রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
চুরির মামলা তদন্তে মিললো অবৈধ অস্ত্রের সন্ধান লভ্যাংশ ঘোষণার অনুমতি পেলো যমুনা ব্যাংক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে জাতীয়ভাবে উৎসাহিত করে পুরস্কার পাচ্ছেন যারা বিকাশে টেন মিনিট স্কুলের ফি পেমেন্টে ২০০ টাকা ক্যাশব্যাক দফায় দফায় কমছে সোনার দাম, এবার কমলো ৩১৫ টাকা নৌ পুলিশের অভিযানে অবৈধ জাল ও মাছের পোনাসহ আটক ৫১ সোমবার দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী ১৫০০ কোটির মাইলফলক ছুঁলো পদ্মা সেতুর টোল আদায় বাংলাদেশকে ১৪৬ রানের টার্গেট দিলো ভারত শ্রমিকদের জন্য কর্মবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে : স্পিকার প্রাথমিকের শূন্য পদে নিয়োগে পদক্ষেপ নিতে বলল সংসদীয় কমিটি নেত্রীর জন্য জান দেওয়া নয়, সিদ্ধান্ত মানার আহ্বান : দীপু মনি দাবদাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা-বন্ধ নিয়ে যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী কোরবানির জন্য প্রস্তুত ১ কোটি ৩০ লাখ পশু, আমদানি নয় বঙ্গোপসাগর থেকে ভেসে এসেছে টর্পেডো সদৃশ বস্তু এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ৯-১১ মের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কেবল ব্যবসা করলে চলবে না : শিল্পমন্ত্রী আইনগত সহায়তা পাওয়া করুণা নয় : আইনমন্ত্রী কোটালীপাড়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা বিনামূল্যে ছাতা-খাবার স্যালাইন পাচ্ছেন ৩৫ হাজার রিকশাচালক

বুড়িগঙ্গা দখল: লাইসেন্স ছাড়াই চলছে এক যুগ

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় বুধবার, ৮ মে, ২০১৯
  • ৭১ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: লাইসেন্স ছাড়াই কমবেশি একযুগ ধরে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে অন্তত ৭৭টি ডকইয়ার্ড ও শিপ বিল্ডার্স। এসব প্রতিষ্ঠানের দখলে রয়েছে বুড়িগঙ্গা নদীর অন্তত ৩ হাজার ৭৩২ শতাংশ তীরভূমি।এ ছাড়াও ৫২টি ডকইয়ার্ডে রয়েছে স্লিপওয়ে (জাহাজ তোলার জন্য রেললাইনের মতো স্থাপনা)। স্লিপওয়ে স্থাপনেও ব্যবহার করা হচ্ছে নদীর জমি। লাইসেন্স ছাড়া প্রতিষ্ঠানের মালিকের তালিকায় রয়েছেন জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

এ ছাড়াও রয়েছে আরও ১২টি লাইসেন্সধারী ডকইয়ার্ড। এসব ডকইয়ার্ড ও শিপ বিল্ডার্সে নিয়মিত লঞ্চ, পণ্যবাহী কার্গোসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযান নির্মাণ ও মেরামত করা হচ্ছে। কোনো কোনো ডকইয়ার্ড নদীতে নৌযান বেঁধে মেরামত কার্যক্রম চালাচ্ছে। ঈদ সামনে রেখে এসব ডকইয়ার্ডে রংচং করা হয় লঞ্চ। এতে একদিকে মূল নদীপথ সরু হচ্ছে, অপরদিকে নৌযানের বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। এমন পরিস্থিতিতে ডকইয়ার্ডগুলো দ্রুততম সময়ে অন্যত্র স্থানান্তর করতে নির্দেশনা দিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

যদিও এ নির্দেশনা নিয়ে ঘোরতর আপত্তি রয়েছে ডকইয়ার্ড মালিকদের। তাদের মতে, নদীর তীরভূমি ছাড়া ডকইয়ার্ড নির্মাণ করা সম্ভব নয়। এরই মধ্যে এসব ডকইয়ার্ডে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এমন অবস্থায় ডকইয়ার্ড সরাতে হলে সরকারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। লাইসেন্স না থাকায় বিআইডব্লিউটিএকে তীরভূমি ব্যবহারের ফি দিতে পারছেন না তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে নির্মিত ডকইয়ার্ড ও শিপ বিল্ডার্স সরাতে হবে। এই অবস্থানে অনড় রয়েছি। তবে মালিকদের সময় দেয়া হবে। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানকে কী ধরনের প্রণোদনা দিতে পারি, সে বিষয়টিও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন ঢাকার ডকইয়ার্ড ও শিপ বিল্ডার্সগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে দেশের অন্য জেলাগুলোয়ও একই পদক্ষেপ নেয়া হবে।

কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ফারহান ডকইয়ার্ডের মালিক গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি বলেন, প্রায় সব ডকইয়ার্ড ও শিপ বিল্ডার্স ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে গড়ে উঠেছে। ডকইয়ার্ডে জাহাজ ওঠানামাতে নদীর তীরভূমি ব্যবহার করতে হয়। নদীর তীরভূমি ছাড়া ডকইয়ার্ড অচল। এই তীরভূমি নিয়েই যত সমস্যা। তিনি বলেন, এই তীরভূমীর দাবিদার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। আবার কিছু দিন আগে জেলা পরিষদ ডকইয়ার্ড মালিকদের তীরভূমি ব্যবহার বন্ধের নোটিশ দিয়েছে। আমরা সব সময় বলে আসছি, আমাদের তীরভূমি ব্যবহারের লাইসেন্স দেন, ডকইয়ার্ডের লাইসেন্স দেন, আমরা ফি পরিশোধ করব। কিন্তু তারা তা না করে আমাদের সরতে বলছে। কোথায় সরবো,সেই জায়গাও ঠিক করে দিচ্ছে না।

নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম বলেন, অনুমোদন ছাড়া ডকইয়ার্ড ও শিপ বিল্ডার্স গড়ে উঠতে পারে না। এসব প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধিত কোনো জাহাজ মেরামত ও নির্মাণ করাও সমীচীন নয়। অনুমোদিত ডকইয়ার্ডে জাহাজ মেরামত ও নির্মাণ করতে হবে।

বিআইডব্লিউটিএ ও নৌপরিবহন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা নদীবন্দরের আওতাধীন এলাকায় তালিকাভুক্ত ৮৯টি ডকইয়ার্ড ও শিপ বিল্ডার্স রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১২টির লাইসেন্স রয়েছে। আরও চারটি ডকইয়ার্ডকে লাইসেন্স দেয়া হলেও শর্ত ভঙ্গের কারণে তা বাতিল করা হয়েছে। বাকি ৭৩টির কোনো লাইসেন্স নেই। লাইসেন্সবিহীন এ ৭৭টিকে অবৈধ বলছে সরকারের এ দুই প্রতিষ্ঠানের শীষ কর্মকর্তারা। তাদের মতে, এছাড়াও আরও কয়েকটি ডকইয়ার্ড গড়ে উঠেছে। এসব ডকইয়ার্ড থেকে সরকার এদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে, অপরদিকে নদী দূষণ হচ্ছে।

সংস্থা দুটি আরও জানিয়েছে, ২০০৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় পরিবেশ কমিটির তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, সঠিক পরিবেশ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ডকইয়ার্ডগুলো বুড়িগঙ্গা নদীর তীরভূমি এলাকা থেকে আরও ভাটি এলাকায় স্থানান্তরের বিষয়টি পরীক্ষা করতে হবে। ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এসব ডকইয়ার্ডকে লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে না বলে জানান সংস্থা দুটির কর্মকর্তারা।

জানা যায়, বুড়িগঙ্গা নদীর দুই পাড়ে মূলত এসব ডকইয়ার্ড ও শিপ বিল্ডার্স গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে মিরেরবাগ মৌজায় ২৭টি, কাটুরাইলে ১৯টি, দোলেশ্বরে ১৩টি, ধর্মগঞ্জে ১৯টি, কালীগঞ্জে ৮টি, পানগাঁওয়ে ২টি ও চরকুন্দলিয়া মৌজায় একটি ডকইয়ার্ড রয়েছে। উল্লেখযোগ্য ডকইয়ার্ডগুলোর মধ্যে কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যায় ২০০১ সালে কার্যক্রম শুরু করেছে নজরুল ইসলাম ডকইয়ার্ড। ১৮ বছর ধরে ডকইয়ার্ড পরিচালনায় কোনো লাইসেন্স নেই এটির। অথচ বুড়িগঙ্গা নদীর ১১৮ (৩২০ ফুট ও ১৬০ ফুট) শতাংশ তীরভূমি রয়েছে এ ডকইয়ার্ডের দখলে। একই উপজেলার মিরেরবাগ এলাকায় সাগর ডকইয়ার্ডের অধীনে রয়েছে ২২৮ শতাংশ জমি। এ ডকইয়ার্ডটিও ২০০১ সাল থেকে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাচ্ছে।

এছাড়া আলী ডকইয়ার্ডের অধীনে ১৩৯ শতাংশ, ঢাকা ডকইয়ার্ড ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধীনে ১৫২ শতাংশ, সিটি ডকইয়ার্ডের অধীনে ১৬৪ শতাংশ, তালুকদার ডকইয়ার্ডে ১৫০ শতাংশ, কুমিল্লা শিপ বিল্ডার্সে ১২১ শতাংশ ও মাদারীপুর ডকইয়ার্ডের অধীনে ২৩০ শতাংশ নদীর জমি। এসব ডকইয়ার্ড ২০০১ সাল থেকে ব্যবসা পরিচালনা করছে। লাইসেন্সবিহীন ডকইয়ার্ড ও শিপ বিল্ডার্সগুলো নদীর তীরভূমি ব্যবহার করলেও ফি পাচ্ছে না বিআইডব্লিউটিএ।

মাদারীপুর ডকইয়ার্ডের মালিক শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ডকইয়ার্ডের লাইসেন্স পেতে এবং নদীর তীরভূমি ব্যবহারের ফি দিতে আমরা প্রস্তুত। নৌপরিবহন অধিদফতর ও বিআইডব্লিউটিএ ফি নেয়ার উদ্যোগ নিয়েও পরে তা বাস্তবায়ন করেনি। ইতিমধ্যে আমরা শত শত কোটি টাকা এসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছি। আমাদের সরাতে হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

জানা গেছে, নদীর জমির পাশাপাশি নিজস্ব জমিতে ডকইয়ার্ড ও শিপ বিল্ডার্স নির্মাণে মালিকরা দাবি করলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সত্যতা পায়নি নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিনিধি দল। সম্প্রতি নদীরক্ষা কমিশন ৩৩টি ডকইয়ার্ড পরিদর্শন করে ৩০টিরই জমির নামজারির রেকর্ড পাননি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। তারা নদীতে ভাঙা জাহাজ ফেলে রাখতে দেখেছেন। সম্প্রতি নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ডকইয়ার্ড ও শিপ বিল্ডার্স মালিকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে এসব প্রতিষ্ঠান সরানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বাংলা৭১নিউজ/এলএ.এফএ

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com