লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ভুলুয়া নদীর দুই পাড় ভরাট হয়ে খালে পরিনত হওয়ায় স্রোতধারা বাধাগ্রস্ত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। আর এই জলাবদ্ধতায় আটকা পড়েছে কয়েক শত বসত বাড়ি ও হাজার একর আমনের জমি।
সরেজমিনে দেখা যায়, রামগতি উপজেলার পোড়াগাছার স্লুইসের বেড়ির মাহফুজ মিয়া ঢাল থেকে আজাদনগর বাজারে দক্ষিণ-পূর্বে নদীর দুইপাশে ঝুপড়ির মত ছোট-বড় বসত ঘর, দোকান ও গাছপালা রয়েছে। ৪০০ মিটার চওড়া নদীটি দখলের কারণে ১০০-১৫০ মিটারে রূপ নিয়েছে। এতে চর বাদাম, পোড়াগাছা, চর কাদিরা, তোরাবগন্জ, চর জাঙ্গালিয়ার প্রায় দুই হাজার বাড়িঘর অতিবৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। সে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
আজাদনগর, চার রাস্তা, পাটোয়ারী বাজার, চর বসু, তোরাবগনজ, চর বাদাম এসব প্রত্যন্ত এলাকায় মানুষের বাড়িঘর পানিতে থৈ থৈ করছে। চোখ যতদূর চোখ যাচ্ছে- দেখা যাচ্ছে পানি আর পানি। মানুষকে নৌকা বা ডিঙিতে চলাচল করতে হচ্ছে। কৃষি জমির ফসল কোথাও চোখে পড়েনি। কিছু ফসল থাকলেও তা পানির নিচে রয়েছে।
কোথাও আমনের বীজতলা দেখা যাচ্ছে না। রাস্তা বা সড়কে মানুষ, গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, ভেড়া ও মহিষ বেঁধে ঘাস ও গাছের লতাপাতা খাওয়াচ্ছে। জীবন যুদ্ধে গবাদি পশু বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা চলছে। এছাড়াও নদীতে মাছ ধরার বিভিন্ন জালের কারণেও পানির স্রোত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
দেখা যায়, পানিতে সয়লাব থাকায় মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা যাচ্ছে না। পানিবেষ্টিত গ্রামগুলোকে একেকটি দ্বীপ বলে মনে হচ্ছে। ভেলা দিয়ে খড় এনে গবাদি পশুদের খাওয়ানো হচ্ছে। দেখা যায়, অনেক বাড়িতে রান্না করার চুলা পর্যন্ত নেই। শুকনো খাবার খেয়ে তারা দিন পার করছে। স্কুলগুলোও পানিতে প্লাবিত।
চর কাদিরা ইউপির সাবেক মেম্বার আব্দুল কাদের পাটোয়ারী জানান, চর কাদিরা, তোরাবগন্জ, চর বাদাম, আন্ডারচরসহ বেশ কিছু এলাকায় টানা বৃষ্টিতে পানি কোমড় সমান। বাড়ি-ঘর ডুবে গেছে, কৃষি জমি পানির নিচে।
কৃষক মো.কামাল জানান, ভুলুয়া নদীর দু’পাশ অবৈধ ঘর-বাড়িতে দখল হওয়ায় নদীর মুখ সরু হচ্ছে। মানুষ বাড়ি-ঘর, গবাদি পশু ও আমনের বীজতলা, সবজি বাগান নিয়ে জীবন জীবিকায় ঝুঁকিতে বসবাস করছে।
মো. মাইন উদ্দিন জানান, টানা বৃষ্টির কারণে চর কাদিরা, চর বাদাম ইউনিয়ন পানির নিচে ডুবে গেছে। বাড়ি-ঘরে থাকা যায় না। পানি নামতেছে না। প্রতিদিন পানি বাড়ছে। দ্রুত নদীর দুইপাশ দখলমুক্ত করা না গেলে উত্তর অঞ্চল ডুবে যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছৈয়দ আমজাদ হোসেন জানান, ভুলুয়া নদীর দুই পাশে বেশ কিছু অবৈধ দখলদার রয়েছে। উচ্ছেদ এর বিষয়ে কাজ চলছে। নদীতে নানা রকম দখল রয়েছে। যেকোন সময় দখল উচ্ছেদ অভিযান করা হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ