বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক : যাঁর দিকে পুরো দেশ তাকিয়েছিল তিনিই ২৫ মিনিটের সময় মাঠের বাইরে। চোট আক্রান্ত ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে হারিয়ে পুরো পর্তুগাল তখন শোকে বিহ্বল। তখন কে জানত, দলের সবচেয়ে বড় তারকাকে ছাড়াই সবাইকে এভাবে চমকে দেবে পর্তুগাল! ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে স্বাগতিক ফ্রান্সকে ১-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে পর্তুগিজরা। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের একমাত্র গোল করে রোনালদোর দলের জয়ের নায়ক বদলি হিসেবে নামা এদার। ইউরোতে এটাই পর্তুগালের প্রথম শিরোপা।
রোববার রাতে প্যারিসের স্তাদে দি ফ্রান্সে দুদল সতর্কতার সঙ্গে শুরু করলেও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে দেরি করেনি ফরাসীরা। নবম মিনিটে চমৎকার একটা সুযোগ পেয়েছিল ‘লা ব্লুজ’। কিন্তু গ্রিজম্যানের হেড অসাধারণ দক্ষতায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে তুলে দিয়েছেন পর্তুগালের গোলরক্ষক রুই প্যাত্রিসিও।
১৬ মিনিটে দিমিত্রি পায়েতের ট্যাকলে পায়ে ব্যথা পেয়ে মাঠের বাইরে চলে গিয়ে সমর্থকদের দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলেন রোনালদো। মিনিট পাঁচেক শুশ্রূষার পর অবশ্য মাঠে ফিরেছিলেন পর্তুগালের সেরা খেলোয়াড়। কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। ২৫ মিনিটে আবার ব্যথা পেয়ে স্ট্রেচারে শুয়ে মাঠ ছেড়েছেন তিনবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার। আর ফিরতে পারেননি। বাধ্য হয়ে রোনালদোর জায়গায় রিকার্দো কুয়ারেসমাকে নামিয়েছেন পর্তুগালের কোচ ফার্নান্দো সান্তোস।
দলের প্রধান সেনাপতির বেদনাদায়ক প্রস্থানে হতচকিত পর্তুগিজদের ওপরে এরপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে ফ্রান্স। ফরাসীদের মুহুর্মুহু আক্রমণে অবশ্য ভেঙে পড়েনি পর্তুগালের ডিফেন্স। নিজেদের পোস্ট অক্ষত রাখতে প্যাত্রিসিওর অবদানও কম নয়। ৩৩ মিনিটে সিসোকোর বুলেটগতির শট ঠেকিয়ে আবারো দলকে রক্ষা করেছেন পর্তুগিজ গোলরক্ষক। প্রথমার্ধে প্রাধান্য বিস্তার করে খেললেও গোলের দেখা পায়নি স্বাগতিকরা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে ফ্রান্সের আক্রমণের তেমন তীব্রতা ছিল না। পর্তুগালও তাই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল। ৬৫ মিনিটে অবশ্য দারুণ একটা সুযোগ পেয়েছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু আন্তইন গ্রিজম্যানের হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে হতাশ করেছে ফরাসীদের।
এরপরই ফ্রান্সের আক্রমণের ঝাঁঝ বেড়ে গেছে। কিন্তু কিছুতেই গোলের দেখা পাচ্ছিল না তারা। বিশেষ করে প্যাত্রিসিও দুর্ভেদ্য দেয়াল তুলে দাঁড়িয়েছেন ফ্রান্সের সামনে। অলিভিয়ের জিরুদ আর মুসা সিসোকোর দুটো প্রচেষ্টা অসাধারণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দলকে বিপদমুক্ত করেছেন পর্তুগালের গোলরক্ষক।
ফ্রান্সের গোলরক্ষক হুগো লরিসও অবশ্য একবার রক্ষা করেছেন দলকে। ৮১ মিনিটে কুয়ারেসমার দুর্দান্ত ওভারহেড কিক দৃঢ়তার সঙ্গে ঠেকিয়ে দিয়েছেন তিনি। দুই গোলরক্ষকের নৈপুণ্যের জন্যই নির্ধারিত ৯০ মিনিটে কোনো দল গোলের দেখা পায়নি। তাই খেলা গড়িয়েছে অতিরিক্ত সময়ে। যদিও ইনজুরি সময়ে গোল প্রায় করেই ফেলেছিল ফ্রান্স। কিন্তু বক্সের ভেতর থেকে নেওয়া আঁদ্রে-পিয়ের জিগন্যাকের শট প্যাত্রিসিওকে পরাস্ত করলেও সাইডবারে বাধা পেয়ে হতাশ করেছে ফরাসীদের।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথম ১৫ মিনিটে বলার মতো ঘটনা একটাই। কর্নার থেকে এদারের দারুণ হেড কোনোরকমে ঠেকিয়ে স্বাগতিকদের বিপদমুক্ত করেছেন লরিস। কিন্তু ১০৯ মিনিটের সময় লরিস আর পারেননি। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া এদারের জোরালো শট ফ্রান্সের গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে ঢুকে গেছে জালে। বাকি সময়ে গোলটা ধরে রেখে ইউরোপ জয়ের উৎসবে মেতে উঠেছে পর্তুগাল।
ঘরের মাঠে ফ্রান্স সবসময়ই দুর্ধর্ষ। এই ফাইনালের আগে নিজেদের মাটিতে গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে টানা ১৮টি ম্যাচ অপরাজিত ছিল তারা। এর মধ্যে জিতেছিল ১৬টি ম্যাচেই। পর্তুগালের বিপক্ষেও ফ্রান্সের ঈর্ষণীয় সাফল্য। ‘মেজর’ বা বড় টুর্নামেন্টে আগের তিনটি মুখোমুখি লড়াইয়েই জয় পেয়েছিল ফরাসীরা। তিনটি জয়ই এসেছিল সেমিফাইনালে—১৯৮৪ ইউরো, ২০০০ ইউরো আর ২০০৬ বিশ্বকাপে। সব মিলিয়ে পর্তুগালের বিপক্ষে আগের ১০টি ম্যাচেই জয় পেয়েছিল ফ্রান্স। তবে রোববার রাতে এসব গৌরবোজ্জ্বল পরিসংখ্যান কোনো কাজে আসেনি ‘লা ব্লুজ’-এর। ফরাসীদের হতাশার সাগরে ডুবিয়ে পর্তুগাল এখন ইউরোপ জয়ের উল্লাসে মত্ত।
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস