মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান যুদ্ধে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছেন রোহিঙ্গারা। এ যুদ্ধে বাড়িঘর, সন্তান ও পরিবার পরিজন হারিয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাখাইন থেকে উখিয়া ও টেকনাফে পালিয়ে আসা নতুন রোহিঙ্গারা।
উখিয়ার থাইংখালি ১৪ নম্বর ক্যাম্পে অস্থায়ীভাবে বসবাসকারী ও রাখাইনের বুচিদং থেকে গত এক সপ্তাহ আগে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা ছৈয়দ হোসেন বলেন, রাখাইনে আমাদের সংসারে অভাব ছিল না, নিজের যা সম্পদ ছিল তা দিয়ে খুব সুন্দরমতো সংসার চলতো।
কিন্তু আরাকান আর্মির নির্যাতন সইতে না পেরে আমার পরিবারসহ আরও অন্যান্য প্রতিবেশী পালিয়ে উখিয়ার থাইংখালিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি। রাখাইনে নেই কোনো চিকিৎসাসেবা, খাবার সংকটও তৈরি হয়েছে। পাহাড়ে পাহাড়ে অবস্থান করে কোনোরকমে পরিবার নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসতে পেরেছি।
মিয়ানমারের বুচিদং থেকে পালিয়ে থাইংখালি ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া জাহাঙ্গীর আলম নামে এক রোহিঙ্গা যুবক বলেন, রাখাইনে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা যুবকদের টার্গেট করে ধরে নিয়ে যেতো, এতে অনেক রোহিঙ্গা যুবক তাদের নির্যাতনে নিহত হয়েছেন। জান্তা বাহিনীর চাইতে বেশি নির্যাতন চালায় আরাকান আর্মি।
রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘর তারা জ্বালিয়ে দিয়েছে। আমি রাখাইনে পড়াশোনা করতাম। রাখাইনে যুদ্ধের কারণে আরাকান আর্মির নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বহু কষ্টে পালিয়ে আসতে পেরেছি। আরাকান আর্মি আমার নিজের ভাইকে ধরে তাদের ক্যাম্পে রেখে দিয়েছে। এখনো তারা ছেড়ে দেয়নি।
নৌকায় নাফনদী পার হয়ে আসা টেকনাফ আলীখালী ক্যাম্পে বসবাসকারী নতুন রোহিঙ্গা ও মংডুর বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সবচাইতে বেশি নির্যাতন চালায় আরাকান আর্মি। আরাকান আর্মি বলছে, রোহিঙ্গাদের নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে আরাকান আর্মিরা নির্দিষ্ট করে ছোট ছোট ঘর তৈরি করবে। ওই ঘরে রোহিঙ্গাদের থাকতে হবে।
উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্পে বসবাসকারী ও আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের সভাপতি ডাক্তার জুবায়ের বলেন, রাখাইনে গত ১১ মাসের চলমান যুদ্ধ থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে উখিয়া ও টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন।
আমরা বিশ্ব রাষ্ট্রের কাছে দাবি জানাচ্ছি নিরাপত্তা ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে নিজ দেশ মিয়ানমারের রাখাইনে ফিরতে। তাই আমরা বিশ্ববাসীর কাছে অনুরোধ করবো রাখাইনে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন ও দমন-পীড়ন চালাচ্ছে সেগুলো বন্ধ করতে।
গত ১৮ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার মন্ত্রী ড. জামব্রি আবদুল কাদিরের সঙ্গে মতবিনিময়কালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে গত কয়েক মাসে নতুন করে ৮০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। একইসঙ্গে তিনি রাখাইনের বাস্তুচ্যুত মানুষদের জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি সেফ জোনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ