অবশেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রাত ১০টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন তিনি। এ উপলক্ষ্যে ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির দেওয়া বিশেষ সুবিধা সংবলিত কাতার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ছয় চিকিৎসক, নার্স, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১৫ জন এই সফরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকছেন।
যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাবেন বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৭ বছর পর মা ও ছেলের দেখা হচ্ছে। হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সরাসরি খালেদা জিয়াকে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হবে।
লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকরা সুপারিশ করলে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস ইউনিভার্সিটি হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হবে। তবে চিকিৎসা শেষে খালেদা জিয়া কবে দেশে ফিরতে পারবেন-এ বিষয়ে চিকিৎসকরা কোনো তথ্য জানাতে পারেননি।
এ কারণে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে একধরনের দুশ্চিন্তা ভর করেছে। তবে চিকিৎসা শেষে ওমরাহ পালন শেষে দেশে ফেরার কথা রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার। ৭৯ বছর বয়সি খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যাসহ নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় দীর্ঘদিন ভুগছেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন তিনি। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সাজা ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। তখন থেকে ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
গুলশানে বাসায় থাকলেও বেশির ভাগ সময়ই তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে। উন্নত চিকিৎসায় তাকে বিদেশে নেওয়ার জন্য অন্তত সাতবার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলেও তাতে সাড়া দেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে এভারকেয়ার হাসপাতালে তার হৃদ্যন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়।
এছাড়া সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর হার্টে তিনটি ব্লক ছিল। একটিতে রিং পরানো হয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে খালেদা জিয়ার রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। এবার সরাসরি চিকিৎসার সুযোগ তৈরি হলো।
জানা যায়, আজ রাত ৮টায় খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন। বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনবিষয়ক কার্যাদি সম্পন্ন করে রাত ১০টায় যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে যাত্রা করবেন।
এ উপলক্ষ্যে সোমবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি। এতে বিএনপির চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, এ মুহূর্তে যেসব ফরমালিটি আছে, সেগুলো সম্পন্ন করে মঙ্গলবার রাত ১০টায় কাতারের আমিরের স্পেশাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ম্যাডাম ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-দোহা এবং দোহা-লন্ডনের হিথ্রো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন।
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা জেনে রাজকীয় বহরের এ বিশেষ বিমান দিয়েছেন। এ তথ্য জানিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি সোমবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। এ বিমানেই ম্যাডামের রাতে লন্ডনযাত্রা শুরু হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ