বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: রাজধানীর কুর্মিটোলার এয়ারপোর্ট রোডে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে আজও রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভকালে ব্যাপক ভাংচুর করার পাশাপাশি একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে তারা।
জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় দুই ছাত্র নিহতের ঘটনায় মঙ্গলবার সকাল থেকেই উত্তরা বিএনএস সেন্টারের সামনে জড়ো হয় উত্তরার মাইলস্টোন কলেজ,উত্তরা হাইস্কুল, টঙ্গী সরকারি কলেজ, বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ, উত্তরা কমার্স কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এ সময় বারবার রাস্তায় ব্যারিকেড দিতে চাইলে পুলিশি বাধায় ব্যর্থ হয়। দফায় দফায় বিএনএস সেন্টারের সামনে হাউস বিল্ডিং নর্থ টাওয়ারের সামনে এবং আইডিয়ালের সামনে তারা রাস্তা অবরোধ করতে চেষ্টা করে।
দুপুরের দিকে জসিমউদ্দিন রোড থেকে র্যাব-১ কার্যালয় পর্যন্ত মহাসড়কের দুই সাইড অবরোধ করে হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এ সময় প্রায় অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে এবং বুশরা পরিবহনের একটি দূরপাল্লার বাসসহ দুটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা।
এর পর বিকালে আরও একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা। এসময় ছাত্রদের বাধায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসতে পারেনি। ফলে বাসের আগুন না নিভিয়ে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
বিকাল ৪টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হাজার হাজার ছাত্ররা রাস্তা অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে এ সময় পুলিশের পাশাপাশি র্যাব মোতায়েন করা হয়। এ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই ধারে কয়েক কিলোমিটার যানজট তৈরি হয়।
সকাল সাড়ে ১০টায় ফার্মগেটে প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঘণ্টাব্যাপী এ অবরোধে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে তাদের দফায় দফায় অনুরোধ করে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়।
তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম জানান, নতুন করে যেন কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সে জন্য ছাত্রদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
দুপুর ১২টায় কলেজের সামনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ীতে দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছেন। এসময় শিক্ষার্থীরা নিরাপদে বাড়ি ফেরার জন্য নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। এ সময় তারা চারটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এতে ১০ যাত্রী আহত হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। পরে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে গেছে।
এদিকে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় বিক্ষোভ করেছে ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা হিমাচল পরিবহনের একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ এসে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
অন্যদিকে মতিঝিল শাপলা চত্বর এলাকা দখলে নেয় নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা এখনো সেখানে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেন।
এছাড়া রাজধানীর খিলক্ষেত ও বাড্ডা এলাকায় শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করতে চাইলে পুলিশ তা করতে দেয়নি।
কাকরাইলে প্রতিবাদে নামে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা সড়কে অবস্থান নেওয়ার ফলে মালিবাগ, মৌচাক, পল্টন, বাংলামটর, শাহবাগ, প্রেসক্লাব, বিজয়নগর, শান্তিনগর, সড়কে অন্তত দুই ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। উত্তরায়ও রাস্তায় অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার রাজধানীর কুর্মিটোলার এয়ারপোর্ট রোডে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। তারা আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের সামনে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়েছিল।নিহত শিক্ষার্থীরা হলো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী দিয়া খানম মীম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম।
এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল নিহত দুই শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে বাসচাপার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ