বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনকে (আরসিবিসি) ১৬০ কোটি টাকা (দুই কোটি ১০ লাখ ডলার) জরিমানা দিতে হচ্ছে। এই অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থের প্রায় এক চতুর্থাংশ। তবে এই অর্থ বাংলাদেশকে দেয়া হবে কি না সে বিষয়টি পরিষ্কার নয়।
এদিকে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতেরতে রিজার্ভের চুরি যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ম্যানিলায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ।
আজ শুক্রবার এই শাস্তির কথা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে ফিলিপাইনের সিনেট কমিটির শুনানির সময় রিজার্ভ চুরির অন্যতম হোতা ক্যাসিনো জাঙ্কেট অপারেটর কিম অং দেড় কোটি ডলার ফেরত দেন। এ অর্থ এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রয়েছে।
তদারকি সংস্থা হিসাবে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জালিয়াতির জন্য রিজাল ব্যাংককে এই জরিমানা করলো। ফিলিপাইনের ইতিহাসে কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকে এতো বিপুল অংকের জরিমানা এটাই প্রথম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ঘোষণার পর রিজাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, এক বছরের মধ্যে দুই ধাপে তারা জরিমানার এই অর্থ পরিশোধ করবে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিনিধিদল চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে এখন ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় অবস্থান করছে। আজ শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ম্যানিলায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ বলেছেন, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতেরতে রিজার্ভের চুরি যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
ম্যানিলায় অবস্থানরত বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে তারা দেড় কোটি ডলার ফেরত পেতে যাচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে ভুয়া নির্দেশনা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার রিজাল ব্যাংকে পাঠানো হয়।পরে অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে এই অর্থ কেসিনোর মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা হয়।
হ্যাকাররা পরিকল্পিতভাবে পাঁচটি অনুমোদিত সুইফট বার্তার মাধ্যমে নিউইয়র্ক ফেডের হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে ফেলে। এর মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকে। আর ২ কোটি ডলার গেছে শ্রীলঙ্কার প্যান এশিয়ান ব্যাংকিংয়ে।শ্রীলংকার টাকা ফেরত আসলেও ফিলিপাইনে নিয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত পেতে দেনদরবার চলছে।
আরও ৮৫ কোটি ডলার স্থানান্তরের নির্দেশনা আটকে দেওয়া হয়। জালিয়াতি বুঝতে পরে ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ফেড, ব্যাংক অব নিউইয়র্ক মেলোন, সিটিগ্রুপ, ওয়েলস ফার্গো, ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংক ও শ্রীলঙ্কার প্যান এশিয়ান ব্যাংকের কাছে অর্থের লেনদেন বন্ধের বার্তা পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই বার্তা অগ্রাহ্য করে রিজাল ব্যাংকের মাকাতি শহরের রিজাল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখার হিসাব থেকে অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে অর্থ সরিয়ে নেয়া হয়।
চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি টিম বর্তমানে ফিলিপাইনে অবস্থান করছেন।তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, রিজার্ভ চুরির ১৫ মিলিয়ন ডলার (১২০কোটি টাকা) সহসাই ফেরত পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।অর্থ ফেরত পাওয়ার শেষ পর্যায়ে আছি আমরা।
ফিলিপাইনের ক্যাসিনো জাঙ্কেট অপারেটর কিম অং এই অর্থ ফেরত দেয়। এই অর্থ ফিরিয়ে দিতে ফিলিপাইনের নিম্ন আদালত সম্মতি দিয়েছেন সম্প্রতি।
ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের (এএমএলসি) নির্বাহী পরিচালক জুলিয়া বাক আবাদ জানিয়েছেন ফিলিপাইনের নিম্ন আদালত অর্থ ফেরতের সম্মতি দিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ সরকার ওই টাকার দাবি নিয়ে আদালতে গেলে এবং আদালত তাতে সম্মতি দিলে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রক্ষিত ওই অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএম