রাজধানীর রমনা মডেল থানা কনস্ট্রাকশনের ট্রাক চাপায় ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও বর্তমান থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন দুলাল (৫০) নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার শান্তিনগর মোড়ে ট্রাক চাপায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন নাসির উদ্দিন ও তার স্ত্রী মোসা. ফাতেমা বেগম। গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বুধবার (২৭ জানুয়ারি) ভোরে মারা যান তিনি।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, ঘাতক ট্রাকটি পুরাতন রমনা থানার মাটি বহনকারী পরিবহন হওয়ায় পুলিশ ট্রাক ও এর চালককে গ্রেপ্তার করছে না। ঘটনার দিন একটি ট্রাক আটক করলেও সেটি ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে মো. মনির হোসেন দিপু গত ২৩ তারিখে রমনা মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন।
এ বিষয়ে ডিএমপি’র রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ট্রাকটি জব্ধ করা হয়েছে। তবে চালক পলাতক রয়েছে। ট্রাক জব্ধের কথা বললেও রমনা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় একটি ট্রাক জব্দ করা হলেও সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় সেটি ছেড়ে দেয়া হয়েছে।নিহতের ছেলে মো. মনির হোসেন দিপু জানান, গত বৃহস্পতিবার ভোরে তার বাবা-মা ঢাকা সদরঘাট থেকে সিএনজিযোগে উত্তরা যাচ্ছিলেন। সিএনজিটি ভোর সাড়ে ৫টার দিকে শান্তিনগর মোড়ে পৌঁছালে রাজারবাগ থেকে দ্রুত গতিতে আসা একটি ড্রাম ট্রাক সিএনজিটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়।
ট্রাকটি রমনা পুরাতন থানার মাটি বহনকারী বাহন ছিল। দিপু জানান, ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজিটি কয়েক গজ দূরে আঁচড়ে পড়ে এবং ভেতরে থাকা তার বাবা-মা গুরুতর আহত হন। তাদের প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয় এবং পরে গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তার মাকে গত মঙ্গলবার বাসায় নেয়া হয়। আর লাইফ সাপোর্টে থাকা বাবাকে গতকাল ভোরে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের ছেলের অভিযোগ, যেই ট্রাকের চালক তার বাবা-মাকে আরোহী সিএনজিকে ধাক্কা দিয়েছে, সেটি পুরাতন রমনা থানার মাটি বহনকারী। ট্রাকটি থানা কম্পাউন্ড থেকে মাটি নিয়ে অন্যথ ফেলে রাজারবাগ দিয়ে আসার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটায়। বিষয়টি রমনা থানা পুলিশও জানে। কিন্তু তারা ঘাতক ট্রাক ও এর চালককে আজও পর্যন্ত আটক করছে না। শান্তিনগর মোড়ের চা দোকানি লিটন ও বৃষ্টি নামের দু’জন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ওইদিন তারা মাত্র দোকান খুলছিলেন। এমন সময় রাজারবাগ দিক থেকে আসা হলুদ রঙের একটি ড্রাম ট্রাক সিএনজিটিকে ধাক্কা দেয়। এতে সিএনজিতে থাকা দুজন যাত্রী গুরুতর আহন হন। পরে তারাই আহতদের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নেন। এসময় তারা একই কোম্পানির মাটি বোঝাই অন্য একটি ট্রাক আটক করে পুলিশে সোপার্দ করেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রমনা মডেল থানা কাকরাইল মোড়ে স্থানান্তরের পর পুরাতন থানার জায়গা ৩/৪ বছর ধরে খালি পড়ে আছে। সেখানে নতুন করে ভবন তোলার কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে প্রায় ৪৬টি ড্রাম ট্রাকযোগে ওখানকার মাটি নিয়ে অন্যথ ফেলা হচ্ছে। জানা যায়, ঘটনার দিন ভোরে ঘাতক ট্রাকটি মাটি ফেলে আসার পথে দুর্ঘটনাটি ঘটায়। রমনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর থেকে আমরা ঘাতক ট্রাকটি শনাক্তে সিটিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি।
কিন্তু ট্রাকটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী যেই ট্রাকটি আটক করা হয়েছে, সেটির সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তদন্তে থানা কনস্ট্রাকশনের কাজে ব্যবহ্নত ট্রাক চালকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। এদিকে আজ বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলা৭১নিউজ/এমএস