বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০৬:১৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
যশোরে মরুর উত্তাপ, দেশের সর্বোচ্চ ৪৩.৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড ‘প্রবাসীদের সমস্যা আমার জানা, সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ দুদকের প্রথম নারী মহাপরিচালক শিরীন পারভীন ইসলামী ব্যাংকের কুমিল্লা জোনের কর্মকর্তা সম্মেলন অনুষ্ঠিত ২০ মে থেকে ৬৫ দিন সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কর্মসূচিতে ৩৯ হাজার বই দিলো বিকাশ ফিলিস্তিনিদের ধাওয়া খেয়ে পালালেন জার্মান রাষ্ট্রদূত বৃক্ষরোপণে ন্যাশনাল গাইডলাইন্স প্রণয়নের নির্দেশ পরিবেশমন্ত্রীর বৃষ্টিতে সিলেটে বন্ধ বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ গুচ্ছের ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিটের ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৫০৭৬০ সাংবাদিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠাই হোক মে দিবসের অঙ্গীকার দাবদাহে দ্বিগুণ সেচ খরচে দিশেহারা চাষিরা রেলওয়ের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চায় রাশিয়া ১৫ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে ৩৬ বছরে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৪৩.৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড মুন্সিগঞ্জে হিট স্ট্রোকে দুজনের মৃত্যু বন্যা আতঙ্কে দ্রুত ধান কাটছেন হাওরের কৃষকরা ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকায় সড়ক নির্মাণ ভরিতে আরও ৪২০ টাকা কমলো সোনার দাম পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ

শত বছরের ব্রাহ্মণডাঙ্গা মেলায় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড়

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৯
  • ১৫২ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ,(নড়াইল)প্রতিনিধি:নতুন বছরকে বরণ করতে উৎসবপাগল বাঙালির আয়োজনের শেষ নাই। এমনি একটি আয়োজন বসেছিল লোহাগড়া উপজেলার ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামে। প্রায় ২ শ বছরের পুরাতন এই মেলার শেষ দিনে ১৬ এপ্রিল বিকালে হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। একদিকে গ্রাম্যমেলা আর অন্যদিকে ঘোড়দৌড় দেখতে ব্রাহ্মণডাঙ্গায় জড়ো হয়েছিল হাজারো মানুষ।

নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায় বসেছে বৈশাখী মেলা। এতসব মেলার ভিড়ে লোহাগড়ার ব্রাহ্মণডাঙ্গায় ২০০ বছরের প্রাচীন বৈশাখী মেলার আয়োজন ছিল অন্যরকম। সম্পূর্ণ গ্রামীণ মেলার আবহ নিয়ে ব্রাহ্মণডাঙ্গা হাটখোলা মাঠে বসা এই মেলা হাজারো মানুষের মিলন আর বিনোদনের কেন্দ্রে পরিণত করে।

কয়েক শ চাঁদোয়া টাঙানো স্টলে বসেছে নানা ধরনের পণ্য। মাটির তৈরি রঙিন হাঁড়ি-পাতিল বসেছে একপ্রান্তে, এর পাশেই রয়েছে বাঁশের তৈরি রঙিন কুলো, ডালা আর গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত জালি, চালন কিম্বা ঝুড়ি। রয়েছে শিশুদের জন্য মাটিতে চালানো বৈশাখী একচাকার গাড়ি। শিশু-বুড়ো আর নারীরা যে যার মতো পছন্দের সামগ্রী কিনছেন। বাবার ঘাড়ে উঠে কিম্বা হাতে ধরে শিশুরা বেড়াতে এসেছে এই মেলায়।

মেলার ঠিক মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। এখানে জারিগান-কবিগান, পালযাত্রা হয় গভীর রাত পর্যন্ত। বিকালে দেখা গেল স্টল ঘিরে কয়েক শ মানুষের ভিড়। মঞ্চে একজন নাচছেন আর অন্যরা তা উপভোগ করছেন। নানা বয়সী শিশুরা নিজেদের পছন্দমতো নাচ পরিবেশন করছে আর দর্শকেরা হাততালি দিচ্ছে। খাবার দোকানের ও কমতি নেই, কোথাও কয়েক প্রকারের চানাচুর দিয়ে তৈরি হচ্ছে বারোভাজা আবার কেউ বা খাচ্ছে গরম গরম চপ। মসলার পান আর হাওয়াই মিঠাই এ তো মেলার মূল অংশ। পান খেয়ে ঠোঁট রঙিন করছে ছোট ছেলে-মেয়েরা। হরেক রকমের মানুষ হরেক সাজে, ছোট শিশুরা এসেছে রঙিন সুতি শাড়ি পরে।

হাজারো মানুষ কোনো না-কোনো কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে মেলার কেনাকাটায় আর খাওয়া দাওয়া কিম্বা বিনোদনে। ২ দিনের বৈশাখী মেলায় ঘোড়দৌড় ছাড়াও জারিগান, ভাবগান আর নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এর আয়োজন ছিল।

এ এক অন্যরকম বাঙালি আয়োজন। কবে থেকে এই মেলা শুরু হয়েছিল তার সঠিক তথ্য নেই স্থানীয়দের কাছে। বাড়িভাঙ্গা গ্রামের প্রবীণ রহমত মোল্যা জানান, আমার দাদার কাছে এই মেলার গল্প শুনেছি। উনারা বলতেন এটা সম্রাট আকবরের আমল থেকে হয়ে আসছে।

ইংরেজ আমলের নলদী পরগনার পাশেই গড়ে ওঠে ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামের হাট। নবগঙ্গা নদীর পারে বসা এই হাটে দুপারের প্রায় ৫০ গ্রামের মানুষ আসে বিকিকিনি করতে। সেই হাটকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে বৈশাখী মেলা। বৈশাখের প্রথম দিন থেকে মেলা শুরু হলেও কয়েকবছর প্রশাসনের কড়াকড়ির কারণে একদিন পিছিয়ে শুরু হয়ছে ১৫ এপ্রিল থেকে।

দুই দিনব্যাপী মেলার শেষ দিনে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। স্থানীয় ব্রাহ্মণডাঙ্গা মাঠে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বিকালে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় আশপাশের কয়েকটি জেলার ২০টি ঘোড়া অংশ নেয়। জেলার ও জেলার বাইরে থাকা দর্শনার্থী ঐতিহ্যবাহী এই ঘোড়দৌড় দেখতে বৈশাখের আগেই বাড়িতে চলে আসেন। বৈশাখী সূর্যের তাপ উপেক্ষা করে গ্রামের বিলের মাঠ হয়ে হয়েছে রঙিন।

যশোর, খুলনা, মাগুরা, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘোড়ার মালিকেরা আসেন ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। ব্রাহ্মণডাঙ্গা বিলের অপর প্রান্ত বারই পাড়া থেকে শুরু হয়ে বাজারের অংশে এসে শেষ হয় ৩ কিলোমিটারের ঘোড়দৌড় যাকে স্থানীয়ভাবে ‘ঘোড়া দাবড়” বলা হয়।

ঘোড়া যেখান থেকে ছাড়া হয় সেই শুরুর জায়গাটিকে গ্রাম্য ভাষায় বলা হয় ‘ছদ’। প্রতিযোগী ঘোড়াকে ফিনিশিং পয়েন্ট বা শেষস্থান থেকে ছদে যাবার রাস্তা চিনিয়ে নিয়ে যায় সওয়ারি। ছদে সবগুলো ঘোড়া দাঁড়ালে গুলি ছুড়ে প্রতিযোগিতা শুরু করা হয়। এরপর ঘোড়ায় বসা শিশু সওয়ারিরা হাতে থাকা লাঠি দিয়ে ঘোড়ার গায়ে জোরে বাড়ি দিতে থাকে আর ঘোড়া দ্রুতবেগে চলতে থাকে।

ঘোড়াকে গোসল করিয়ে সুস্থ করিয়ে তার নানা স্থানে নানা ধরনের অলংকার পরানো হয়। পায়ে ও গলায় গুন দেওয়া তাবিজ পরিয়ে তার কানে মন্ত্র পড়ে দেন ফকির। প্রতিটি ঘোড়ার সাথে থাকেন একজন গুনিন বা ফকির।

বাবার সাথে ঘোড়দৌড় দেখতে খুলনা থেকে এসেছে ৭ বছরের চুমকী। মেলা উপলক্ষে আগেই নানা বাড়িতে চলে আসে পরিবারের সাথে। চুমকীর অনুভূতি, প্রতিবারই আমরা এই সময় নানা বাড়িতে বেড়াতে আসি। মেলায় কেনাকাটা করি, ঘোড়দৌড় দেখি আর খুব মজা করি। নানু বাড়ি বেড়াতেই মজা লাগে।

ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে যশোরের বাপ্পীর ঘোড়া, দ্বিতীয় স্থান পায় বাঘারপাড়ার জাবেদ এর ঘোড়া। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান পেয়েছে যথাক্রমে আমডাঙ্গার ইউনুস কাজীর ঘোড়া ও বিছালীর রূপাই শেখ এর ঘোড়া। প্রত্যেক বিজয়ী এবং অংশগ্রহণকারীকে আর্থিক পুরস্কার প্রদান করা হয়।

ব্রাহ্মণডাঙ্গা বৈশাখী মেলা কমিটির সদস্যসচিব এস এম শারফুজ্জামান বোরাক জানান, শতবছর ধরে এলাকার কয়েকটি গ্রাম মিলে বৈশাখের প্রথম দিনে দুই দিনের বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। দিনরাত ধরে চলা এই মেলায় প্রশাসনের কিছুটা কড়াকড়ি থাকায় মেলা একদিন পিছিয়ে পরদিন করা হয়েছে, গ্রামে মেলা দেখতে আসা অনেক মানুষ এ কারণে ফিরে গেছে।

জেলার সর্ববৃহৎ এই বৈশাখী মেলায় বেড়াতে এসেছিলেন নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা। এতবড় আয়োজন দেখে তিনি মুগ্ধ। এই জাতীয় মেলা বর্তমান প্রজন্মের মানুষদের আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি বুঝতে সহায়তা করে। এ ধরনের গ্রামীণ ঐতিহ্যকে টিকিকে রাখতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

বাংলা৭১নিউজ/এইচ.বি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com