বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: লোকসভায় পাশের পর এবার রাজ্যসভায় পেশ হল তিন তালাক বিল (মুসলিম উইমেন প্রোটেকশন বিল ২০১৭)। এই বিল আটকে দিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর দাবিতে সরব বিরোধীরা। আগেই হুইপ জারি করেছিল কংগ্রেস। সিলেক্ট কমিটিতে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর পর বিলটি পাশ করানোর দাবি তুলেছে তৃণমূল। বিল পেশের পরই বিরোধীদের হই হট্টগোলে দুপুর দু’টো পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে যায় অধিবেশন। রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই সরকার পক্ষের। তাই আবারও বিলের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের তিন তালাক প্রথাকে (তিন বার তালাক বলে বিবাহবিচ্ছেদ) ‘স্বেচ্ছাচার’ মন্তব্য করে সংসদে আইন তৈরির কথা বলে সুপ্রিম কোর্ট। সেই মতো লোকসভায় ইতিমধ্যেই পাশ হয়েছে এই বিল। এর পর রাজ্যসভায় পাশ হলেতা রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। তাঁর সই হলেই তৈরি হয়ে যাবে আইন।
কিন্তু রাজ্যসভায় আগেও ঠোক্কর খেয়েছে তিন তালাক বিল। বিরোধীদের দাবিতে বেশ কিছু সংশোধনী এনে নতুন করে পেশ হয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের দাবি, সব সংশোধনী যোগ করা হয়নি। নয়া বিলে তিন তালাককে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানার সংস্থান রয়েছে। পাশাপাশি ওই সময়ে স্ত্রীর খোরপোষের ভারও নিতে হবে স্বামীকে।
বিলের এই অংশ নিয়েই আপত্তি কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের। তাঁদের বক্তব্য, বিবাহ সংক্রান্ত বিষয় দেওয়ানি মামলার অন্তর্ভূক্ত। অন্যান্য সব ধর্মেও সেই নিয়মই কার্যকর। সেখানে শুধুমাত্র মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য তিন তালাককে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা আইন এবং সংবিধান বিরোধী। আবার নয়া বিলে কারাদণ্ডের সময়ও স্ত্রীর খোরপোষের দায়িত্ব স্বামীকে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, স্বামী যদি জেলেই থাকে, তাহলে স্ত্রীর খোরপোষ এবং দেখভাল করবেন কীভাবে?
অন্য দিকে সরকার পক্ষের যুক্তি, সুপ্রিম কোর্ট বলে দিয়েছে সংসদে আইন তৈরি করতে। কিন্তু বিরোধীরা তা মানতে চাইছে না। যদিও কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধী সাংসদদের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট কখনই তিন তালাককে ফৌজদারি অপরাধ বা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করার কথা বলেনি। তৃণমূলের পক্ষ থেকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠিয়ে সংশোধন করে তার পর আনার প্রস্তাব পেশ করা হয়।
এই বিল মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ বলেও অভিযোগ বিরোধীদের। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের দাবি, তিন তালাক বিল কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রতি লক্ষ্য করে নয়। বরং দেশের কোটি কোটি মহিলার সুরক্ষার কথা ভেবেই তৈরি করা হয়েছে। বিরোধীদের সমর্থনও চেয়েছেন তিনি।
এই আবহেই কংগ্রেস সব সাংসদকে হাজির থাকতে বলে হুইপ জারি করেছিল। রাজ্যসভায় বিল পেশ হতেই হই হট্টগোল জুড়ে দেন বিরোধীরা। তার জেরে জন্য অধিবেশন শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই দুপুর দু’টো পর্যন্ত মুলতুবি করে দেন চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু।
সূত্র:আনন্দবাজার পত্রিকা/বাংলা৭১নিউজ