বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: রোহিঙ্গা ইস্যুতের ভারতের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিন দিনের ভারত সফর শেষে শনিবার বিকালে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারতের সহায়তা চেয়েছি। আমরা চাই রোহিঙ্গারা তাড়াতাড়ি নিজ দেশে ফিরে যাক। এ জন্য রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে নতুন একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
এ সময় তিস্তাসহ অন্যান্য নদী নিয়েও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি নিয়ে আমরা আশাবাদী। খুব শিগগিরই বিষয়টির সমাধান হবে। শুধু তিস্তা নয়, ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান চাই। ভারত সফর সফল হয়েছে বলে উল্লেখ করেন আবদুল মোমেন।
দিল্লিতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ পরামর্শক কমিশন- জেসিসি বৈঠকে যোগ দিতে বুধবার ঢাকা ত্যাগ করেন ড. মোমেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর ড. এ কে আবদুল মোমেনের এটাই প্রথম বিদেশ সফর। তিন দিনের এই সফরে তিনি বাংলাদেশ-ভারত যৌথ সংসদীয় পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) পঞ্চম বৈঠকে যোগ দেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও তিনি দেখা করেন।
পরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে নতুন প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ‘সেফ হেভেন’ বা নিরাপদ এলাকা তৈরি করে সেখানে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক। ওই এলাকায় রোহিঙ্গারা নির্ভয়ে, নিরাপদে, টেকসই জীবন নির্বাহ করতে পারছেন কি না তা দেখভালের দায়িত্ব নিক মিয়ানমারের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো।
তিনি বলেন, সেই রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ভারত, চীন ও আশিয়ান সদস্যভুক্ত দেশগুলো থাকবে। ভারত যেন এই সমাধান সূত্র নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলে। এ প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানিয়েছে ভারত। তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বন্ধু রাষ্ট্ররা রোহিঙ্গাদের দেখভালের দায়িত্ব নিলে, রাখাইনে ফেরত গিয়ে তারা ভালো আছে কি না পর্যবেক্ষণ করলে, মিয়ানমার তা মেনে নিতে পারে। কারণ, ভারত, চীন বা আশিয়ান সদস্যরা মিয়ানমারের বন্ধু রাষ্ট্র।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই সমাধান সূত্র শুনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে বলেছেন, ‘উদ্ভাবনী (ইনোভেটিভ) প্রস্তাব। শুক্রবার বাংলাদেশ হাইকমিশনে তার সম্মানে দেওয়া নৈশভোজের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন প্রস্তাবটি সম্পর্কে তাদের অবহিত করেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ প্রস্তাবটি তুলে ধরেন তিনি।
নৈশভোজের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এই প্রস্তাবের কথা জানিয়ে আবদুল মোমেন বলেন, আমি সুষমা স্বরাজকে বিস্তারিত সব বলি। উনি জানতে চান, কথাটা আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে বলেছি কিনা। উত্তরে আমি জানাই, বলেছি, তবে সংক্ষিপ্তভাবে। শুনে মোদি ইনোভেটিভ প্রপোজাল বলে মন্তব্য করেছেন।
সুষমা তখন বলেন, মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো আপনার বন্ধু। প্রস্তাবটা তাকে দিচ্ছেন না কেন? জবাবে বলি, বন্ধু ঠিকই, কিন্তু প্রস্তাবটা ভারতের কাছ থেকে গেলে মিয়ানমার বেশি গুরুত্ব দেবে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশত্যাগী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের বড় বড় দেশের নেতাদের বাঁচিয়ে দিয়েছেন। দুশ্চিন্তামুক্ত করেছেন। কেননা, তা না হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর একটা বড় গণহত্যা ঘটে যেত।
তিনি বলেন, ২৪ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন, ১৮ হাজার নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, সোয়া লাখ বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ১ লাখ ২০ হাজার বাড়ি ধ্বংস হয়েছে, ৮ লাখ মানুষ বাংলাদেশে চলে এসেছেন। মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথিবীর বড় বড় নেতাদের বাঁচিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশ ধনী রাষ্ট্র নয়। দেশটা ঘনবসতিপূর্ণও। এই বাস্তুচ্যুতদের ফিরে যেতে হবে। না হলে সৃষ্টি হবে অরাজকতা অনিশ্চয়তা। মৌলবাদ মাথাচাড়া দেবে।
তিনি বলেন, সুষমা স্বরাজকে বলেছি, প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসনের কাজ সম্পন্ন না হলে এই অঞ্চল সবার জন্য নিরাপদ থাকবে না। নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা না থাকলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ঘটবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো দরকার।
জেসিসি বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন তিস্তাসহ অভিন্ন সব নদীর পানিবণ্টনের বিষয়েও গুরুত্ব দিয়েছেন। এই নদীগুলোর মধ্যে কয়েকটি আবার চীন থেকে প্রবাহিত। সে ক্ষেত্রে পানিবণ্টনের মীমাংসা কীভাবে হবে, দ্বিপক্ষীয় না বহুপক্ষীয়, সে বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা তা ঠিক করবেন।
প্রথম সফর যে অত্যন্ত ফলপ্রসূ, আবদুল মোমেন বারবার সে কথা বলেন। তার কথায়, আমি খুব খুশি। সেখানে খুব আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক আগের মতই সৌহাদ্যপূর্ণ রয়েছে এবং পারস্পারিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ভদ্রতাবোধও তাকে মুগ্ধ করেছে।
তিনি যে অভিভূত, সে কথা জানিয়ে আবদুল মোমেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, অত বড় একজন অর্থনীতিবিদ, আমার বড় ভাইয়ের (সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত) যিনি ঘনিষ্ঠ, তিনি আমার গাড়ির দরজা খুলে ধরে স্বাগত জানাচ্ছেন! চলে আসার সময় গাড়ির দরজা বন্ধ করে বিদায় জানাচ্ছেন! আমি অভিভূত।
বাংলা৭১নিউজ/একে