বাংলাদেশের রোহিঙ্গা অভিবাসী নারী, কিশোরীদের সুরক্ষা প্রদান এবং ক্ষমতায়নে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলে (ইউএনএফপিএ) ৩.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে জাপান সরকার।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) ঢাকায় জাপান দূতাবাসে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল এবং জাপান সরকারের মধ্যে এই নতুন চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনরি এবং ইউএনএফপিএর বাংলাদেশের প্রতিনিধি মাসাকি ওয়াতাবে চুক্তিতে সই করেন।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের নোয়াখালী এবং কক্সবাজার জেলার নারী ও শিশুদের জন্য যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য (এসআরএইচ), লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা (জিবিভি) প্রতিরোধ এবং প্রতিক্রিয়া পরিষেবাগুলো শক্তিশালী করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানিয়ে এই অনুদান প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বলেন, এ বছর ইউএনএফপিএর প্রকল্পটি পরিদর্শন করে আমি মুগ্ধ হয়েছি। কক্সবাজার ও নোয়াখালী জেলার রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জন্য অতিরিক্ত তহবিল প্রদান করতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত।
‘রোহিঙ্গা সংকটের প্রভাবে অনেক নারী ও কিশোরী প্রজনন ও মাতৃস্বাস্থ্য এবং জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু এসব সমস্যা সমাধানে বিদ্যমান সহায়তা একেবারেই অপ্রতুল। আমি আশা করি জাপানের এই সহায়তা নারী ও কিশোরীদের সুরক্ষা, মর্যাদা এবং জীবনমান উন্নয়নে অবদান রাখবে।’ বলেন রাষ্ট্রদূত।
ইউএনএফপিএর বাংলাদেশের প্রতিনিধি মাসাকি ওয়াতাবে বলেন, জাপানের সহায়তায় ইউএনএফপিএ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কক্সবাজার ও নোয়াখালী জেলায় জরুরি যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা এবং জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে পরিসেবাগুলো বাড়াতে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সুবিধাগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইউএনএফপিএ স্বাস্থ্য, সুরক্ষা এবং ক্ষমতায়নের মাধ্যমে মানবিক সুরক্ষা অর্জনে কাজ করে। জাপান সরকারের আমাদের ওপর আস্থা রাখার জন্য আমরা অনুপ্রাণিত এবং নারী ও কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য আমরা জাপান সরকার ও দেশটির জনগণকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বিগত সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সংকট, রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় বাংলাদেশিদের জীবিকা, নিরাপত্তা ও সুস্থতার ওপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে। এই সংকট মোকাবিলায়, জাপান সরকার ৩.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এই সহায়তা ইউএনএফপিএর চলমান কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে। যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য, নারী ও কিশোরীদের বিরুদ্ধে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকার, শিশুবিবাহ প্রতিরোধ এবং কিশোর-কিশোরীদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে তাদের জীবনমানে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে এই অর্থ ব্যবহার করা হবে। প্রকল্পটি কক্সবাজার ও নোয়াখালী জেলার জলবায়ু পরিবর্তন-প্রভাবিত এলাকায় বাস্তবায়িত হবে।
‘অ্যাডভান্সিং দ্য উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি এজেন্ডা ফর ডিসপ্লেসড পারসন্স ফ্রম মিয়ানমার অ্যান্ড হোস্ট কমিউনিটিজ ইন কক্সবাজার অ্যান্ড নোয়াখালী ডিস্ট্রিক্টস’ নামে এই প্রকল্পে তিনটি প্রধান উপাদান রয়েছে, যা কক্সবাজার ও ভাসানচরে রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীদের পাশাপাশি নোয়াখালী ও কক্সবাজার জেলার স্থানীয় বাংলাদেশিদের প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো পূরণ করবে।
প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য হলো- যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য পরিসেবার চাহিদা সৃষ্টি করা। একই সঙ্গে টেকসই ও শক্তিশালী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। দ্বিতীয়টি, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে নারীদের জন্য সুরক্ষামূলক সেবা সহজলভ্য করা।
এসব সেবা দেওয়ার জন্য নারীবান্ধব স্থান নারী-নেতৃত্বাধীন কমিউনিটি সেন্টার, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের স্থানীয় কার্যালয় এবং থানা পর্যায়ে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক একযোগে কাজ করবে। তৃতীয় লক্ষ্যটি হলো- কিশোর-কিশোরীদের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া, বিশেষ করে যারা শিশুবিবাহের ঝুঁকিতে আছে, যারা কিশোরী বয়সে গর্ভধারণ করা মায়েরা এবং অন্য মানবিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় আছে তাদের সুরক্ষা করা। এছাড়াও প্রকল্পটি তাদের স্বাস্থ্য ও জীবন দক্ষতার বিষয়ে শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে সচেষ্ট থাকবে, যা তাদের বয়ঃসন্ধিকাল থেকে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে সুরক্ষা প্রদান করবে।
বাংলা৭১নিউজ/এবি