বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ সাইক্লোন রোয়ানুর ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করছেন। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ায় এখনো চট্টগ্রামে বাশখালি ও আনোয়ারার বিশাল এলাকা পানির নিচে।
কক্সবাজার, নোয়াখালী ও ভোলা জেলাতেও কিছু এলাকা পানির নিচে। এসব এলাকায় মাছ ও লবনচাষীরা সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাইক্লোন রোয়ানুর আঘাতে সাতটি জেলায় লক্ষাধিক ঘরবাড়ি পুরোপুরি বা আংশিক ধ্বংস হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার একদিন পর প্রাথমিক হিসেবে এই তথ্য দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। চট্টগ্রামে ৮০ কিলোমিটার ও কক্সবাজারে ২৮ কিলোমিটারের মতো বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় চট্টগ্রামে বাঁশখালি ও আনোয়ারার বিস্তর এলাকা এখনো পানির নিচে রয়েছে। কয়েকটি জেলায় মাছ ও লবণ চাষীরা সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বলছে, প্রাথমিক পর্যায়ে সহায়তা হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় তিন হাজার পাঁচশো মেট্রিক টন চাল ও আশি লক্ষ টাকা দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন কয়েক বছর ধরে মাছ চাষ করেন। সাইক্লোন রোয়ানুর কারণে তিনি সব খুইয়েছেন। পানির তোড়ে ভেসে গেছে তার চাষ করা সব মাছ।
তিনি বলেন, “পাঙাশ, রুই, কাতল মাছ ছিলো। মাছগুলো এক বা আধা কেজি ওজনের হয়ে গিয়েছিলো এবং সেগুলো এই রমজানে বিক্রি করার পরিকল্পনা ছিলো। সেগুলো সব সমুদ্র ভেসে গেছে। সাড়ে তিন লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।” ছেলেমেয়েদের আশ্রয়কেন্দ্রে আগেই পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। এখন স্ত্রী আর ভাইকে নিয়ে ঘরবাড়ি মেরামতের কাজ করছেন সাইফুদ্দিন।
হাতিয়ার তমরুদ্দি বাজারের মাইনুদ্দিন মাঝি পেশায় জেলে। তিনি বলেন, তার জন্যে ঘর সারাই করারও কোন উপায় নেই কারণ ঝড়ে তার সবকিছু মাটির সাথে মিশে গেছে। যে নৌকা দিয়ে মাছ ধরতেন তাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যান্য সাইক্লোনগুলোর মতো রোয়ানু ততটা শক্তিশালী না হলেও এর ফলে বাঁধ ভেঙেই ক্ষতির শিকার হয়েছেন বেশিরভাগ মানুষ।
এ ব্যপারে চট্রগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, রোয়ানুর আঘাতে মাছ ও লবণ চাষীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, “গবাদি পশুর ক্ষতি হয়েছে কিন্তু মাছ চাষীরা সবচাইতে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেসব ইউনিয়ন তলিয়ে গেছে সেখানে অনেকেই মাছ চাষ করতেন সেগুলো সব চলে গেছে। লবণ ক্ষেত গুলো নষ্ট হয়ে গেছে।”
কক্সবাজার,নোয়াখালী ও ভোলা জেলাতেও একই ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মেসবাহ উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামে প্রায় দু’লক্ষ মানুষের ঘরবাড়ি এখনো পানির নিচে। সবমিলিয়ে দেড়শ কোটি টাকার ক্ষতির হিসেব পেয়েছেন তার এলাকা থেকে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানায়-রোয়ানুর প্রভাবে চট্টগ্রাম ছাড়াও ভোলা, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনি সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ. রিয়াজ আহাম্মদ বলেন, “তাৎক্ষনিক প্রয়োজন মেটাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার প্রশাসনকে তিন হাজার পাঁচশো মেট্রিক টন চাল ও আশি লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পুরো যাচাই করতে এখনো দু’তিন দিন লেগে যেতে পারে।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, আরো বেশি ক্ষতি রোধ করতে বাঁধ মেরামতই এখন তাদের জন্য বেশি প্রয়োজন। অনেক এলাকা থেকে স্থানীয়রা বলছেন, নিয়মিত সংরক্ষণ না করাতেই এত অল্প ঝড়ে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস