বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের মৃত্যুর খবর ছড়ানোর পর এ খবরটি নাকচ করে দিয়েছে দেশটির সরকার। রাশিয়া এবং ইরানের গণমাধ্যমে প্রিন্স সালমানের বেঁচে থাকার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশের পর তার একটি ছবি টুইটারে পোস্ট করেছে রিয়াদ ভিত্তিক সরকারি দৈনিক আল রিয়াদ (জারিদাতুর রিয়াদ)।
বৃহস্পতিবার করা জারিদাতুর রিয়াদের টুইটার পোস্টে বলা হয়, ‘আজকের ছবি’। মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি আয়োজিত বন্ধুত্বপূর্ণ বৈঠকে সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান, বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বিন ঈসা আল খলিফা এবং আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।
সৌদি রাজপরিবারের সদস্য তুর্কি বিন সালমান আল সৌদ এর মালিকানাধীন পত্রিকা আরবনিউজেও একই ছবি পোস্ট করে একথা বলা হয়। তবে এ বিষয়ে অন্য কোনও পত্র্রিকা বা সংবাদ সংস্থা নির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি।
গত মাসে সৌদি রাজপ্রাসাদে গোলাগুলির ঘটনায় মোহাম্মদ বিন সালমান নিহত হয়েছেন- এমন আশঙ্কা করে খবর প্রকাশ করে রাশিয়ায় ‘স্পুতনিক নিউজ’, ইরানের ‘ফার্স নিউজ’ ও ‘প্রেস টিভি’।
এসব প্রতিবেদনে নির্ভরযোগ্য কোনও সূত্রের কথা উল্লেখ না করলেও বেশ কিছু ধারণার ভিত্তিতে সৌদি যুবরাজ নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়।
ইরানের গণমাধ্যমগুলো তাদের প্রতিবেদনে দাবি করে, ‘গত ২১ এপ্রিল রিয়াদের রাজপ্রাসাদে একটি অভ্যুত্থানচেষ্টা হয়। সেখানেই গোলাগুলি চলার সময় সৌদির প্রভাবশালী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
ফার্সি ভাষায় প্রকাশিত কাইহান পত্রিকা দাবি করে, ‘অজ্ঞাত একটি আরব দেশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কাছে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে যুবরাজ নিহত হওয়ার খবরটি পাঠানো হয়েছে।’
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ‘২১ এপ্রিল সৌদির রাজপ্রাসাদে হামলার সময় যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের শরীরে দুটি বুলেট আঘাত হানে। তিনি হয়তো মারা গিয়েছেন। কারণ ওই ঘটনার পর যুবরাজকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।’
ইরানের ফার্স নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২১ এপ্রিল রিয়াদের রাজপ্রাসাদ থেকে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা গিয়েছে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে তখন রিয়াদে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের বিমানঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়।’
২০১৫ সালে বাবা সালমান বিন আব্দুল আজিজ ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান। এরপরই ইয়েমেন যুদ্ধে জড়ায় সৌদি আরব। ২০১৭ সালে তাকে পরবর্তী রাজা (ক্রাউন প্রিন্স) ঘোষণা করা হয়। এরপরই মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্যও তাঁর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাও প্রকাশ করেন, যা ভিশন ২০৩০ নামে পরিচিত। এরই মধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে ৩৫ হাজার কোটি ডলারের চুক্তি করে সৌদি। যার মধ্যে ১১ কোটি ডলারের অস্ত্র কেনা হবে।
সংস্কারের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যেই যুবরাজের ইচ্ছায় সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতিসংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়। নারীদের মাঠে গিয়ে খেলা দেখার অনুমতিও দেয়া হয়েছে। শুধু ত-ই নয়, বছরের শুরু থেকেই বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র উপভোগের জন্য সিনেমা হল নির্মাণও করেছে দেশটি। উন্নত বিশ্বের মতো পার্ক, সি বিচ করার পরিকল্পনাও আছে। এদিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধেও অভিযান শুরু করেন ক্রাউন প্রিন্স। দুর্নীতির অভিযোগে ১১ প্রিন্সসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেককে গ্রেপ্তার করে শত কোটি ডলার আদায় করা হয়। অনেকেই অভিযোগ করেন, ক্ষমতা সুসংহত করতেই চেষ্টা করছেন যুবরাজ। এসব কারণে ঘরে বাইরে আলোচিত-সমালোচিত হন প্রিন্স মোহাম্মদ। আর ইরানিদের চক্ষুশূলে পরিণত হন। ইরানি মিডিয়া সৌদিকে ছোট করার জন্য যে কোনো খবরই লুফে নেয়।
২১ এপ্রিল রাতের ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি ভিডিওতে রিয়াদে বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের প্রাসাদকে ঘিরে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। এরপর খবরে দাবি করা হয়, সৌদি বাদশা ও তার সন্তান যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের নিরাপত্তায় তাদের বিমানঘাঁটির একটি বাঙ্কারে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রেস টিভিতে বলা হয়, ওই ঘটনার পর থেকে সৌদি কর্তৃপক্ষ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কোনো ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করেনি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এপ্রিলের শেষের দিকে যখন সৌদি সফরে যান তখনও যুবরাজকে কোনো ছবিতে দেখা যায়নি।
যদিও খবরে বলা হয়, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু সৌদির বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইরের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ছবি ছাড়া কোনো ছবি প্রকাশিত হয়নি।
প্রেস টিভির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, যুবরাজকে প্রায়শই গণমাধ্যমে দেখা যায়। কিন্তু গত ২৭ দিন আগে রিয়াদে হামলার পর থেকে তিনি গণমাধ্যমে একেবারেই অনুপস্থিত। দীর্ঘ দিন অদৃশ্য থাকায় যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের পরিণতি নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়।
কিছু সূত্র দাবি করেছে, সৌদি রাজপরিবারের যেসব সদস্য বাদশা সালমানের বিরোধী তারাই ২১ এপ্রিল হামলা চালিয়েছে।
এসব গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর মোহাম্মাদ বিন সালমান সম্পর্কে কোনও কথা না জানিয়ে শুধুমাত্র এই ছবিটি প্রকাশ করে টুইট করে জারিদাতুর রিয়াদ ও খবর দেয় আরব নিউজ।
বাংলা৭১নিউজ/বিকে