বাংলা৭১নিউজ ডেস্ক: রাখাইনে জাতিগত নিধনযজ্ঞের সমালোচনা করে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) সম্প্রতি ঢাকায় যে ঘোষণা দিয়েছে তাকে ‘অন্যায্য’ বলে মন্তব্য করেছে মিয়ানমার। বৃহস্পতিবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করেছে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী।
৫ ও ৬ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ৪৫তম ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল রোহিঙ্গা সংকট। বৈঠক শেষে দেয়া ৩৮ দফার ‘ঢাকা ঘোষণা’য় চারটি ঘোষণা ছিল রোহিঙ্গা ইস্যুতে। এসব ঘোষণায় বলা হয়, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপরে নিরাপত্তা বাহিনীর কাঠামো-বদ্ধ সহিংসতার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। উপুর্যপরি হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের কারণে প্রতিবেশী দেশে হাজার হাজার মানুষের পালিয়ে যাওয়াকে জাতিগত নিধনযজ্ঞ বলে উল্লেখ করা হয় ওই ঘোষণায়।’
ঢাকায় ঘোষণায় রাখাইন পরিস্থিতি বর্ণনায় ব্যবহৃত ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ ও ‘রাষ্ট্রীয় মদদে সহিংসতা’ শীর্ষক শব্দগুলোও অস্বীকার করেছে মিয়ানমার। বুধবার মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ওআইসির ঘোষণায় ভারসাম্য ও নিরপেক্ষতার অভাব রয়েছে। কারণ তা উত্তর রাখাইনে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আর্মির) সহিংস আক্রমণের নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। ওই বিবৃতিতে বলা হয় রাখাইনের বর্তমান মানবিক সংকট তৈরি করেছে ওই সশস্ত্র গ্রুপটি।
মিয়ানমারের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, খুবই অনুশোচনীয় যে ঢাকা ঘোষণায় রাখাইনের বাস্তুচ্যুত মানুষদের জরুরি প্রত্যাবাসনের প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ নেই। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হলেও জাতিসংঘ বলছে এখনও প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত নয় মিয়ানমার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আসন্ন বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ঢাকার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, রাখাইনের টেকসই উন্নয়ন ও স্থায়িত্ব বজায় রাখতে কোনও ধরণের সুপারিশ করতেও ব্যর্থ হয়েছে ওআইসির ঢাকা ঘোষণা।
ওআইসির সম্মেলন শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, “রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় মিয়ানমারের জবাবদিহিতার জন্য মন্ত্রী পর্যায়ের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওআইসি। এ কমিটি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করবে। আমাদের বিশ্বাস, ৫৭ সদস্যের সংস্থাটি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। রোহিঙ্গারা ধর্মীয়ভাবে মূলত মুসলমান। মিয়ানমারের দমন-পীড়নের শিকার হয়ে তারা যে দেশে আশ্রয় নিয়েছে সেই দেশটি অর্থাৎ বাংলাদেশ ওআইসির সদস্য। সেদিক থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ, তাদের দ্রুত নিজ দেশে প্রত্যাবাসন এবং সেখানে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের বসবাস নিশ্চিত করতে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা ওআইসির নৈতিক দায়িত্বও বটে।”
সম্মেলন শুরুর আগে ওআইসি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে ওআইসি প্রতিনিধি দলের প্রধান হিশাম ইউসেফ বলেছেন, “রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর যথেষ্ট ভূমিকা রাখার সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা সে ভূমিকা পালন করেনি। বস্তুত এটাই হল প্রকৃত অবস্থা। মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করার পরও এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের ব্যর্থতা প্রকাশ পেয়েছে। এক্ষেত্রে সংস্থাটির ‘হাত-পা’ যে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর কাছে বাঁধা তা-ই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় ওআইসিভুক্ত দেশগুলো অব্যাহতভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে যাবে, এটাই কাম্য।”
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের নির্যাতনের মুধে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজার ও উখিয়ার আশ্রয় শিবিরগুলোতে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য চুক্তি হলেও মিয়ানমার সরকার তা বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে। সূত্র : পার্সটুডে।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস