বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: শ্রীলংকা জুড়ে গির্জা এবং হোটেলে আটটি বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। দ্যা ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১৫ জনে। এদিকে, শ্রীলঙ্কায় ঘটে যাওয়া বর্বরোচিত এই ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ৮ বছর বয়সী নাতি জায়ান চৌধুরী নিহত হয়েছেন। এই ধারাবাহিক বিস্ফোরণে মোট ৩৫ জন বিদেশী নিহত হয়েছেন।
ভয়াবহ এই সন্ত্রাসী হামলায় গোটা শ্রীলঙ্কাজুড়ে বাড়ছে আহাজির। সেই সঙ্গে গোটা বিশ্বও গভীর শোকাহত।আহত হয়েছেন আরও ৫ শতাধিক।আহতদের মধ্যে রয়েছেন শেখ ফজলুল করিম সেলিমের জামাতা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স। তিনি শ্রীলঙ্কার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
দ্যা নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে শ্রীলংকার এই ঘটনাকে রক্তের নদী বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর গতকাল রোববার বিকেলেই ১২ ঘণ্টার কারফিউ জারি করা হয়। বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দেশজুড়ে চলছে তল্লাশি। হামলাকারী সন্দেহে আটক করা হয়েছে সাতজনকে।
শ্রীলংকায় রক্তের নদী
বোরবার সকাল পৌনে ৯টায় থেকে শুরু হয়ে পরপর ছ’বার বোমা বিস্ফোরণ। কেঁপে উঠল তিনটি গির্জা আর তিনটি পাঁচতারা হোটেল। তার ছ’ঘণ্টার মধ্যেই আরও দু’টো। সব মিলিয়ে মোট আটটা বিস্ফোরণে একেবারে তছনছ হয়ে গেল শ্রীলঙ্কার ইস্টার রবিবার।
আট বিস্ফোরণে এখনও পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা অন্তত ২১৫। শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র সচিব রবিনাথ আর্যসিংহে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে অন্তত ৩৫ জন বিদেশি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন পাঁচশোর কাছাকাছি। আহতদের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, আমেরিকা, মরক্কো এবং বাংলাদেশের পর্যটকেরা রয়েছেন।
আপাতত কোনও গোষ্ঠী এই ধারাবাহিক বিস্ফোরণের দায় না-নিলেও সন্দেহভাজন সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গোটা ঘটনায় একটি গোষ্ঠীরই হাত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
দশ বছর আগে, ২০০৯ সালে লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল এলম (এলটিটিই)-এর সঙ্গে ২৬ বছরের গৃহযুদ্ধে দাঁড়ি পড়ে শ্রীলঙ্কায়। তার পরের এক দশক মোটের উপরে শান্তি। ছোট্ট সুন্দর দেশটাকে ফের এ ভাবে বিধ্বস্ত হতে দেখে স্তম্ভিত গোটা বিশ্ব। সব চেয়ে বড় কথা, তীব্র সঙ্কটের দিনগুলোতেও একসঙ্গে এক দিনে এত প্রাণহানি দেখেনি দ্বীপরাষ্ট্রটি। রোববারের আটটি বিস্ফোরণ তাই হিংসার নির্মম নজির হয়ে রইল। তা-ও ইস্টার প্রার্থনার দিনে।
রোববার সকাল পৌনে ৯টা নাগাদ কলম্বোর কোচিকাডের সেন্ট অ্যান্টনিস চার্চ, পশ্চিমের উপকূল শহর নেগোম্বোর সেন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চ, এবং পূর্বের বাত্তিকালোয়া শহরের জ়িওন চার্চে পরপর বিস্ফোরণ ঘটে। তখন সব গির্জাতেই প্রার্থনা চলছিল। আচমকা বিস্ফোরণে সেন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চের ছাদটাই উড়ে যায়। এই ছাদের ভাঙাচোরা কাঠামোর ছবি ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। পরে এই গির্জার ফেসবুক পেজে লেখা হয়, ‘‘আমাদের গির্জায় বিস্ফোরণ ঘটেছে। এখানে এসে দেখুন, যদি আপনাদের স্বজন কেউ থাকেন।’’
প্রথম বিস্ফোরণটি যেখানে ঘটে, সেই সেন্ট অ্যান্টনিস চার্চ অত্যন্ত জনপ্রিয় গির্জা। সেখানে ভিড়ও ছিল অনেকবেশি। বিস্ফোরণের পরে সেখানকার মাটিতে পড়ে আছে শুধু ভাঙা কাঠ আর কাচের টুকরো। দেওয়াল জুড়ে রক্তের ছাপ আর ছিন্নভিন্ন দেহাংশ। সেন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চে প্রাণ হারিয়েছেন ৭৪ জন।
প্রত্যক্ষদর্শী দোকানি এন এ সুমনপালা বলেছেন, ‘‘চোখের সামনে রক্তের স্রোত। বরফের মতো উড়ছে ছাই।’’ ফাদার এডমন্ড তিলকরত্নে জানান, এ দিন অন্তত এক হাজার মানুষ এসেছিলেন গির্জায়। বিস্ফোরণের কিছু ক্ষণ পরেই কলম্বোর সর্বত্র ইস্টার প্রার্থনা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
গির্জার সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরণের খবর আসে কলম্বোর তিনটি অভিজাত হোটেল থেকে। যেখানে বিদেশি নাগরিকদের নিশানা করা খুব সহজ। পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুণশেখর জানিয়েছেন, তিনটি পাঁচতারা হোটেল— শাংগ্রি লা, দ্য সিনামন গ্র্যান্ড হোটেল (এটি আবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভনের কাছেই এবং এখানে আগেও বিস্ফোরণ ঘটেছে), এবং দ্য কিংসবেরি হোটেলে বিস্ফোরণ হয়েছে।
দ্য সিনামন গ্র্যান্ড হোটেলের রেস্তরাঁতে এক আত্মঘাতী বোমারু উড়িয়ে দেয় নিজেকে, প্রাথমিক খবরে তেমনই জানানো হয়েছে। নেগোম্বোর কাটুওয়াপিটিয়ার গির্জায় হামলার ধরন দেখে সেটিও আত্মঘাতী বিস্ফোরণ বলে মনে হচ্ছে পুলিশের।
বাংলা৭১নিউজ/এসবি