বাংলা৭১নিউজ, শামছুর রহমান শিশির, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : আগামী পরশু মঙ্গলবার থেকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ২ দিনব্যাপী ‘উণবিংশ শতাব্দির বাংলার সাহিত্য গগণে ও বিশ্বের জ্ঞান পরিমন্ডলে ভারস্যাটাইর জিনিয়াস খ্যাত, নোবেল জয়ী’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৭ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে কবিগুরুর শাহজাদপুরের কাছারিবাড়িসহ শাহজাদপুরে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে।
২৫ বৈশাখ মঙ্গলবার বিশ্বকবির ১৫৭ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে কবিগুরুর শাহজাদপুরের কাছারিবাড়ি ধোয়া মোছা, সাজ-সজ্জা ও রং, চুনকামের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
জানা গগেছে, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আগামী ২৫ ও ২৬ বৈশাখ (৮ ও ৯ মে) দুইদিন ব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে কবিগুরুর ১৫৭তম জন্মবার্ষিকী পালনে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত স্থান ও পর্যটন কেন্দ্র শাহজাদপুরের কাছারিবাড়ি । বিশ্বকবির নানা স্মৃতি জড়িয়ে আছে কাছারিবাড়িতে। প্রতিদিন দেশ-বিদেশ থেকে কবিগুরুর শাহজাদপুরের কাছারিবাড়িতে এসে থাকের অসংখ্য পর্যটক ও দর্শনার্থী।
কলকাতার বিখ্যাত জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারের গর্বিত সন্তান কবিগুরু ৩০ বছর বয়সে বিলেতে লেখাপড়া করে (১৮৯০-৯৬) সালে জমিদারীর তদারকির জন্য ছায়াছন্ন খালবিলে ভরা পূর্ব বাংলার অনেকাংশ শিক্ষা সভ্যতা বিবর্জিত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আসতেন। তিনি কুষ্টিয়ার শিলাইদহ হয়ে নৌকাযোগে শাহজাদপুর ও নওগাঁর পতিসরে আসতেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর নাটোরের রাণী ভবানীর নিকট থেকে তের টাকা দশ আনায় শাহজাদপুরের জমিদারী ক্রয় করার পর থেকে শাহজাদপুরের কাছারিবাড়িটি ঠাকুর পরিবারের হস্তগত হয়।
জমিদারী দেখাশুনার জন্যই ১৮৯০-৯৬ সাল পর্যন্ত শাহজাদপুরে নিয়মিত আসা যাওয়ার পাশপাশি সাময়িকভাবে বসবাস করতেন কবিগুরু । এর আগে কাছারিবাড়িতে নীলকর সাহেবরা থাকতেন। তারা ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্য শৈলীতে লাল বর্ণের দুটি দ্বিতল ভবন তৈরী করেছিলেন ।
নীলকরদের অত্যাচার নির্যাতনের স্থান কাছারিবাড়ির পশ্চিমের পরিত্যাক্ত ভবন কালের সস্বাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। কাছারিবাড়ির পূর্বপাশের দ্বিতল ভবনে কবিগুরুর ব্যবহার্য আসবাবপত্র, তৈজসপত্র, কবিগুরুর স্বহস্তে আঁকা ছবির সমাহারে এবং বিভিন্ন বস্তুসামগ্রীর সমন্বয়ে রবীন্দ্র স্মৃতি যাদুঘরে রূপ দেয়া হয়েছে ।
কবিগুরুর নানা অম্লান স্মৃতি আজও সংরক্ষিত রয়েছে ওই জাদুঘরে। কবিগুরুর ব্যবহৃত খাট, পালকি, খরম, জুতা, চশমা, তোষক, চেয়ার , পানির ট্যাপ, টেবিল , আলনা, ড্রেসিং টেবিল, থালা, বাসন, বদনাসহ অনেক স্মৃতি রয়েছে কাছারিবাড়িতে।
১৯৬৯ সালে জরাজীর্ণ অবস্থায় কাছারিবাড়িকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় এনে সংরক্ষনের উদ্যোগ নেয় হয়। ১৯৯৯ সালে কাছারিবাড়ির পশ্চিম আঙ্গিনায় ৫’শ আসনবিশিষ্ট রবীন্দ্র স্মৃতি মিলনায়তন নির্মাণ করা হয় । প্রতি বছর ২৫, ২৬ ও ২৭ বৈশাখে ৩ দিনের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হলেও এবার ১ দিন কমানো হয়েছে।
শাহজাদপুরের নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাজমুল হুসাইন খাঁন জানিয়েছেন, কবিগুরুর ১৫৭ তম জন্মজয়ন্তী পালন উপলক্ষে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন ২ দিনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। তবে কি কারণে এবার ২ দিনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে তার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তিনি ।
প্রতি বছর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ২৫, ২৬ ও ২৭ বৈশাখে ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার পাশাপাশি ৫ দিনের গ্রামীণ মেলা বসে আসছে। এবারও স্থানীয় পাইলট মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গণে গ্রামীণ মেলা বসছে।
শাহজাদপুরসহ বৃহত্তর পাবনা অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে সরকার শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ স্থাপণ করেছে ইতিমধ্যেই গত ১৭ এপ্রিলে শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের নবনির্মিত একটি ভবনে অস্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক অগ্রযাত্রা ও শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষে পুরো শাহজাদপুরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস