প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, হাইকোর্টে বর্তমানে ২০১৪ সাল ও তার পরে পাঠানো ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলছে। গত ৭ এপ্রিল পর্যন্ত হাইকোর্ট বিভাগে ৭১১টি ডেথ রেফারেন্স বিচারাধীন। এর মধ্যে রুপা হত্যা মামলাও রয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে হাইকোর্টে রুপা হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন হতে আরো কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলাটি বিচারের জন্য হাইকোর্ট বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেওয়ার এখতিয়ার প্রধান বিচারপতির রয়েছে। প্রধান বিচারপতি চাইলে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হতে পারে। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হাইকোর্টে বিচার সম্পন্ন করার নজিরও রয়েছে।
মামলাটি কী পর্যায়ে রয়েছে তা জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল কর্মকর্তা ব্যারিস্টার সাইফুর রহমান বলেন, সংশ্লিষ্ট শাখায় খোঁজ নিয়ে সর্বশেষ তথ্য জানতে হবে। এর আগে কিছু বলা যাবে না।
রুপা হত্যা মামলায় গত বছর ১২ ফেব্রুয়ারি চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর এই মৃত্যুদণ্ডের রায় অনুমোদনের জন্য একই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। সেই থেকে মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন। নিয়ম অনুসারে কোনো মামলায় নিম্ন আদালত কোনো আসামিকে ফাঁসির রায় দিলে তা হাইকোর্টের অনুমোদন নিয়ে কার্যকর করতে হয়। এ কারণে নিম্ন আদালত থেকে রায় অনুমোদনের জন্য মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়, যা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে পরিচিত।
রুপা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলো ছোঁয়া পরিবহনের বাসের চালক হাবিবুর, হেলপার শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীর। এ ছাড়া সুপারভাইজর সফর আলীকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি বাসটি ক্ষতিগ্রস্ত রুপার পরিবারকে দিতে বলা হয়।
‘দ্রুত রায় কার্যকর না করায় বারবার ঘটছে গণধর্ষণের ঘটনা’
তাড়াশ-রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ‘রুপা হত্যার রায় দ্রুত কার্যকর না করায় বারবার ঘটছে গণধর্ষণের ঘটনা। বিলম্বিত বিচারের কারণে ধর্ষিতার পরিবারগুলো একদিকে যেমন আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি ধর্ষকরা উৎসাহিত হচ্ছে। ফলে মা-বোনেরা আজ নিরাপত্তাহীনতায়। ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্রে, এমনকি চলন্ত যানবাহনেও রেহাই পাচ্ছে না তারা।’
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে চলন্ত বাসে নার্স শাহিনূর আক্তার তানিয়া গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় গতকাল সকালে তাড়াশে কাছে এমন প্রতিক্রিয়া জানান টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর হত্যার শিকার জাকিয়া সুলতানা রুপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা দ্রুততম সময়ে ১৭১ দিন পর টাঙ্গাইল অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ প্রথম আদালতে মামলার রায় ঘোষণায় সন্তুষ্ট হয়েছিলাম। কিন্তু উচ্চ আদালতে আসামিপক্ষের আপিলের পর মামলাটি গত ১৪ মাসেও শুনানি না হওয়ায় আমার পরিবার হতাশ। তা ছাড়া আদালত আর্থিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে ছোঁয়া পরিবহনের ওই বাসটি রুপার পরিবারকে দেওয়ার আদেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি। তিনি আরো বলেন, ‘বিচারের সর্বশেষ পর্যায়ে যেতে কত দিন সময় লাগবে তা আমাদের জানা নেই।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা শেষে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ী গ্রামের মৃত জেলহক প্রাং-এর মেয়ে মেধাবী ছাত্রী রুপাকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ করে হত্যা করে পরিবহন শ্রমিকরা। পরে তাঁকে মধুপুর উপজেলায় পঁচিশ মাইল এলাকায় বনের মধ্যে ফেলে রেখে যায়।
বাংলা৭১নিউজ/এলএ.এফ