বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: রাজধানীতে লোডশেডিং চলছেই। আর জেলা শহরগুলোতে বিদ্যুতের দূরাবস্থা ভুক্তভোগি ছাড়া বুঝানো সম্ভব নয়। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, উৎপাদন ঠিক আছে; চাহিদাও উৎপাদনের চেয়ে খুব বেশি নয়। তাহলে কেন এই লোডশেডিং? এ নিয়ে গ্রাহকদের মাঝে নানা প্রশ্ন। সরকারও এ নিয়ে বিব্রত।
এমন অবস্থায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয় ২০২১ সালের মধ্যে প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ার রূপকল্পভিত্তিক কর্মসূচির লাগাম টেনে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সঞ্চালন লাইন না করে বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে কিছুটা ধীরে চল নীতি অনুসরণের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।
পিডিবি’র তথ্যানুযায়ি, গত ছয় বছরে বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা তিন গুণের বেশি বেড়েছে। কিন্ত এই পরিমান উৎপাদন বাড়িয়েও ক্রমবর্ধমান চাহিদা অনুযায়ি বিতরণ কোম্পানীগুলো বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। এতে করে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার তুলনায় কম সরবরাহ হচ্ছে। এই ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে।
রাজধানীর তুলনায় লোডশেডিংয়ের তীব্রতা জেলা শহরগুলোতে অনেক বেশি। এমন অনেক জেলা রয়েছে-যেখানকার গ্রাহকরা বিদ্যুতের ভোগান্তিতে একেবারেই অতিষ্ট। পটুয়াখালীতে লোডশেডিং এতটাই অসহনীয় যে, সেখানে বিদ্যুতের দাবিতে সর্বস্তরের মানুষ আধবেলা হরতাল পালিত হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ১৪শ’ মেগাওয়াটের উপরে। আর আগামী জুনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্থাপিত ক্ষমতা হবে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। অথচ এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ উৎপাদন সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছায়নি। আবার যেটুকু উৎপাদন হচ্ছে, তাও সঞ্চালন-ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে ঠিকমতো বিতরণ হচ্ছে না।
যদিও বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের রূপকল্পে বলা আছে, ২০২১ সালে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে হলে উৎপাদনক্ষমতা থাকতে হবে ২৪ হাজার মেগাওয়াট। সে হিসাবে আগামী পাঁচ বছরে উৎপাদনক্ষমতা বাড়াতে হবে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট। সরকারের এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে মূলত কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ওপর নির্ভর করে। কিন্তু কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো বাস্তবায়নের যে অগ্রগতি, তাতে ২০২১ সালের মধ্যে একটি বড় কেন্দ্রও চালু হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
ফলে বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের রূপকল্প নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রা কতটুকু অর্জন করতে পারবে-তা নিয়ে সন্দেহ বাড়ছে। যদিও পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার আশা করছে সরকার। তবে পরমাণু শক্তি কমিশনের সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ সালের আগে ওই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
জানা যায়, বর্তমানে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতের দেড় কোটিরও বেশি গ্রাহকের চাহিদা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট। ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী দুটি প্রতিষ্ঠান ডিপিডিসি ও ডেসকোর মোট চাহিদা প্রায় ২ হাজার ৫শ’ মেগাওয়াট। পিডিবি এবং পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির মোট চাহিদা রয়েছে দেড় হাজার মেগাওয়াটের ওপরে।
এই পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করবে-তা নিয়েই উদ্বিগ্ন বিদ্যুৎ বিভাগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিডিবি’র এক কর্মকর্তা বলেন, লোডশেডিং আরও সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব-যদি সক্ষমতা অনুযায়ি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। এই কর্মকর্তার মতে, পিডিবি’র চাহিদা মোতাবেক গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না পেট্রোবাংলা। যদি আর ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো তাহলে অতিরিক্ত আরও ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতর উৎপাদন করা সম্ভব হতো।
আজ রোববার পেট্রোবাংলার কাছ থেকে পিডিবি গ্যাস পেয়েছে ৯৭৩ মিলিয়ন ঘনফুট। আর বিদ্যুতের উৎপাদন ধরা হয়েছে ৮ হাজার মেগাওয়াট এবং চাহিদা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪ মেগাওয়াট। চাহিদা মোতাবেক গ্যাস না পাওয়া নিয়ে পিডিবি’র অভিযোগ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার বক্তব্য হচ্ছে, আমাদের জ্বালানি সল্পতা রয়েছে। এই অবস্থায় নতুন করে বড় গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া না গেলে ভবিষ্যতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো মোটেও সম্ভব হবে না। কাজেই বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগকে গ্যাসের বিকল্প হিসাবে কয়লা নিয়ে ভাবতে হবে। পেট্রোবাংলার মতে, পদ্ধতি যাই হোক-কয়লা উত্তোলনে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ২০২১ সালে দেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকীতে প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার অবিচল। তিনি বলেন, সঞ্চালন ও বিতরণ-ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা দূর করার জন্যও প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। আর কয়লা প্রসঙ্গে তিনি জানান, সরকার কয়লাভিত্তিক বড় কেন্দ্রগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য সম্ভাব্য উৎস থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে সরকার।
জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন বলেন, আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়িই কাজ করে যাচ্ছি। বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ধীরে চল নীতি অনুসরণের কোন নির্দেশনা আমরা পাইনি। বরং রমজানে যাতে বিদ্যুৎ নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে ভোগান্তি না হয়, সে ব্যপারে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি