রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলী: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলাসহ বরেন্দ্র অঞ্চল জুড়ে চলছে এখন রবিসশ্যর ভরা মৌসুম। রবিসশ্যের অন্যতম ফসল হচ্ছে গম। মাঠে মাঠে গমের সবুজ আর সোনালী রং ধরেছে। গমের শীষ বাতাসে দুলছে, এ যেন এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। সে সাথে বাতাসে দুলছে কৃষকের মন। সূর্যের ঝিলিক পড়ার সাথে সাথে পুরো মাঠ সোনার রংঙে রঙিন হয়ে উঠছে। ফাল্গুন মাসের আধাআধি পেরুতেই বরেন্দ্র অঞ্চলে জুড়ে গমসহ সকল প্রকার রবিসশ্য কাটা-মাড়ার মহা উৎসব শুরু হয়েছে। চলবে পুরো চৈত্র মাস পর্যন্ত।
অনুকুল আবহাওয়া থাকায় অন্য সব বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে মাঠে মাঠে গমের শীষ ভাল রয়েছে। সে কারণে এবার গমের বাম্পার ফলন হচ্ছে, সে সাথে বাজারে দামও ভাল আছে। রাজশাহীতে গতবারের চেয়ে এবারে গমের আবাদ বেশী হয়েছে। কৃষিশ্রমিকেরা এখন সোনালী ফসল ঘরে তোলা নিয়ে দিন রাত মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিবছর সরকারীভাবে গম কেনা হলেও সেটা কৃষকের ভাগ্যে জুটেনা একশ্রেণীর প্রভাবশালী দালালগণ কৃষক সেজে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বাজার থেকে নিন্মমানের গম ক্রয় করে খাদ্য গুদামগুলি ভর্তি করার ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। ফলে কৃষকের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট কৃষকদের দাবী যেন তার সরকারী খাদ্য গুদামে গম বিক্রি করতে পারেন সে ব্যবস্থা করে দেয়া।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে গম চাষ হয়েছে ২৬ হাজার ৫৬১ হেক্টর। গতবছর আবাদ হয়েছিল ২৫ হাজার ২৩০ হেক্টরে। এবারে আবাদ বেশী হয়েছে ১ হাজার ৩৩১ হেক্টর। যার মধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলায় সবচেয়ে বেশী গমের আবাদ হয়েছে। এই উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে। এরপরে বাঘা উপজেলা আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৬৬০ হেক্টর এবং চারঘাট উপজেলায় ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও পবা উপজেলায় ২ হাজার ২৫০ হেক্টর, বাগমারা ১ হাজার ৫৪০ হেক্টরসহ অন্যান্য উপজেলায় হয়েছে ৫ হাজার ২৭১ হেক্টর জমিতে।
গোদাগাড়ী পৌরসভার কৃষক শামসুল ইসলাম বলেন, এবার গমের বম্পার ফলন পাচ্ছি, কিন্তু সরকারী খাদ্য গুদামে কোন বার গম দিতে পারি না, প্রভাবশালীরা কৃষক সেজে কিংবা গরীব কৃষকদের নিকট থেকে কৃষি কাড ৫শ থেকে ৭শ টাকায় কিনে খাদ্য গুদামে অবাদে ধান গম দিয়ে থাকেন এটা বন্ধ করে প্রকৃত কৃষকগণ যেন ধান গম দিতে পারেন সে ব্যবস্থা করা।
গোদাগাড়ী উপজেলা চাদন্দালায় গ্রামের কৃষক তসিকুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে ১২ বিঘা জমিতে গম চাষাবাদ করেছেন। গম কাটা- শুরু করেছেন তিনি। গমের মাথা ভাল থাকায় অন্য বছরের চেয়ে ফলন বেড়েছে। প্রতি বিঘাতে ১২ থেকে ১৫ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ গম বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুরুল হক জানান, নানা রোগ বালাইয়ের কারণে এ অঞ্চলে গমের আবাদ কমে গিয়েছিল। তবে, গত বছর থেকে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বরেন্দ্র অঞ্চলে গমের আবাদ বেড়েছে। গমের মাথা ভাল থাকায় ফলন ভাল হচ্ছে। আশা করছি এবার গমে কৃষক লাভবান হবেন।
ভুক্তভোগী, সচেতন কৃষকগন প্রধান মন্ত্রী, কৃষি মন্ত্রী, কৃষি সচিবের নিকট আকুল আবেদন করেছেন যেন তারা সরকারী খাদ্যগুদামে গম দিতে পারেন ব্যবস্থা করেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ