বাংলা৭১নিউজ, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা নদীর চরাঞ্চলে এ বছর খরা সহিষ্ণ চিনা ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে যমুনা নদীর হতদরিদ্র কৃষকদের মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছে। এ প্রজন্মের অনেকেই চিনা ধান না চিনলেও এক সময় এ এলাকায় এর ব্যাপক আবাদ ছিল। দীর্ঘ দিন ধরে এ এলাকায় এর কোন আবাদ না হওয়ায় এটি এখন মানুষের মাঝে প্রায় অচেনা ধানে পরিণত হয়েছে। অথচ এই চিনা ধানটি হয়ে উঠতে পারে এ এলাকার অর্থনৈতিক আরেকটি ফসল। এ এলাকায় এ ধান চাষের খুবই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এক সময় খরা মৌসুমে অন্য ফসল যখন রোদে পুড়ে যেত তখন এ চিনা ধান আবাদ করে মানুষ দু‘বেলা খেয়ে বেচে থাকত।
অথচ অল্প পরিশ্রম করেই এ ফসল ফলানো সম্ভব। এ ধান যে কোন ধরণের মাটিতে চাষ করা যায়। বেলে মাটিতেও এর ভালো আবাদ হয়। তাই যমুনা নদীর ধূ ধূ বালুর চরে এ ধানের চাষের খুবই উজ্জল সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। তাই শাহজাদপুরের যমুনা নদীর বালু চরে অনেকেই এ ধান আবাদে ঝুঁকে পড়েছে। ফলন ভাল হওয়ায় বিলুপ্ত প্রায় এ ধান চাষে এ এলাকার কৃষকদের মধ্যে নতুন করে আগ্রহ দেখা দিয়েছে। তাই সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ইরি-বোরো ধান চাষের পাশাপাশি অনেকেই এ ধান চাষে ঝুঁকছে। ফলে ৩ যুগ পর এ অঞ্চলে আবারো নতুন করে এ ধানের চাষ শুরু হয়েছে। বেলে দো-আঁশ মাটির জমি ও পানি জমে না এমন জমিই চিনা চাষের জন্য সবচেয়ে বেশী উপযোগী।
তাই উপজেলার যমুনা নদীর চর ছাড়াও হুরাসাগর,বড়াল,করতোয়া,গোহালা, ধলেশ্বর ও সোনাই নদীর বারু চরেএ ধানের চাষ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া শাহজাদপুরের পাথার অঞ্চলেও এ ধানের চাষ করা হচ্ছে। এ ছাড়া যে সব জমিতে ইরি-বোরো ধান বা অন্য কোন ফসল চাষ করা সমম্ভব নয় সে সব জমিতে এখন চিনা ধান চাষ করা হচ্ছে। শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের চরগুদিবাড়ি গ্রামের চিনা চাষি মোঃ হাফিজুর রহমান ও পোতাজিয়া ইউনিয়নের ধলাই নদী তীরবর্তী রাউতারা গ্রামের মোঃ জমারত বিশ্বাস জানান, চরের শত শত বিঘা জমিতে বালুর পরত জমায় ইরি-বোরোর আবাদ ভাল না হওয়ায় পতিত থাকা ওই সব জমিতে আমরা এখন চিনা ধান চাষ করছি।
চিনার বীজ ছিটিয়ে দুবার সেচ ও একবার ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিলেই এর ভালো ফলন পাওয়া যায়। এছাড়া চিনা চাষের জমিতে তেমন কোনো কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। অল্প খরচেই এর চাষ করা যায় বলে আমরা নতুন করে এ ধানের চাষ শুরু করেছি। উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়,এ বছর ভাল বৃষ্টিপাত না হলেও চিনা ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই এ ধান চাষিদের মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছে। তাই উপজেলার নদী তীরবর্তী বালুচরের যে দিকেই তাকানো যায় সে দিকেই এখন পাকা চিনা ধানের সমারোহ দেখা যায়। সোনালী পাকা চিনা ধান দেখলে মন জুড়িয়ে যাচ্ছে। পাওরুটি ও বিস্কুট বেকারি ও পোলট্রি খামারের খাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানে চিনার চালের ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষকরা এর ভালো বাজার মূল্যও পাচ্ছেন বলে তারা জানিয়েছেন।
ফলে প্রতি বছর এ এলাকায় এ ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই চিনা ধান কাটা ও মাড়াই শুরু করেছে কৃষকেরা। এ বছর বিঘা প্রতি ১৬-১৭ মণ চিনা আবাদ হয়েছে। প্রতি মণ চিনা ১ হাজার থেকে ১২ শত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষকের আরও জানান, সরকারি ভাবে উদ্যোগ নিয়ে এ অঞ্চলের নদ-নদী অববাহিকায় পতিত জমিতে চিনা চাষ করা হলে এ এলাকার কোনো মানুষের আর অভাব থাকবে না। তাই তারা এ ব্যাপারে সরকারকে এগিয়ে আসতে বলেছেন।
এ ব্যপারে শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি অফিসার সৈয়দ মনজু আলম সরকার বলেন, এ অঞ্চলে কৃষদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে চিনা চাষ করায় আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই। আগামীতে কি ভাবে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস