রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিআরটিসি বাস কাউন্টারের পাশে সাত তলা ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ভবনটি যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে ফায়ার সার্ভিস। ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় এক ঘণ্টা ধরে উদ্ধার কাজ স্থগিত রয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে সিদ্দিকবাজারের নর্থ-সাউথ রোডের ভবনটিতে ভয়াবহ এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে সাত তলা ভবনের তিন তলা পর্যন্ত পুরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাশের কয়েকটি ভবনও।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ভাষ্যমতে, যে কোনো সময় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভেঙে পড়তে পারে। ভেতরে ভবনের বিম ও কলাম ভেঙে পড়েছে। পাশে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জায়গায় জায়গায় ঝুলে আছে কাচের টুকরো। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পরবর্তী ঝুঁকি এড়াতে ভেঙে যাওয়া ও ঝুলে থাকা কাচের টুকরোগুলো সরিয়ে ফেলছেন, যাতে তা মানুষের ওপর এসে পড়তে না পারে।
উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, এমনভাবে বিস্ফোরণে ভবনটি ধসে পড়েছে যে ভেতরে ঢোকার কোনো অবস্থা নেই। জায়গায় জায়গায় ইট ঝুলে আছে। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেছি। আমরা বের হওয়ার পর আরেকটি টিম ভেতরে ঢুকেছে।
বর্তমানে ওই ভবনটি প্রকৌশলীরা পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা ঝুঁকি পর্যালোচনা করে দেখার পর নিরাপদ মনে হলে উদ্ধার কাজ আবার শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী রাকিবুল।
তিনি বলেন, বিস্ফেরণে ভবনটি নাজুক হয়ে গেছে, কলাম ভেঙে গেছে। প্রকৌশলীরা ঝুঁকি পর্যালোচনা করে দেখছেন। তারা বলার পর নতুন করে উদ্ধার কাজ শুরু হবে।
এরইমধ্যে ওই ভবন থেকে ২২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, আর বাকি ১২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে আহত অবস্থায়। সবশেষ খবর অনুযায়ী বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
আহতের সংখ্যা একশ’ পার হয়ে গেছে। তাদের সবাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা।
বিস্ফোরণের পরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ডিএমপি কমিশনার কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। কোনো নাশকতা থেকে বিস্ফোরণ, নাকি গ্যাস জমে বিস্ফোরণ হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘অনেক সময় মিথেন গ্যাস, এসির গ্যাস বা পয়োঃগ্যাস জমে এমন বিস্ফোরণ হতে পারে। এখন এটা নাশকতা না দুর্ঘটনা তা আমাদের দায়িত্বরত বিশেষজ্ঞ দল তদন্ত শেষ করে বিস্তারিত বলতে পারবেন।’
তিনি জানান, ওই ভবনে যারা আটকে পড়েছিল সবাইকে উদ্ধার করা হয়েছে। হয়তো নিচে এখন দু’চারজন আটকে থাকতে পারে। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, র্যাবের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। চিকিৎসক ও নার্সদের কোনো সংকট নেই। চিকিৎসায় কোন ব্যাঘাত ঘটবে না।
ভবনটি বাণিজ্যিক হওয়ায় ভেতরে অনেক মানুষের আনাগোনা ছিল। হঠাৎ বিস্ফোরণ হওয়ায় অধিকাংশ ভেতরে আটকে পড়েছেন। ইতোমধ্যে অনেককে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ভবনটির ভেতরে আরও কেউ আহত অবস্থায় আটকা পড়ে আছেন কি-না, তা খুঁজে দেখছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
এদিকে, বিস্ফোরণের ভয়াবহতা এত বেশি ছিল যে মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো এলাকা। ভয়াবহ এ বিস্ফোরণের ঘটনায় দেয়াল ভেঙে রাস্তায় এসে পড়েছে। এসময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়কের গাড়িও। হতাহত হয়েছেন বিভিন্ন গাড়ির যাত্রী ও পথচারীরাও।
এরপরই নিরাপত্তার স্বার্থে গুলিস্তান থেকে নর্থ-সাউথ রোড পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে।
উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট। বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থল থেকে আহতদের হাসপাতালে নেয়ার কাজ করছে। এ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ও স্থানীয়রাও উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, সাত তলা ভবনের নিচতলায় একটি স্যানিটারি দোকান। তার ওপরের চারটি ফ্লোরে ব্র্যাক ব্যাংকের অফিস রয়েছে। বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি।
বাংলা৭১নিউজ/এবি