ভারত থেকে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টিতে তিস্তার পানি বেড়েছে। বর্তমানে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। এতে জেলার পাঁচ উপজেলার ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে লালমনিরহাট-সান্তাহার রেলপথের প্রায় অর্ধকিলোমিটার রেললাইন। এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়েই চলছে ট্রেন। পানি ওঠায় বন্ধ রয়েছে ১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার।
এরআগে রোববার সকাল ৯টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
তিস্তায় পানি বেড়ে পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়েছে। নিম্ন ও চরাঞ্চলে ডুবে গেছে বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট। প্লাবিত হয়েছে পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউনিয়নের রমনীগঞ্জ, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউনিয়নের পাটিকাপাড়া,হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, গোবর্ধন, বাহাদুরপাড়া, কালমাটি, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, বড়বাড়ি,রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা এলাকার নিম্ন ও চরাঞ্চল। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২০ হাজার পরিবার।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের রতিপুর এলাকায় প্রায় অর্ধকিলোমিটার রেললাইন পানিতে তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়েই চলছে ট্রেন। পানির স্রোতে রেললাইন থেকে পাথর সরে যাওয়ায় বিকেলে লাইনে মাটি ভর্তিবস্তা ফেলার কাজ শুরু করেছে লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার জানান, জেলার দুই উপজেলার ১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ওঠায় পাঠদান বন্ধ। এরমধ্যে সদর উপজেলার ১১টি এবং আদিতমারী উপজেলার আটটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
সরেজমিননে দেখা যায়, গবাদি পশু-পাখি নিয়ে উঁচু স্থানে অবস্থান নিয়েছেন বন্যার্তরা। অনেকেই উঁচু স্থানে চুলা জ্বালিয়ে রান্নার কাজ সারছেন। নলকূপ, টয়লেটে পানি ওঠায় বিশুদ্ধ পানি সংকট ও স্যানিটেশন সমস্যায় পড়েছেন তারা।
তিস্তাপাড়ের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত রাতে আমরা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। ঘর দুয়ারে পানি প্রবেশ করেছে। চলাচলের রাস্তাও ডুবে গেছে। খুব কষ্টে রাস্তায় আশ্রয় নিছি।’
বন্যার্ত পরিবারগুলোর মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক জিয়া।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার রায় জানান, বর্তমানে দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে রংপুর বিভাগের তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি গত দুদিনে সমতলে বেড়েছে। সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক রকিব হায়দার বলেন, জেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে প্লাবিত লোকজনের তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে বন্যার্তদের সহায়তা করা হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএকে