বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস কারও অজানা নয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অভিজ্ঞতা থেকে লেখকরা গল্প, কবিতা এবং উপন্যাস লিখেছেন। শিল্পীরা গান গেয়েছেন। নির্মাতারা চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কিংবা ইতিহাসের ছায়া অবলম্বনে ঢালিউডে অনেক ছবি নির্মিত হয়েছে।
সাধারণত মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে বিশেষ কিছু গল্পের পাশাপাশি নির্যাতন নিপীড়ন এবং মুক্তির দৃশ্য দেখানো হয়। অনেকেই আছেন এ ধরনের ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে তারা যেন মুক্তিযুদ্ধেই অংশগ্রহণ করছেন এমন অনুভূতি নিয়েই মুগ্ধ থাকেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটে যাওয়া ঘটনাই কারও কারও চরিত্রে ফুটে ওঠে।
মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে অভিনয় করা তেমনই এক অভিনেত্রী ববিতা। তিনিই সর্বাধিক মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে অভিনয় করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে অভিনয়ের অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে এ অভিনেত্রী বলেন, ‘আসলে আমি তো অভিনয়শিল্পী। গল্পের চরিত্রে আমাকে অভিনয় করতে হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে মনে হয়েছিল নিজেই যেন যুদ্ধে নেমেছি। নিজেই প্রতিবাদী হয়েছি, আবার নির্যাতিত হয়েছি।
কেননা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপরই কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করি। এতে পরিবেশ, ক্যামেরার ফ্রেম নিয়ে তেমন সমস্যা পোহাতে হয়নি। তবে ৮০ দশকের পর মুক্তিযুদ্ধের ছবি নির্মাণে পরিবেশ নিয়ে একটু সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। এখন তো অনেক উন্নত হয়েছি আমরা। তবুও এখন নানা রকম সমস্যায় পড়তে হয় মুক্তিযুদ্ধের ছবি নির্মাণ করতে। আমাদের সময়ের নির্মাতারা খুব যত্ন নিয়ে ছবির চরিত্রগুলো সাজিয়েছেন।’
মুক্তিযুদ্ধের ছবি যেমন এ সময়ের তরুণদের জন্য ইতিহাস, তেমনই এ ইতিহাসের নানা রকম ঘটনা থেকে নির্মিত ছবিতে অভিনয় করতে পেরে অনেকই নিজেকে গর্বিত মনে করেন। তেমন একজন অভিনেতা চিত্রনায়ক রিয়াজ। মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে অভিনয়ের অভিজ্ঞতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে নির্মিত দুটি ছবিতে অভিনয় করেছি। এতে নানা রকম অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।
‘মেঘের পর মেঘ’ ও ‘শ্যামল ছায়া’ নামে দুটি ছবির চিত্রনাট্য পড়েই অনেক কিছু জেনেছিলাম, যা আগে জানতাম না। সত্যিকারার্থে অভিনয় করতে গিয়ে আমরা যে শুধু দর্শকদের বিনোদিত করি তা নয়। আমরা অনেক কিছু শিখিও। আর এ দুই ছবিতে অভিনয় করে মুক্তিযুদ্ধের নানা বিষয় জেনেছি। মুক্তিযুদ্ধে মানুষের নির্যাতনের দৃশ্য দেখাতে গিয়ে সে রকম চরিত্রে অভিনয় করতে হয়েছে। তখন নিজেই খুব কষ্ট পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধে মানুষ কতটা নির্যাতন সহ্য করেছে! কত কষ্ট করে জীবন পার করেছে! তবে ভালো লেগেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কিছুটা অংশ দর্শকদের দেখানোর জন্য আমি কাজ করতে পেরেছি।’
মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে কাজ করে অনেকেই ইচ্ছা পোষণ করে থাকেন যে আমি যদি মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারতাম। ছবিতে অভিনয় নয় বরং ওই সময় জন্মালে হয়তো বাস্তবজীবন উপলব্ধি করতে পারতাম। মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে অভিনয়ের অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইতেই প্রথমে এমন কথা বলেন জনপ্রিয় অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে যে কোনো একজন মানুষের চরিত্রকে নিজের মধ্যে লালন করেছি এবং তা অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের দেখিয়েছি। এ বিষয়টি আমাকে গর্বিত করে।
মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। প্রথমত অনেক অজানা বিষয় জেনেছি। অনেক শ্রম দিতে হয়েছে। ছবির শুটিং করতে গিয়ে ফ্রেম নিয়ে একটু সমস্যায় তো পড়তে হয়েছে। তবে যত কষ্টই করেছি তাতে আফসোস নেই। দেশের স্বাধীনতা অর্জনের গল্প কিছু হলেও দর্শকদের অভিনয় করে জানাতে পেরেছি। এটাই আমার ভালোলাগা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে খুব ইচ্ছা করছিল, আমি যদি মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারতাম। এতে করে ওই সময়ের বাস্তবজীবন উপলব্ধি করতে পারতাম।’ এ অভিনেতা আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে অভিনয় করা সব অভিনেতা বা শিল্পীদের সুযোগ হয়তো হয় না। আমি সুযোগ পেয়েছি।
ইচ্ছা করে আরও মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে অভিনয় করি।’
কম বয়সে অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী যখন মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে অভিনয় করেন তখন নিজের কাছে অন্যরকম ভালোলাগা অনুভূত হয়। কম বয়স হলেও মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে অভিনয় করে নিজেকে একজন যোদ্ধাই মনে করেন চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা। মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধের গল্পের কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছি। দুটি ছবিতেই আমি মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। মুক্তিযুদ্ধের গল্পে মায়ের চরিত্রে দর্শক আমাকে দেখেছে। বিষয়টি অন্যরকম।
তবে এসব ছবিতে অভিনয় করতে অনকে কষ্ট করতে হয়েছে। ছবিতে আমাকে যেমন নির্যাতিতা, ফেরারি এবং সবসময় শঙ্কিত থাকা চরিত্রে দেখা গেছে, তেমনই শুটিং শুরুর আগে এসব চরিত্র কীভাবে ফুটিয়ে তুলবো সেটা নিয়েও চিন্তায় থাকতাম। তবে ভালোলাগা এই যে, যুদ্ধ না দেখলেও যুদ্ধের ছবিতে অভিনয় করে নিজেকে আমার যোদ্ধা মনে হয়।’
মুক্তিযুদ্ধের গল্প মানেই আটচল্লিশ বছর আগের বা তৎসময়ের গল্পের চরিত্রে অভিনয় করা। এমন গল্পে অভিনয় করার সুযোগও অনেকের হয় না। কেউ কেউ দু-একটি মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে অভিনয় করতে পেরে নিজকে ভাগ্যবান মনে করেন। এমনই এক অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষ। তিনি বলেন, ‘অভিনেত্রী হিসেবে আমি ভাগ্যবান যে, মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের গল্পের একটি চরিত্রে অভিনয় করেছি।
এ সময়ে মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে অভিনয় করা খুব কঠিন বিষয়। কারণ পরিবেশ এখন আগের মতো নেই। সেজন্য সমস্যায় পড়তে হয়েছে। বিদ্যুতের তার, খাম্বা, বড় বড় দালানের জন্য সমস্যায় পড়তে হয়েছে। সংলাপ নিয়েও অনেক সমস্যা হতো। একবার, দু’বার এমনকি কয়েকবার সংলাপ বলতে হতো। বডি ল্যাঙ্গুয়েজের ক্ষেত্রেও অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।
এ বয়সের মেয়ে হয়ে আমাকে আমার ভাবতে হয়েছে সে ১৯৭১ সালের কোনো একটি নারী হিসেবে। তবে কষ্ট করলেও নিজকে গর্বিত মনে হচ্ছে যে, এ যুগের অভিনেত্রী হয়ে আমি মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে অভিনয় করতে পেরেছি।
বাংলা৭১নিউজ/এমআর