স্বৈরাচার আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন মো. রাশেদ খান। এরইমধ্যে নুর-রাশেদের নেতৃত্বে নতুন দল হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। নতুন দল হিসেবে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানকে ঝিনাইদহ-২ সংসদীয় এলাকায় জনসংযোগ ও সাংগঠনিক কাজে সহযোগিতা করতে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি-সম্পাদককে নির্দেশ দিয়ে ২২ অক্টোবর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এই চিঠি দেওয়া হয়।
চিঠির একটি অনুলিপি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসার পর শুরু হয় আলোচনার ঝড়। আলোচনা ওঠে আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন গণঅধিকারের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। এতে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
তবে ঝিনাইদহের ছেলে রাশেদ খান বলছেন, চিঠি দিয়ে গণঅধিকারের কর্মসূচিতে সহযোগিতা দেওয়া রাজনৈতিক সহাবস্থানের একটি উত্তম দৃষ্টান্ত। তাছাড়া এটা বিএনপির একান্তই দলীয় সিদ্ধান্ত। আমরা আমাদের মতো লড়াই সংগ্রাম করে যাচ্ছি।
জনগণ যদি চায় গণঅধিকার পরিষদকে নেতৃত্বের জায়গায় রাখতে সেটা জনগণের সিদ্ধান্ত। এটা নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের ক্ষোভ দেখানোর কিছু নেই। আমরা দেশের উন্নয়নে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই।
এদিকে চিঠির বিষয়ে ক্ষোভ জানালেও বিএনপির বেশিরভাগ নেতা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন বলে উল্লেখ করেন।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে দলকে সুসংগঠিত করে রেখেছেন জেলা বিএনপির নেতারা। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ফলে খারাপ সময়ে যারা দলের হাল ধরে ছিলেন তারাই দল থেকে মনোনয়ন পাবেন।
জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর লেখা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
তার সংসদীয় এলাকায় ঝিনাইদহ-২ আসনে জনসংযোগ ও তার দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য আপনাদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় এলাকার থানা, উপজেলা বা পৌরসভায় বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিষয়টি অবহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
চিঠি নিয়ে ঝিনাইদহের বিএনপির সব স্তরের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে মন্তব্য করে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসিফ ইকবাল বলেন, এই নির্দেশনায় বিএনপি থেকে রাশেদ খানকে মনোনয়ন অথবা আসন ছেড়ে দেওয়া হবে বা হয়েছে এমন কোনো কথা বলা হয়নি। এটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু মানুষ বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে মাত্র।
জেলা যুবদলের সভাপতি আহসান হাবিব বলেন, ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকুন্ডু উপজেলার বিএনপির নেতা-কর্মীদের শেষ আশ্রয়স্থল যে নেতা আমরা সংসদে তাকেই দেখতে চাই।
গণঅধিকার পরিষদের ঝিনাইদহ জেলার প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ বাবু বলেন, আমরা দলীয়ভাবে চেয়েছিলাম রাশেদ ভাই ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে নির্বাচন করুক। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।
এরইমধ্যে বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে আমাদের সহযোগিতা করার জন্য যে চিঠি দিয়েছে এতে আমরা খুশি এবং সাধুবাদ জানাই। তবে এ বিষয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো ক্ষোভ তৈরি হয়েছে এটা আমাদের জানা নেই। চিঠি নিয়ে এখানে ক্ষোভ বা দ্বন্দ্বের কিছু নেই। আমরা একসঙ্গে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে চাই।
জেলা বিএনপির সভাপতি এমএ মজিদ বলেন, চিঠি নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এটি নির্বাচনী কোনো চিঠি নয়, দলীয় কাজ করার ক্ষেত্রে রাশেদ খানকে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। গণঅধিকার পরিষদ নতুন দল হিসেবে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা বিপত্তি আসতে পারে। এজন্য তাদের সহযোগিতার জন্য দল থেকে বলা হয়েছে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান জানান, আমি মনে করি যুগপৎ আন্দোলনের সারথি যেসব দলগুলো ছিল তাদের প্রত্যেকেরই ভূমিকা আছে। কেউ কাউকে কটাক্ষ করা বা সমালোচনা করা রাজনৈতিক অঙ্গনে সমীচীন হবে না।
আমরা একে অপরের বিরুদ্ধে লেগে থাকি তাহলে পতিত স্বৈরাচারদের সুযোগ তৈরি হবে। আমাদের কথা হলো আমরা বন্ধুত্বসুলভভাবে সবাইকে সঙ্গে নিয়েই দেশের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। আমাদের দাবি জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত করা। জাতীয় সরকার না হলে এদেশের কোনো পরিবর্তন হবে না।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ