রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স, ঢাকা চত্বরে নির্মিত হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু গ্যালারি’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিস্মরণীয় অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতেই এই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে। ১৫ আগস্ট ২০২১ জাতীয় শোক দিবসে দেশের সবচেয়ে বড় এই ফটো গ্যালারিটি’র উদ্ধোধন করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, এমপি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির মদদে ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বিপথগামী কতিপয় সেনা সদস্য সপরিবারে হত্যা করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম এবং দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।
বঙ্গবন্ধুুকে হত্যার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের যে ক্ষতি হয়েছে, জাতি হিসেবে আমরা আজ পর্যন্ত তা পূরণ করতে পারিনি, ভবিষ্যতেও পারব না। বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ছিল, স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ার, অঙ্গীকার ছিল গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠন অর্থাৎ ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। পররাষ্ট্রনীতি ছিল সকলের প্রতি বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বিদ্বেষ ভাব নয়। বঙ্গবন্ধুর এই আদর্শকে সামনে রেখেই রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স, ঢাকা চত্বরে নির্মাণ করা হয় “বঙ্গবন্ধু গ্যালারি”।
প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এই রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স, ঢাকা চত্বরে আসেন জমি সংক্রান্ত কাজের জন্য। এমন একটি জনবহুল স্থানে ‘বঙ্গবন্ধু গ্যালারি’ নির্মাণ হওয়ায় এখানে আগতদের দৃষ্টিগোচর যেমন হবে, তেমনি এখানে আগতরা শ্রদ্ধাভরে বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনকে স্মরণ করতে পারবেন। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের যারা এখানে আসবেন তারা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারবেন।
গ্যালারিটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে, এখানে প্রবেশ করলেই একনজরেই আঁচ করা যাবে বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ, আর বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়, শিক্ষা জীবন, রাজনৈতিক জীবন, ভাষা আন্দোলনে তার অবদান, ৬ দফা দাবি, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক আগরতলা মামলা, ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ‘৭০ এর নির্বাচনী বিজয়, ‘৭১ এর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ ফেরার নানা চিত্র গ্যালারিতে রয়েছে।
রেজিস্ট্রেশন ভবনে নির্মিত সুবিশাল বঙ্গবন্ধু গ্যালারির উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে আবেগাপ্লুত কন্ঠে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সেদিন বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সচক্ষে দেখতে না পাওয়া প্রজন্ম ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারবেন বঙ্গবন্ধুর সাদামাটা লাইফ স্টাইলের ছবি দেখে, এতো বড় মহান নেতা, অথচ অতি সাধারণ তাঁর চলাফেরা। “বঙ্গবন্ধু গ্যালারি”র সামনে দাঁড়িয়ে আইনমন্ত্রী দৃঢ় অঙ্গীকার করেন, “১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড রায় কার্যকর পুরোপুরি সম্পন্ন করতে কমিশন গঠন করা হবে। ঘাতক ৫ পলাতক আসামীকে দেশে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত আমরা, আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশের জনগণ ক্ষান্ত হবে না।” তিনি আরও বলেন, সময়ের পরিক্রমায় বছর ঘুরে বছর আসবে, তবে ভবিষ্যতে যতোদিন এই রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স বেঁচে থাকবে, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা শেখ মুজিবকে নিয়ে নির্মিত এই বঙ্গবন্ধু গ্যালারি ততদিনই টিকে থাকবে।
মূলত ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার সাবিকুন নাহারের নিরলস প্রচেষ্টায়ই রেজিষ্ট্রেশন কমপ্লেক্সে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু গ্যালারীটি। এ ব্যপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অসংখ্য মানুষ এই রেজিষ্ট্রেশন কমপ্লেক্সে আসেন। তারা বঙ্গবন্ধুকে দেখে প্রতিনিয়ত স্মরণ করুক, এই মহান নেতার জন্যই আজকের এই বাংলাদেশ।
সাবিকুন নাহার আরও বলেন, শেখ মুজিব বা বঙ্গবন্ধু, ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ভারত বিভাজন আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেন। শুরুতে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি, এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্বায়শাসন অর্জনের প্রয়াস এবং পরবর্তীকালে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত হওয়ায় তাকে বাংলাদেশের “জাতির জনক” বা “জাতির পিতা” উপাধি দেওয়া হয়। এছাড়াও তাকে প্রাচীন বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বলা হয়। জনসাধারণের কাছে তিনি “শেখ মুজিব” বা “শেখ সাহেব” নামে এবং তার উপাধি “বঙ্গবন্ধু” হিসেবেই অধিক পরিচিত।
সাবিকুন নাহার বলেন, এমন একজন মহান ব্যক্তির ছবি দেখে, তার বাণী পড়ে মানুষ তাকে বুঝতে পারবেন এজন্যই আমরা রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স, ঢাকা চত্বরে নির্মাণ করেছি “বঙ্গবন্ধু গ্যালারি”। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দেশপ্রেম বর্তমান প্রজন্মকে অনেক বেশি আকৃষ্ট করবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন আর্কাইভ থেকে বঙ্গবন্ধুর এসব ছবি সংগ্রহ করেছি। এমন একটি মহতি কাজের জন্য সম্মতি প্রদান এবং গ্যালারিটির উদ্ধোধন করায় আইনমন্ত্রীর প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু গ্যালারিটি আরও সমৃদ্ধ করতে কনফারেন্স রুম পর্যন্ত এটি সম্প্রসারিত করা হবে। তিনি বলেন, এই রেজিষ্ট্রেশন কমপ্লেক্সে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারি বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও আবেগতারিত হয়েই এমন মহতি উদ্যোগ নিয়েছেন। এজন্য তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
গ্যালারিটি সম্পর্কে সাব-রেজিস্টার মো: রমজান খানের কাছে জানতে চাইলে বলেন, বঙ্গবন্ধু একজন মহানায়ক হয়েও সাদাসিধা জীবন যাপন করতেন। তিনি ভালবাসতেন বাংলাদেশ, বাঙালি, বাংলার নিপীড়িত জনগোষ্টিকে। আমরা যারা এই প্রজন্মে জন্মগ্রহণ করেছি, আমরা তাকে এভাবে দেখিনি। আমরা শুনেছি, ইতিহাস থেকে দেখেছি। কিন্ত ইতিাসকে লালন করার মত প্রক্রিয়া যদিও আছে, তবে সেরকম স্বতস্ফূর্ততা চোখে পরেনি। তখন আমার মাঝে বিশেষ করে আমার জেলা রেজিস্টার সাবিকুন নাহার আমাকে উদ্ভুদ্ধ করলেন যে একটা গ্যালারি করতে হবে। তখন আমি চিন্তা করলাম বঙ্গবন্ধুর গৌরবউজ্জ্বল ইতিহাস- খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠা, তার রাজনৈতিক জীবন, স্বাধীনতার আন্দোলন, একজন সফল স্বপ্নদ্রষ্টা এবং সফল রাষ্ট্রনায়ক হয়ে উঠার বিষয়গুলোকে নিয়ে রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স, ঢাকা চত্বরে “বঙ্গবন্ধু গ্যালারি” নির্মাণ করবো। যাতে করে নতুন প্রজন্মের জন্য তাকে জানা এবং তাকে বুঝাটা আরও সহজ ও স্বতস্ফূর্ত হয়। এ লক্ষকে সামনে রেখেই একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছি- নতুন প্রজন্মের একজন অফিসার হিসাবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি