সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীকে গুলি করার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে। এছাড়া ছাত্রকে গুলি করা উদ্ধার হওয়া পিস্তলটি অবৈধ বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সকালে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত বলেন, সোমবার রাতে ডা. রায়হান শরিফকে আটক করে মেডিক্যাল কলেজ থেকে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা হবে বলে তিনি জানান।
এর আগে, সোমবার (৪ মার্চ) রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভুক্তভোগীর বাবা মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা করেন।
মামলায় বাদী মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন উল্লেখ করেন, ‘আমার ছেলে আরাফাত আমিন তমাল (২২) শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ, সিরাজগঞ্জে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়ে বর্তমানে তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করত। কলেজের একাডেমিক ভবনের চার তলায় ডা. সামাউন নূরের কক্ষে পরীক্ষা হচ্ছিল তার।
এ সময় আমার ছেলের বন্ধু আক্তারুজ্জামান বিকেল ৪টার দিকে ফোন করে হাসপাতালে তমাল ভর্তি আছে জানিয়ে আমাকে দ্রুত সিরাজগঞ্জ যেতে বলে। আমি সিরাজগঞ্জ এসে ছেলেকে সিরাজগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় দেখি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমার ছেলের সহপাঠিরা জানায়, আসামি কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের লেকচারার সবসময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। সবসময় ব্যাগে অস্ত্র নিয়ে এসে ক্লাসে তা টেবিলের ওপর রেখে লেকচার দিতেন তিনি।
ছাত্র-ছাত্রীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ক্লাসে না আসতে বললে তিনি তাদের ভয়ভীতি ও গুলি করে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। আজ পরীক্ষা চলাকালে বিকেল ৩টার দিকে আসামি হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে শিক্ষার্থীদের বকাবকি করেন। এক পর্যায়ে তাঁর ব্যাগ থেকে একটি পিস্তল বের করে আমার ছেলেকে হত্যার করার উদ্দেশ্যে গুলি করলে গুলিটি ডান পায়ের উরুর ওপরের অংশে লাগে ও গুরুতর জখম হয়।’
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, সহপাঠিরা তমালকে চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে চাইলে আসামি অস্ত্র উঁচু করে সবাইকে ভয় দেখান ও গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেন। তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষা চলাকালে তমালের বন্ধুরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিলে সিরাজগঞ্জ থানা পুলিশ, ডিবি ঘটনাস্থলে গিয়ে আসামিকে অস্ত্রশস্ত্রসহ থানায় নিয়ে যায়।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আসামিকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রটি অবৈধ। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এই মামলা ছাড়াও অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা হবে।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কমিটিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে বিস্তারিত তদন্তপূর্বক দাখিল করবে।
উল্লেখ্য, সোমবার (৪ মার্চ) বিকেলে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে গুলি করেন কলেজের শিক্ষক ডা. রায়হান শরিফ।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর সন্ধ্যায় তাকে আটক করে থানায় নেয় পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। অভিযুক্ত ডা. রায়হান শরিফ কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ