের অনেক দেশের মানুষকে খাদ্য সাহায্য দিতে পারব, সেই সক্ষমতা আমরা অর্জন করব।
তিনি বলেন, এ জন্য আমরা চাচ্ছি- আমাদের ছেলেমেয়েরা ছোটবেলা থেকেই যেন এ কাজটি শিখে নেয়। তাদের জানা উচিত, শেখা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আধুনিক পদ্ধতিতে চাষবাস শুরু করেছি। কৃষিকে আমরা যান্ত্রিকীকরণ করছি। এখন হাত দিয়ে চারা রোপণ করা লাগবে না আমরা মেশিন দিয়ে চারা রোপণ করতে পারব। জমি চাষ করতে পারব, ফসল কাটতে পারব, ফসলকে আলাদা করতে পারব- সবই করা যাবে মেশিন দিয়ে। বিশ্বে গবেষণার মাধ্যমে এগুলো আস্তে আস্তে উঠে আসছে, আমরা সেগুলো ব্যবহার করতে পারি।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস