দৈনিক যুগান্তরের সাংবাদিক নেসারুল হক খোকনের বিরুদ্ধে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের মালিক আব্দুর রশীদের ‘হয়রানিমূলক মামলা’ ১০ দিনের মধ্যে প্রত্যাহারে আল্টিমেটাম দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। এই মামলা ১০ দিনের মধ্যে প্রত্যাহার না করলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়াসহ কঠিন আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন তারা।
শনিবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি চত্বরে এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় এ আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল বলেন, এ পর্যন্ত যারাই নেসারুল হক খোকনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, সেসব কর্মকর্তারা এখন কারাগারে। সুতরাং সাবধান হয়ে যান; দ্রুত মামলা প্রত্যাহার করুন।
গত ২১ নভেম্বর ‘পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন, কর্ণফুলীর ৭ ড্রেজার নির্মাণে দুর্নীতি’ শিরোনামে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে সেটি সম্পূর্ণই পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের অংশ। এরপরও এ রকম হয়রানিমূলক মামলার পেছনে উদ্দেশ্য রয়েছে।
তিনি বলেন, এ ধরনের বানোয়াট মামলা স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশে বাধা দেওয়ার শামিল। এটাই ঠিকাদার রশীদের শেষ মামলা। অনুসন্ধানী সাংবাদিক খোকনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার করার কি ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে এবার টের পাবেন।
ক্র্যাব সাধারণ সম্পাদক মামুনূর রশীদ বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ যেখানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় তদন্ত প্রতিবেদনে বলেছে, সরবরাহকৃত ৬১৫ কোটি টাকারও বেশি দামে কেনা ৭ ড্রেজার নির্মাণে শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে। কোনো কিছু মানা হয়নি। এমনকি বিদেশি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধান ছাড়াই কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স ড্রেজার তৈরি করায় সেগুলো তুলনামূলক অনেক কম কার্যকরী।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্নীতির সত্যতা মিলেছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৮ জন প্রকল্প পরিচালকের সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আসল অপরাধী ঠিকাদার আব্দুর রশীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো যুগান্তরে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন মিথ্যা, বানোয়াট উল্লেখ করে মামলা দুরভিসন্ধিমূলক।
তিনি আরও বলেন, এই ঠিকাদারের পেছনে কারা? কারা তাকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন। সবাইকে খুঁজে বের করা হবে। অবিলম্বে যদি মামলা প্রত্যাহার করা না হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।
ক্র্যাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম লাভলুর সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নবনির্বাচিত সভাপতি সৈয়দ শুক্কুর আলী শুভ বলেন, যদি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট ও সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ধরে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হতো তাহলে দুর্নীতি কমে যেত , সরকারি অর্থের তছরুপ হতো না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের সরবরাহকৃত চুক্তি বহির্ভূত ৭ ড্রেজার নিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে ঠিকাদার আব্দুর রশীদের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।
ক্র্যাবের সাবেক সভাপতি আবুল খায়ের বলেন, যুগান্তরের প্রতিবেদন ধরে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত ও তদন্তের ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ বলে নেসারুল হক খোকনের বিরুদ্ধে করা মামলা মিথ্যা ও দুরভিসন্ধিমূলক। ঠিকাদার রশীদ সাবধান হয়ে যায় যান। নইলে আপনার পরিণতির জন্য নিজের কর্মই দায়ী থাকবে।
কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন ক্র্যাবের সাবেক সভাপতি ইশারফ হোসেন ইসা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিকু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আরিফ, ডিআরইউর সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ক্র্যাবের সিনিয়র সদস্য জামিউল আহসান সিপু।
এছাড়াও বক্তব্য দেন রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন (র্যাক) এর সভাপতি আহমেদ ফয়েজ। প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনে ক্র্যাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছাড়াও সিনিয়র সদস্য, ডিআরইউর নবনির্বাচিত কার্যনিবাহী কমিটির সদস্য ও ডিআরইউর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ