শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
ভাষা শহীদদের পরিবারকে পরিপূর্ণ সম্মান দিতে ব্যর্থ রাষ্ট্র: জামায়াত আমির ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বৈঠক: ঐক্যমত্য হলো না বাজার: বোতলজাত সয়াবিনের সংকট, বেড়েছে লেবুর দাম গণতান্ত্রিক শক্তিকে সার্বক্ষণিক সজাগ থাকতে হবে: তারেক রহমান বাংলাদেশের পক্ষে সেমিফাইনালে ওঠার সমীকরণ ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন দলের নাম ঘোষণা একুশের প্রথম প্রহরে প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আজ হৃদয়ের বীরোচিত সেঞ্চুরিতে ২২৮ রানের পুঁজি বাংলাদেশের সচিবালয়ে প্রবেশে নতুন নীতিমালা উত্তরায় চীনা নাগরিককে হত্যার পর বিদেশ পালালেন সহকর্মীরা অপারেশন ডেভিল হান্টে আরও ৪৯২ জন গ্রেফতার দিনদুপুরে কুপিয়ে টাকা নিল ছিনতাইকারী, অনিশ্চয়তায় শিক্ষাজীবন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার খবর অতিরঞ্জিত : বিজিবি প্রধান সাবেক গভর্নর আতিউর ও অর্থনীতিবিদ বারাকাতের বিরুদ্ধে মামলা ঢাকায় জাকাত মেলা শুরু শনিবার চাকরি হারালেন পুলিশের ৬ কর্মকর্তা অর্থ পাচার: বেনজীর ও তার স্ত্রী-কন্যাদের নামে মামলা এবার ২২ ডিসিকে বাধ্যতামূলক অবসর ৫ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে বাংলাদেশ

যেভাবে উন্নয়ন ঘটতে পারে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের

বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক:
  • আপলোড সময় বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৯ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নানা টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে বেশ কয়েকটি ইস্যুতে দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত অতিসম্প্রতি বাংলাদেশের বাস্তবতা ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করেছে।

তবে শেখ হাসিনার ব্যাপারে ভারতের অবস্থান কতটুকু বদলাবে তা নিয়ে সংশয় আছে বিশ্লেষকদের। অবশ্য তারা মনে করেন, ওই ইস্যুটি বাইরে রেখেও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হতে পারে।

তারা সম্প্রতি ওমানের মাস্কাটে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বৈঠককে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। আর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যৌথ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার আহ্বানকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। 

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এই অর্থনৈতিক কূটনীতি এগিয়ে নিতে পারলে শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কেই নয়, এর বাইরেও সুফল পাওয়া যাবে।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়াকে ঘিরে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে দুদেশের সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়। বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার প্রত্যুত্তরে ভারতের অনড় অবস্থান সম্পর্কে অস্বস্তি আরো বাড়িয়ে দেয়। এই ঘটনায় দুই দেশই রাষ্ট্রদূতকে তলব করে। এর বাইরে সীমান্তহত্যার বিষয়টি তো আছেই। এছাড়া বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভারতের ভিসাও বলতে গেলে বন্ধ আছে।

৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. ইউনূস আগস্টেই নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় নিউইয়র্কে তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে জয়শঙ্করের বৈঠক হয়।

ওটা ছিল ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম বৈঠক। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে তখন দুই দেশ পারস্পরিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সম্মত হয়। 

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ডিসেম্বরে সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকা আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। ১২ ঘণ্টার ওই বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের পরারাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া নয়াদিল্লিতে চারদিনের ৫৫তম বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক এখন চলছে ।

সর্বশেষ গত রোববার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের মধ্যে ওমানের রাজধানী মাস্কাটে ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলন (ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স)-এর ফাঁকে বৈঠক হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উভয়পক্ষ স্বীকার করেছে, প্রতিবেশী দুটি দেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন এবং সেগুলো মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন।

বৈঠকে তৌহিদ হোসেন গঙ্গা নদীর পানি চুক্তির নবায়নের বিষয়ে আলোচনা শুরুর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)-এর স্থায়ী কমিটির বৈঠক আহ্বানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং এ বিষয়ে ভারতের সমর্থন চান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে সীমান্ত সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় সমাধানের ব্যাপারে উভয়পক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। তারা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়েও মতবিনিময় করেন বলে জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এদিকে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বিমসটেকে প্রফেসর ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদি একই অনুষ্ঠানস্থলে থাকবেন। আমার জানা মতে, অন্যান্য দেশের সরকারপ্রধানেরাও থাকবেন। যদি তারা সেখানে থাকেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই পরস্পরের সঙ্গে কথা বলবেন। কারণ, এটা একটি ছোট গ্রুপ। উদাহরণস্বরূপ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে সাত দেশের প্রত্যেক রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেন। তাই আমার মনে হয়, এরকম কিছু ঘটতে পারে।

তবে এই বৈঠকের সম্ভাবনা এখনো যোগাযোগের পর্যায়েই রয়েছে। ৪ এপ্রিল ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনে ড. ইউনূস এবং নরেন্দ্র মোদি দুজনই যোগ দিচ্ছেন।

এদিকে ড. ইউনূস রোববার ঢাকায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সম্মেলনে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান- এই চার দেশ মিলে একটি যৌথ অর্থনীতি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। 

তিনি মনে করেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে যৌথ অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারলে এই চার দেশ লাভবান হবে। ইতিমধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির মনে করেন, সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হচ্ছে। ভারত মনে হচ্ছে বাংলাদেশের বাস্তবতা কিছুটা হলেও বুঝতে চেষ্টা করছে। তবে ওরা ওদের স্বার্থের কথা চিন্তা করেই কাজ করবে। ওদের ইন্টারন্যাল পলিটিক্স আছে, ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স আছে।

শেখ হাসিনা ইস্যুতে তিনি বলেন, এখানে আসলে দুই দেশই যার যার অবস্থানে আছে। তারপরও সম্পর্ক যতদূর বাড়ানো যায়, ততই ভালো। তৌহিদ সাহেব সার্কের কথা বলেছেন। জয়শঙ্কর বিমসটেকের কথা বলেছেন। ফলে অঞ্চলিক সম্পর্কের অগ্রগতির জায়গা আপতত দেখছি না। দ্বিপাক্ষিক অগ্রগতি হয়তো একটু হচ্ছে।

তিনি বলছেন, ড. ইউনূস চারদেশের যে অর্থনীতির জোটের কথা বলেছেন সেটা নতুন কিছু নয়। ২০১৫ সালে তো বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ইন্ডিয়া, নেপাল ইনিশিয়েটিভ) সই হলো। তার তো কোনো বাস্তবায়ন দেখছি না। ইউনূস সাহেবের আইডিয়াটা ভালো। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করে কাজে লাগানো কতটা সম্ভব সেটাই আসল কথা।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম মনে করেন, ড. ইউনূস যে চারটি দেশের কথা বলেছেন, তাদের মধ্যে কালচারেল, ভৌগলিক এবং পরিবেশগত কিছু মিল এবং একতা আছে। ওইসব দেশে আমাদের পণ্যের যেমন চাহিদা আছে, তাদের পণ্যের চাহিদাও আমাদের দেশে আছে। একটা ‘অর্থনৈতিক হাব’ করে বিনিয়োগ করলে দেশগুলো তুলনামূলক সুবিধা পাবে। তাতে সবাই লাভবান হবে। 

এই অধ্যাপক আরও বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এখন সম্পর্কের যে টানাপোড়েন চলছে, তাতে এই উদ্যোগ নিয়ে এগোলে সম্পর্কেরও উন্নতি হতে পারে। অর্থনৈতিক কূটনীতির এই দিকটি আঞ্চলিক সম্পর্কেরও উন্নয়ন ঘটাতে পারে। আমরা মনে হয়, এখন অর্থনীতি নিয়ে এগোনোই ভালো।

আর সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) মো. শহীদুল হক মনে করেন, তৌহিদ হোসেন ও জয়শঙ্করের যে বৈঠক হলো, তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এবং আলোচনার ইস্যু আমার কাছে ইতিবাচক মনে হয়েছে। 

আবার ভারতীয় অ্যানালিস্ট ও জরিপ বলছে, ৫০ ভাগের বেশি ভারতীয় চায় না যে, শেখ হাসিনা সেখানে থাকুক। আর ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে তাদের কোনো আউটকাম আছে বলে আমার মনে হয় না। এগুলো ভারতকে বাংলাদেশের বাস্তবতা বুঝতে সহায়তা করছে বলে আমার মনে হচ্ছে। এর ফলে, সম্পর্কের ইতিবাচক দিক তৈরি হতে পারে।

আর ভারতের শেখ হানিাকে নিয়ে রাজনীতি আছে। তারা হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত দেবে বলে আমি মনে করি না। তবে ভারতের বাস্তবতায় এক পর্যায়ে হয়তো হাসিনাকে তৃতীয় কোনো দেশে তারা পাঠাতে পারে।

তার কথা, ড. ইউনূস যে চার দেশের অর্থনীতির কথা বলছেন, সেটা বাস্তবায়ন করলে ভারতের বড় সমর্থন লাগবে। কারণ, এখানে ভারতই বড় বাধা। আর কোনো দেশ বাধা নয়। ব্যাংককে ইউনূসের সঙ্গে মোদির বৈঠক হবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। হলে এসব বিষয়ে আলোচনা করলে ভালো করবেন।

সূত্র: ডয়চে ভেলে

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৫ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com