বাংলা৭১নিউজ, এম.নাজিম উদ্দিন,পটুয়াখালী প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস প্রবণ ৮ টি চরে কোন ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নেই। ভাঙা ও নরবরে কুড়ের ঘরকে অবলম্বন করে চরম ঝুকিপূর্ন অবসস্থায় বসবাস করছেন উপজেলার চরকাশেম, চরলতা, চরকাউখালী, চরইমারশন, চরনজির, চরতোজাম্মেল, চরকানকুনি, চরকলাগাছিয়া এলাকার হাজার ও মানুষ।
বিগত ৪০ বছরের মধ্যে এ এলাকায় প্রতি বছরই ছোট-বড়, মাঝারি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস আঘাত হেনেছে। সেসব স্মৃতি এখন চরবাসীর কাছে এক বিভীষিকাময় দূঃস্বপ্ন। ২০০৭ সালের ১৫ই নভেম্বর রাতে ঘূর্ণিঝর সিডর এর আঘাতে এসব চরের ঘর হারা হয়েছে প্রায় শত ভাগ মানুষ। গবাদি পশুর জন্য এ চর হয়েছিল মৃত্যুপরি। প্রতিবছরই মে, জুন, জুলাই মাসে এবং অক্টোবার ও নভেম্বর মাসে বঙ্গপসাগরে সৃষ্ট নিম্ন চাপের কারনে যে ঘূর্ণিঝর সৃষ্টি হয় তাহা এসব চরের আঘাত হানে।
তখন চর বাসি জানমাল নিয়ে কোথায় আশ্রয় নিতে পারে না। ঝড়াজির্ণ ও নরবড়ে কুরে ঘর-ই তখন হয় তাদের একমাত্র আশ্রয় কেন্দ্র। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় এ দ্বীপের জন্ম। প্রায় ৩ হাজার একর আয়তনের দ্বীপটিতে দেড় শতাধিক পরিবারের বসবাস। এখানে নেই কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে গড়ে ওঠেনি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র। আকাশে মেঘ দেখলে আতঙ্কে থাকেন পুরো দ্বীপের লোকজন। বর্ষা মৌসুমে প্রায়ই তারা পানিবন্ধি হয়ে পড়ে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ আর কোন ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় বছরের পর বছর ধরে এভাবেই বসবাস করে আসছে বাসিন্দারা। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ১৯৪০ সালের দিকে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে প্রায় তিন হাজার একর জমি নিয়ে এ দ্বীপের উত্থান ঘটে।
পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, কোনে বুড়াগৌড়াঙ্গ নদী আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত চরকাসেম দ্বীপ রাঙ্গাবালী ইউনয়িনের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থান। গত ৩৫-৪০ বছরে ভূমিহীনসহ নানা শ্রেণী পেশার প্রায় ২ শতাধিক পরিবার বসতি গড়ে তোলে। সদর ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় একটি ছোট খেয়া নৌকার ওপর নির্ভর করতে হয় এখানকার লোকজনের। বর্ষার মৌসুমে নদী উত্তাল থাকলে এক সপ্তাহের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও সদর ইউনিয়নে আসার সুযোগ থাকে না দ্বীপ বাসিন্দাদের।
চরকাসমেরে বাসিন্দা হাওয়া বেগম বলেন, ‘ঝড় তুফানে আমাগো এইহানে (এখানে) থাকতে হয়। সিডর, আইলা বইন্যারকালে পোলাপান লইয়া কেওড়া গাছে আছিলাম।’ উপজেলার কাউখালী চরের আরেক বাসিন্দা চম্পা বেগম বলেন, ‘ চরে কোন ওয়াপদা নাই, জোয়ারের পানিতে আমাগো বাড়ীঘর তলাইয়া যায়। আর বইন্যা (বন্যা) অইলে আমাগো সিদ্ধাতের (দুর্ভোগের) আর শ্যাষ নাই।’ এ দ্বীপে প্রায় সাড়ে ৭’শত লোকের বসবাস রয়েছে। এদের মধ্যে ভোটার সংখ্যা রয়েছে ১৫০ জন। কিন্তু তাদের জন্য নেই কোন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাধ, নেই ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র। এমনকি বিশুদ্ধ পানির জন্য নেই গভীর নলকূপ। ফলে সেখানকার লোকজন দুর্যোগ মোকাবেলা এখনো রয়েছে অপ্রস্তুত। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমের পাঁচ-ছয় মাস প্রকৃতির বিরূপ আচরণের সাথে এক রকম যুদ্ধ করে তাদের টিকে থাকতে হচ্ছে। আমবস্যা-পূর্ণিমার সময়ে নদী-সাগরের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বেড়ে গেলে গোটা দ্বীপ প্লাবিত হয়ে যায়।
জোয়ারের পানিতে ভেসে যায় বাসিন্দাদের সহায় সম্বল। আকাশের কালো মেঘের ভয়েই যেন মনের মধ্যে বয়ে যায় দুর্যোগের আতঙ্ক। ঝড় আসলেই নিয়তি নির্ভর ছাড়া কোন উপায় খুঁজে পায় না তারা। শুধু চরকাশেম নয়, উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের চরলতা, ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কাউখালী, চরইমারশন, চরনজির, চর তোজাম্মেল, রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন চরকানকুনি, চরকলাগাছিয়াও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নেই। জানা গেছে, চরলতায় সাড়ে ৭শত লোক এর মধ্যে ভোটার সংখ্যা রয়েছে ২০৩ জন, চরইমারশনে মোট জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৫শত এদের মধ্যে ভোটার সংখ্যা ১৯৬ জন, কাউখালীচরে মোট জনসংখ্যা ৬ শত মোট ভোটার সংখ্যা ২০৮ জন ও চরনজির জনসংখ্যা ৮শত মোট ভোটার সংখ্যা ২১০ ও চরকানকুনিতে মোট জনসংখ্যা প্রায় ১ হাজার এদের মধ্যে ভোটার সংখ্যা ৫৫০ জন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম সগির বলেন, যে সমস্ত চরে স্কুল নেই সেগুলোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আগে প্রজেক্ট (প্রকল্প) ছিল না। এখন এক হাজার স্কুলের প্রজেক্ট ছাড়ছে। ওই প্রজেক্টে ওইসব চরে স্কুল হবে বলে আশা করা যায়।
এ ব্যাপারে উপজলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) তপন কুমার ঘোষ বলেন, ওইসব চরাঞ্চলে কোন সরকারী কিংবা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় আমরা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র দিতে পারিনি। যদি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয় তবে আমরা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের জন্য দ্রুত প্রস্তাব পাঠাবো।
রাঙ্গাবালী উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন বলেন, দুর্যোগ মৌসুমে ওইসব চরাঞ্চলে মানুষের ঝুঁকিতে রয়েছে। অনেক জায়গায় আশ্রয়কেন্দ্র নেই, আবার কোথায় বেঁড়িবাধ নেই। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস