বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: আজ পহেলা ভাদ্র। শরতের প্রথম দিন। বাংলা ঋতুর হিসাব অনুযায়ী ভাদ্র-আশ্বিন এই দুই মাস শরৎকাল। ঋতুচক্রের বর্ষ পরিক্রমায় শরতের আগমন ঘটে বর্ষার পরেই। বর্ষার বিষন্নতা পরিহার করে শরৎ আসে।
বাতাসে হিম হিম ছোঁয়ায় টের পাওয়া যাচ্ছে, শরৎ এসেছে। চঞ্চল হৃদয় নেচে উঠছে শরতের স্পর্শে। তারপরই হৈমন্তি বিষণ্নতায় ভর করে আসবে শীত। শরৎ বাংলার বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির পালাবদলের গান নিয়ে এসেছে আমাদের কাছে।
কবি বলেছেন: ‘শরৎ, তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি/ছড়িয়ে গেল ছাড়িয়ে মোহন অঙ্গুলি/শরৎ, তোমার শিশির-ধোয়া কুন্তলে/বনের পথে লুটিয়ে পড়া অঞ্চলে/আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি। ‘
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার অসংখ্য গান ও কবিতায় শরতে বাংলার প্রকৃতির নিখুঁত আল্পনা এঁকেছেন।
তার ‘শিউলি ফুলের মালা দোলে শারদ রাতের বুকে ঐ’, ‘এসো শারদ প্রাতের পথিক’-সহ অনেক গানই শরৎ-প্রকৃতির লাবণ্যময় রূপ নিয়ে হাজির রয়েছে। শরতের অসম্ভব চিত্ররূপময়তা ফুটে উঠেছে এ সব রচনায়: “এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি বিছানো পথে/এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ-কিরণ রথে। /দলি শাপলা শালুক শত দল এসো রাঙায়ে তোমার পদতল/নীল লাল ঝরায়ে ঢলঢল এসো অরণ্য পর্বতেi”আদি মহাকবি কালিদাস ‘মেঘদূত’ কাব্যের জন্য বিখ্যাত এবং তিনিও শরৎ বন্দনায় বলেছেন: “প্রিয়তম আমার, ঐ চেয়ে দেখ, নব বধূর ন্যায় সুসজ্জিত শরৎ কাল সমাগত। ’ কবি ‘ঋতুসংহার’ কাব্যে শরৎ কাল বিষয়ে লিখেছেন: ‘আকাশ ফুলের মতো যার পরিধান, প্রফুল্ল পদ্মের মতো যার মুখ, উন্মত্ত হাঁসের ডাকের মতো রমণীয় যার নূপুরের শব্দ, পাকা শালি ধানের মতো সুন্দর যার ক্ষীণ দেহলতা, অপরূপ যার আকৃতি সেই নব বধূরাতো শরৎকাল আসে। ’ কবি কল্পনায় শরতের সাথে প্রকৃতি ও নারীর এই উপমা দেখে বিস্ময়াভিভূত না হয়ে উপায় নেই। প্রকৃতি এ সময় নববধূর সাজে সজ্জিত হয়ে উঠে। শরতের মেঘহীন নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা কেড়ে নেয় প্রকৃতি প্রেমিকদের মন।
বিলে শাপলা, গাছে গাছে শিউলির মন মাতানো সুবাস অনুভূত হয় শরতের ছোঁয়া। শরতের রূপ যেনো শান্ত-স্নিগ্ধ-কোমল। যেখানে মলিনতা নেই, আছে নির্মল আনন্দ আর অনাবিল উচ্ছ্বাস।
কবি জীবনানন্দের ভাষায়, ‘যৌবন বিকশিত হয় শরতের আকাশে’।
শরতে শেফালি, মালতী, কামিনী, জুঁই, টগর আর সাদা সাদা কাশ ফুল মাথা উঁচিয়ে জানান দেয় সৌন্দর্য। মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে দেয় চার পাশে। গ্রামীণ প্রকৃতিতে শরৎ আসে সাড়ম্বরে। যদিও ইট-কাঠের নগরীতে শরৎ থেকে যায় অনেকটা অন্তরালে। আবার, এই শরতেই হয়ে থাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
গ্রামবাংলার দিঘিতে ফোটে পদ্ম ফুল, দিঘির পাশেই শেফালি গাছ। প্রভাতে গাছ থেকে ঝরে পড়ে শত শত শেফালি। এর সুগন্ধ মনে লাগায় ভালোবাসার রং। কেউ বা গাঁথে শেফালি ফুলের মালা। আবার কাশফুল যেন শরতেরই স্মারক।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ