বাংলা৭১নিউজ, নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে লাঞ্ছিত হওয়া সেই প্রধান শিক্ষককে এবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার ম্যানেজিং কমিটির পাঠানো বরখাস্তপত্র হাতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত।
শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় দোষীদের শাস্তি দাবিতে প্রতিবাদের মধ্যে উল্টো ওই শিক্ষককে বরখাস্ত করার খবর এলো। চিঠিতে স্বাক্ষরের তারিখ ১৬ মে উল্লেখ আছে। এতে অনুপস্থিতিসহ চারটি কারণের কথা বলা হয়েছে।
চারটি সুনির্দিষ্ট কারণসহ স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে তাকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
শ্যামল কান্তি ভক্তকে পাঠানো বরখাস্তের চিঠিতে স্বাক্ষরের নিচে ১৬ মে ২০১৬ইং লেখা থাকলেও চিঠির ওপরের ডানদিকে ১৩ মে উল্লেখ করা রয়েছে।
সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন মর্মে যে চিঠি শ্যামল কান্তি ভক্ত পেয়েছেন তাতে লেখা, ‘আপনার বিরুদ্ধে আনীত নিম্নবর্ণিত অভিযোগসমূহ অদ্যকার পিয়ার সাত্তার লতিফ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভায় উত্থাপিত হয়।
১। আপনি ছাত্রদের ওপর শারীরিক নির্যাতন করেন।
২। বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে চাকরি দেওয়ার নাম করে অর্থ গ্রহণ করেছেন।
৩। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন।
৪। বিদ্যালয়ের ছুটি ব্যতিরেকে অনুপস্থিত থাকেন এবং প্রায়ই দেরি করে বিদ্যালয়ে আসেন।
আগেও এসব অভিযোগ আপনার বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়েছে এবং আপনাকে বহুবার সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু আপনি এরূপ অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত হননি। তাই ১৩ মে ২০১৬ইং তারিখে ম্যানেজিং কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক আপনাকে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।’
তবে এ ব্যাপারে ফারুকুল ইসলামের মোবাইলে ফোন দিলে সেটা বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমি হাবিব জানান, বিষয়টি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির ব্যাপার।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শ্যামল কান্তি ভক্ত বলেন, ‘আমি স্কুলের শুরু থেকেই চাকরি করে আসছি। কলাগাছিয়ার অনেকেই আমার ছাত্র। টিনের স্কুলঘরকে তিলে তিলে ভবনে পরিণত করা হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরেই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি চাচ্ছে না আমি প্রধান শিক্ষক পদে থাকি। তারা চেয়েছিল আমি তাদের পকেটের লোক হয়ে থাকি। এসব নিয়ে বিরোধ ছিল। এ ছাড়া স্কুলের দেয়াল ধসসহ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলামের বোন পারভীন আক্তারকে প্রধান শিক্ষক করতেই মূলত চেষ্টা করা হয়।’
‘এ ছাড়া স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মতিউর রহমান, মিজানুর রহমান ও মোবারক হোসেন এ তিনজন মিলেই আমাকে পদচ্যুত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করে। পুরোটা পরিকল্পিত ও সাজানো। আমি আসলে পলিটিক্স বুঝতে পারিনি। সে কারণেই আমার ওপর অপবাদ দেওয়া হয়। মতিউর রহমানের নেতৃত্বে মিজানুর রহমান ও মোবারক হোসেন মিলেই শুক্রবার হামলা চালায় এবং মারধর করে।’ যোগ করেন তিনি।
শুক্রবারের ঘটনায় এমপি সেলিম ওসমান তাকে কান ধরে ওঠ-বস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাকে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে আমার স্থানে অন্য কাউকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমার কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর রেখে আমার যাবতীয় শিক্ষাগত ও অভিজ্ঞতার মূল সনদ এবং বিদ্যালয়ের যাবতীয় চাবি রেখে দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ে স্থানীয়দের জনরোষ থেকে এমপি মহোদয় আমাকে উদ্ধার করেন।’
এদিকে তদন্তসংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। পরে তারা প্রধান শিক্ষককে অপদস্থ করার নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের তথ্য পান। এর মধ্যে একটি হলো- মসজিদের মাইকে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে পরিস্থিতিকে উসকে দেওয়া।
ঘটনাস্থলে যাওয়া বন্দর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী হাবিবও এমন তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘আহত স্কুল ছাত্রের অভিযোগে ধর্মীয় অনুভূতির বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। এ ছাড়া ম্যানেজিং কমিটির বিরোধের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে।’
এ বিষয়ে সুশীল সমাজ মনে করছে, প্রভাবশালীদের কারণে শেষ পর্যন্ত এ ঘটনার তদন্ত নিরপেক্ষ থাকবে না। অপমানে বিপর্যস্ত প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তির দাবি, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে দেশের বাকি সব শিক্ষকের সম্মানের স্বার্থেই।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন নারায়ণগঞ্জ শাখার সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম জানিয়েছেন, একজন সংসদ সদস্য কোন এখতিয়ারে এ ধরনের শাস্তি দিতে পারেন আমার জানা নেই। সাংবাদিকদের প্রতি হুমকি-ধামকিসহ ডিসের সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করার সময়।
বাংলা৭১নিউজ/এস