বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৫:২৪ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
গাবতলীতে হবে মাল্টি মোডাল বাস টার্মিনাল : স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ‘ডিএসসিসির সব কর্মচারীর জন্য আবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে’ ঢাকায় আসছেন ডোনাল্ড লু লোকসানে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ২৮ প্রতিষ্ঠান : সংসদে শিল্পমন্ত্রী দেশে বিদ্যুতের চাহিদার চেয়ে উৎপাদন ক্ষমতা বেশি : নসরুল হামিদ ক্ষমতায় ও বিরোধী দলে থাকবে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি: নানক মুদ্রানীতি ও আর্থিকনীতি সমন্বয়ে ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা আছে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের শরীয়াহ সুপারভাইজারী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত সংকট সামাল দিতে শক্ত নেতৃত্ব প্রয়োজন: প্রধানমন্ত্রী ভোটের আগের দিন নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত আমরা একসঙ্গে জয়ী হব: শপথ নিয়ে বললেন পুতিন তেজগাঁওয়ে ট্রেনের ধাক্কায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির মৃত্যু মাধ্যমিকের ৩১ বইয়ে ১৪৭ ভুল, স্কুলে যাচ্ছে সংশোধনী জিম্বাবুয়েকে ১৬৬ রানের লক্ষ্য দিলো বাংলাদেশ মাঝ-আকাশে নারী যাত্রীদের ঝগড়া-হাতাহাতি, জরুরি অবতরণ করলো ফ্লাইট সব হজযাত্রী সঠিক সময়ে যাবেন, সঠিক সময়ে ভিসাও হবে : ধর্মমন্ত্রী ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত নতুন স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু জনগণকে নিরপেক্ষভাবে সেবা দেওয়ার তাগিদ আইজিপির শিশুদের শুধু আইনের মাধ্যমে সুরক্ষা দেওয়া কঠিন : ডেপুটি স্পিকার বাংলাদেশের পর্যটন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী ব্রিটিশ সরকার

রোমহর্ষক অত্যাচারের বর্ণনা দিলো স্কুলছাত্রী

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় রবিবার, ৩ জুন, ২০১৮
  • ১৩৭ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ, মনজুর-ই-মওলা সাব্বিরনাটোর প্রতিনিধি: ‘সবার খাতা দেয়া হলেও আমার খাতা দেয়নি। এরপর আমার মুখ চেপে জোর করে মাটির ঢিলার উপরে নিয়ে যায়। সেখানে গুরু ছিল। গুরু ব্যাগ থেকে টেপ বের করে আমার মুখ আটকে দেয়। একটা সিরিঞ্জ বের করে পা থেকে রক্ত বের করে নেয়। কাউকে না বলার জন্য গলায় চাকু ধরে স্যার, আর বলে-‘কাউকে বললে তোকে মেরে ফেলব’।

এভাবেই স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও উপস্থিত অভিভাবকদের সামনে নিজের উপর করা রোমহর্ষক অত্যাচারের বর্ণনা দিচ্ছিল নাটোরের মরিয়ম স্কুলের কেজি-২ এর ছাত্রী সাবিহা সাবরীণ। সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়িয়ার সাব্বির হোসেন ও আশরাফী খাতুনের ছয় বছরের শিশু ওই স্কুলের ‘ভুয়া শিক্ষক’ শ্রী আশিস সরকার (২৭) লালসার শিকার হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে ও বাইরে বিভিন্ন সময় শিশু সাবিহাকে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন লালসা চরিতার্থ করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গত মাসে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছিলেন শিশুটির মা। এ বিষয়ে নাটোরের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া স্কুল কর্তৃপক্ষ ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।

এদিকে ঘটনার পর থেকে ওই শিক্ষক পলাতক রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের কেউই শিক্ষক আশিসের খোঁজ দিতে পারেননি। তবে জানা গেছে, সামনাসামনি না এলেও আশিস প্রধান শিক্ষিকা নিভা গোমেজসহ মিতা সাহা ও সালমা খাতুন নামের ৩জন শিক্ষিকার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

এ ব্যাপারে শনিবার সকালে শিক্ষক-অভিভাবক-ভুক্তভোগি শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শিশুটির মা আশরাফী খাতুন অভিযোগ করেন, শিক্ষক আশিস তার শিশুকন্যার সাথে যেমন আচরণ করত তা শিক্ষক-ছাত্রীসুলভ নয়। তার আচরণে অন্য ইঙ্গিত থাকতো। কিছুদিন আগে স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে সাবিহাকে জোরপূর্ক শ্রেণিকক্ষ থেকে তুলে নেয় আশিস। তাকে স্কুলের এক কোনে ডেকে নিয়ে মুখ আটকে সিরিঞ্জে করে রক্ত নেয় সে। এসময় সাবিহা চিৎকার করলে তার সহপাঠীরা এগিয়ে আসে এবং তাকে ছেড়ে দেয় আশিস। এ সময় সাবিহার বাম হাতের একটি আঙ্গুল কেটেও জখম করে।

গত ১২ই মে সকালে সাবিহাকে ডেকে স্কুলের টয়লেটের সামনে নিয়ে আসে। সে সময় গুরু নামে এক লোকও স্কুলে প্রবেশ করে। সেদিনের ঘটনা কাউকে বললে সাবিহাকে ড্রেনে ফেলে দেয়ার ও হুমকি দেয়। সে সময় আশিসের সাথে থাকা গুরু নামে একজন লোকের বস্তা থেকে ড্রিল মেশিন বের করে পেটে ঠেঁকিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

সাবিহার বাবা সাব্বির হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তার মেয়েকে হত্যার উদ্দেশ্য গলায় ছুরি ধরেছিল শিক্ষক আশিস। একটি শিশুর সাথে এমন ঘটনা ঘটার পরও স্কুল কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ঘটনার দুদিন পর প্রধান শিক্ষিকাকে জানালে তিনি ঢাকা যাবার কথা বলে চলে যান। তিনিও বিষয়টি কর্ণপাত করেননি। এমন নৃশংসতায় জড়িত শিক্ষকের দ্রুত শাস্তির দাবী করছি। সেই সাথে তাকে অপসারণ করারও দাবী জানাচ্ছি।

এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে বিভিন্ন উপায়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। শনিবার সরেজমিনে গিয়ে স্কুলে শিক্ষক আশিসের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষিকা নিভা গোমেজ প্রথমে আশিস সম্পর্কে জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকতা করেন অথচ তার সম্পর্কে জানেন না কেন জানতে চাইলে হকচকিয়ে যান প্রধান শিক্ষিকা।

তিনি কিছুক্ষণ পর একটি কাগজে আশিসের নাম ঠিকানা এনে দিলেও কোন ছবি দেখাতে পারেননি আশিষের। যে শিক্ষকের রিরুদ্ধে এতবড় অভিযোগ, প্রথমে তাকে হাজির না করা এবং পরে তার কোন তথ্য নেই প্রধান শিক্ষিকার এমন দাবীর পর উপস্থিত অভিভাবকরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠলে প্রধান শিক্ষিকা আশিষের একটি জীবন বৃত্তান্ত এনে সাংবাদিকদের দেখান। ওই জীবন বৃত্তান্তে আশিসের কোন স্বাক্ষর নেই। সেখানে উল্লেখ করা মোবাইল নম্বরও ভুয়া। তবে আশিষের ঠিকানা দেয়া আছে বঙ্গজ্বল নাটোর। তার পিতার নাম অশ্বিনী সরকার। সে ২০০৯ সালে এসএসসি ও ২০১১ সালে এইচ এসসি পাশ করে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নাটোরের এন এস সরকারী কলেজ থেকে ২০১৫ সালে বিএ অনার্স পাশ করে।

শিক্ষকের স্বাক্ষরবিহীন জীবন বৃত্তান্ত জমা নিয়ে কিভাবে তাকে পড়ানোর সুযোগ দেয়া হল- জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষিকা নিভা রানী কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটি খ্রিষ্টান রীতিতে পরিচালিত হওয়ায় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফাদার বিকার রিবেরু। এখানে আগত শিক্ষকদের কয়েকমাস শিক্ষানবীশ শিক্ষক হিসেবে রেখে পরে চুড়ান্ত নিয়োগ দেয়া হয়। সেভাবেই শিক্ষক আশিস এখানে পাঠদান করছিলেন।

কিভাবে আশিস প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকতা শুরু করেন জানতে কথা হয় কয়েকজন শিক্ষক ও অভিভাবদের সাথে। তারা জানান, অভিযুক্ত আশিসকে পড়ানোর সুযোগ দিতে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে স্কুলে আনেন আরেক শিক্ষিকা মিতা রাণী সাহা। তারা শহরের বঙ্গজ্বল চাঁইপাড়ায় পাশাপাশি বাস করেন। শিক্ষিকা মিতাও এই ঘটনায় জড়িত আছেন বলে দাবী অভিভাবকদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক জানান, গত ২৮ শে মে অভিযুক্ত শিক্ষক আশিস স্কুলে আসে এবং তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে বলে শুনে যায়। আনীত অভিযোগের ব্যাপারে আশিসের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনেও যোগাযোগ করা হলে সেটিও বন্ধ পাওয়া গেছে। আশিসের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত একই স্কুলের শিক্ষিকা মিতা সাহার সাথে মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আশিসের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা। আশিস ভালো ছেলে ও ষড়যন্ত্রের শিকার। আশিসের বিরুদ্ধে শিশু সাবিহা ও অভিভাবকদের অভিযোগের নেপথ্যে অন্যকিছু থাকতে পারে’।

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই আশিসের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাকেও জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি। ভুক্তভোগি ও অভিভাবকরা আমাকে জানায় বিষয়টি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে শিক্ষক আশিসের শাস্তি ও অপসারণ দাবী করছি। জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন জানান, বিষয়টি তিনি এ প্রতিবেদকের মাধ্যমে জেনেছেন। খোঁজ নিয়ে দেখে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

অভিযুক্ত শিক্ষক আশিসের দ্রুত অপসারণ ও বিচার দাবী করেছেন অভিভাবকরা।

বাংলা৭১নিউজ/জেএস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com