বাংলা৭১নিউজ, রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক ছাত্রীকে হলের সামনে থেকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ওই ছাত্রীর সহপাঠীরা তার সন্ধানের দাবিতে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ‘শোভা কোথায় জানা নাই, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আট ঘণ্টা চলে গেল, শোভা কোথায় ফিরিয়ে দাও’ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
এ ছাড়া তারা ‘ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নাই’, ‘প্রশাসন চুপ কেন?’ এসব প্ল্যাকার্ডও ধারণ করেন।
অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘আমরা সবাই প্রাপ্তবয়স্ক। আমাদের ইচ্ছার বাহিরে বাবাও জোর করে ক্যাম্পাস থেকে তুলে নিতে পারেন না। অথচ তার সাবেক স্বামী কীভাবে ক্যাম্পাস থেকে তুলে নিয়ে যায়। অপহরণের আট ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে কিন্তু এখনও প্রশাসন তার সন্ধান জানাতে পারেনি।’
শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।
পরে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবদুস সোবহান বাসভবন থেকে বেরিয়ে আসেন।
তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের আন্দোলন স্থগিত করতে বলেন।
উপাচার্য শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘এটি তাদের স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার। স্বামী তার স্ত্রীকে নিয়ে গেছে। অন্যায় হলে সেটি আইন দেখবে। এখানে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
তিনি আরও বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাক হয়েছে। কিন্তু আইনত সেটি কার্যকর হতে তিন মাস সময় লাগবে। এখনও তিন মাস সময় পূরণ না হওয়ায় তালাক কার্যকর হয়নি। আমি জানতে পেরেছি তালাক হওয়ার পরও তার স্বামী ক্যাম্পাসে এসে তার সঙ্গে দেখা করত।
বিষয়টি ইতোমধ্যে ওই ছাত্রীর এলাকার পুলিশকেও জানানো হয়েছে বলে জানান ভিসি।
উপাচার্য ওই ছাত্রীকে দ্রুত সময়ের মধ্যে খুঁজে বের করার আশ্বাস দিলেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।
পরে উপাচার্য ব্যর্থ হয়ে তার বাসভবনে ফিরে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাবকে জানিয়েছি। তারা খোঁজখবর নিয়ে দেখছেন। ওই ছাত্রীকে খুঁজে বের করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’
আন্দোলনের একপর্যায়ে ওই ছাত্রীর বাবা ও চাচা ঘটনাস্থলে আসেন। তারা উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার বাসভবনে প্রবেশ করেন।
উপাচার্যের সঙ্গে প্রায় আধাঘণ্টা কথা বলে বেরিয়ে এসে প্রশাসনের পদক্ষেপের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে ওই ছাত্রীর বাবা শিক্ষার্থীদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে জানিয়েছে- তারা সব জায়গায় খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
তিনি বলেন, ‘আমি এখনও জানি না আমার মেয়ে কোন জায়গায়, কী অবস্থায় আছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবার কাছে আমার অনুরোধ- আমার মেয়ে যেন অক্ষতভাবে ফিরে আসে। সবাই আপনারা সহযোগিতা করেন মেয়েটি যেন জীবিত পাই, যেন উধাও না হয়ে যায়।’
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের সামনে থেকে মাইক্রোবাসে ওই ছাত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাংলা বিভাগের স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি তাপসী রাবেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তার বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার মাতাজি এলাকায়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত তার সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জানান, শুক্রবার সকালে ভুক্তভোগীসহ তার তিন সহপাঠী স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে হল থেকে বের হন।
‘এ সময় বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা হলের সামনে সাদা মাইক্রোবাসে তার সাবেক স্বামী সোহেল রানাসহ ৫-৬ যুবক তার পথরোধ করে জোরপূর্বক তাকে তুলে নিয়ে যায়।’
বাংলা৭১নিউজ/জেএস