যে কোনো নির্বাচিত সরকারকে অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বারবার নির্বাচনের কথা বলার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আমাকে কেউ ভুল বুঝবেন না। অনেকের প্রশ্ন, আপনি এত নির্বাচন নির্বাচন করেন কেন? বিশেষত ছাত্ররা তো বলেনই। নির্বাচনের কথা বারবার বলার কারণ একটাই। যে কোনো নির্বাচিত সরকার কিন্তু একটি অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আমি জানি না আমার এই বিশ্বাসটা ভুল কি না? নির্বাচিত সরকার হলে আমার এক্সেস থাকে, আমি যেতে পারি, কথা বলতে পারি।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী ও জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের ১২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত গ্রন্থ আড্ডায় যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের এখানে এখন যে অস্থিরতা চলছে এই অবস্থা যদি নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, আমাদের ধৈর্য ধরে পা ফেলতে হবে। এমন কিছু আমরা করবো না, নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আরও বিপদ যেন আমরা ডেকে না আনি। এ বিষয়গুলো আমাদের মনে রাখতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, কখনো ধৈর্য হারাবেন না, আশা হারাবেন না। আমি কেন জানি না, আমাদের প্রত্যাশা অনেক, কিন্তু আমাদের ধৈর্য একেবারেই কম। এই তো মাত্র কয়েকটা মাস হয়েছে। এর মধ্যেই আমরা সব পাগল হয়ে গেছি। আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার অনেক ভুলত্রুটি করছে, ভুলতো করবেই। তারা তো আর সরকারে ছিল না, রাজনীতি করেনি। রাজনীতি বিষয়টা তারা জানেও না, করেওনি। তাদের তো সে সময়টা দিতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে তো কেউ একটা কথা বলার সুযোগও পায়নি, সাহসও পায়নি। এখন যেহেতু একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই পরিবর্তনের পরে আমরা যখন দু-একটা জায়গায় খোঁজখবর নিই, অফিস-আদালতে খোঁজখবর নিই- দেখি ভয়াবহ কাণ্ড, ভয়াবহ দুর্নীতি, চুরি। ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়া আর কোনো চিন্তা নেই সরকারি আমলাদের মধ্যে। এটি বলতে আমি বাধ্য হলাম।
তিনি বলেন, এটির পরিবর্তন একদিনে হবে না, এত দ্রুত হবে না। ধৈর্য ধরেন, স্ট্রাকচার আমরা দাঁড় করাই, একটি গণতান্ত্রিক স্ট্রাকচার দাঁড়াক, সেই স্ট্রাকচার দাঁড়িয়ে গেলে নিশ্চয় আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমানের কৃতিত্বটা ছিল কোন জায়গায়? তার কৃতিত্বটা ছিল- তিনি একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে দেশকে বের করে এনেছিলেন। ওটাই ছিল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় সংস্কার। দেশকে একদলীয় রাজনীতি থেকে বহুদলীয় রাজনীতি, একটি ভ্রান্ত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি থেকে মিক্সড ও মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকে নিয়ে এসেছিলেন।
শিক্ষাব্যবস্থা বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষাখাত একদম শেষ হয়ে গেছে। শিক্ষাব্যবস্থা একদম শেষ। সেটির মধ্যে কোনো কিছু অবশিষ্ট আছে বলে মনে হয় না। প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে একদম ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত সব জায়গায় দেখবেন, শিক্ষার মান এত নিচে নেমে গেছে, এটি বলে বোঝানো যাবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, সারাদেশে এই যে অসংখ্য শিক্ষিত বেকার, এটিই হচ্ছে বড় সমস্যা। এটিকেও আমরা কেউ চিন্তায় আনছি না। আজ সরকার অনেকগুলো সংস্কার কমিশন করেছে, কিন্তু শিক্ষায় কোনো কমিশন করেনি। এটি তো আগে প্রয়োজন ছিল। গোটা সমস্যার মূলে এটিই। শিক্ষাব্যবস্থা যদি ঠিক না হয়, আমার যদি জ্ঞান না থাকে, তাহলে আমি সমাজে কোনো পরিবর্তন আনতে পারবো? নিজের পরিবারের জন্যও কি পরিবর্তন আনতে পারবো?
জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সভাপতি আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে গ্রন্থ আড্ডা সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক জহির দিপ্তী। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মনজুরে এলাহী প্রমুখ।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ