ইউক্রেন আক্রমণের জেরে রাশিয়ার তেল, গ্যাস, কয়লা আমদানিতে সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত তাদের নিতে হয়েছে অনেকটা এককভাবেই। রুশ জ্বালানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ইউরোপের পক্ষে নিকট ভবিষ্যতে এমন কিছু করা সম্ভব হবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আরেক মিত্র ভারতও বলেছে, রাশিয়া থেকে তারা ছাড় পাওয়া দামে তেল কিনবে। তার জন্য তোড়জোড়ও শুরু করেছে দেশটির রাষ্ট্রায়াত্ত তেল কোম্পানিগুলো।
বুধবার (১৬ মার্চ) সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে কম দামে প্রচুর পরিমাণে অপরিশোধিত তেল কিনতে প্রস্তুত হচ্ছে ভারতের রাষ্ট্রয়াত্ত তেল কোম্পানি ইন্ডিয়ান অয়েল, বিপিসিএল, এইচপিসিএল এবং এমআরপিএল। রুশ তেল আমদানির মাধ্যমে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে চাপের পাশাপাশি দামও কমে আসবে বলে আশা করছে তারা।
খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে রুশ তেলের জন্য বিমা, জাহাজ এবং মূল্য পরিশোধের বিষয়ে নিশ্চয়তা পেলে দুই-একদিনের মধ্যেই আমদানির ব্যবস্থা নেবে ভারতীয় কোম্পানিগুলো।
ভারত ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুই দেশের বেসরকারি ব্যাংক ও করপোরেট নির্বাহীরা কয়েকদিন ধরে তেল আমদানির জন্য নিরাপদ ট্রানজেকশন নিয়ে কাজ করছেন। মূল্য পরিশোধের জন্য তেল কোম্পানি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে আলোচনা করছে।
তাদের মতে, এই মুহূর্তে রুশ তেল আমদানিতে নিরাপদ ট্রানজেকশনই সবচেয়ে বড় বাধা। তবে রুশ তেলের জন্য রাশিয়ার বাইরের কোনো সত্ত্বার কাছে (ভিনদেশি ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠান) অর্থ পাঠানো অতটা সমস্যার হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া রাশিয়ার জ্বালানি খাতে আর কেউ নিষেধাজ্ঞা না দিলেও অর্থদাতা ও বিমাকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার ভয়ে তারা রাশিয়ার তেল-গ্যাসে হাত দিতে চাচ্ছেন না। সেগুলো পরিবহনের জন্য আজকাল জাহাজ পাওয়াও দুষ্কর হয়ে উঠেছে। যদিও তেলের দাম কমলে জাহাজ পাওয়া আরও সহজ হওয়ার কথা।
যুক্তরাষ্ট্র নিজে নিষেধাজ্ঞা দিলেও ভারত যদি রাশিয়ার কাছ থেকে কম দামে তেল কেনে, তাতে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে। এতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জেন সাকি। তবে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে, সবার সেটি মেনে চলা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
গত ১৫ মার্চ নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র বলেছেন, সব দেশের প্রতি আমাদের বার্তা একই। আমরা যেসব নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি ও সুপারিশ করেছি, তা মেনে চলুন। এদিন জেন সাকিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভারত যদি ডিসকাউন্টে রাশিয়া থেকে তেল কেনে তাহলে কী হবে? জবাবে তিনি বলেন, আমার মনে হয় না, এটি নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এ কর্মকর্তা বলেন, তবে এটাও ভাবা দরকার, ইতিহাসের বইতে বর্তমান সময় নিয়ে যা লেখা হবে, সেখানে আপনারা কোন পাশে থাকতে চান? রাশিয়ার নেতৃত্বকে সমর্থন করার অর্থ, তাদের আগ্রাসনকে সমর্থন করা। এর প্রতিক্রিয়া অবশ্যই ভয়ংকর।
তবে ভারতের তেল শিল্প সংশ্লিষ্ট এক নির্বাহী বলেছেন, ভারতীয় তেল পরিশোধকদের নিজেদের স্বার্থই আগে দেখা উচিত। তার প্রশ্ন, ইউরোপ যদি রাশিয়া থেকে এত জ্বালানি কিনতে পারে, তাহলে ভারত কেন নয়?
বাংলা৭১নিউজ/এমকে