বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্কে এখন টানটান উত্তেজনা। উভয় দেশই একে অপরকে হুমকিধমকি দেয়া অব্যাহত রেখেছে। এখন দেখার বিষয়, পিয়ংইয়ংকে মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় কি কি অস্ত্র আছে এবং সেগুলো কতটুকুই বা কার্যকর।
প্রশান্ত মহাসাগরের দুই প্রান্তের দুই দেশ উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দূরত্ব ৬ হাজার ৪২৩ মাইল। তা সত্ত্বেও পুরো যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় বলে দাবি পিয়ংইয়ংয়ের। তবে উত্তর কোরিয়াকে আটকাতে বড় ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে ওয়াশিংটনের।
সিবিএস নিউজ জানায়, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে তিন ধাপে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এর মধ্যে রয়েছে কোরীয় উপদ্বীপে স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন, প্রশান্ত মহাসাগরে ক্ষেপণাস্ত্রবিরোধী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত মার্কিন নৌজাহাজ এবং আলাস্কা ও ক্যালিফোর্নিয়াতে দুটি সামরিক ঘাঁটি। গুয়াম দ্বীপেও যুক্তরাষ্ট্রে কৌশলগত সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, যেটা উত্তর কোরিয়ার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু। বিমান ও নৌ- দুই ধরনের বন্দরই রয়েছে এখানে।
ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা : উত্তর কোরিয়ার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রকে আকাশে থাকতেই ধ্বংস করে দিতে (ইন্টারসেপ্ট) রয়েছে ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এর মধ্যে রয়েছে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম)। আলাস্কা ও ক্যালিফোর্নিয়া ঘাঁটিতে মোতায়েন রয়েছে ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ৩৬টি প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র।
থাড ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা : ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে কিছুটা আলাদা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা টার্মিনাল হাই অলটিচুড এরিয়া ডিফেন্স বা থাড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। এ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্বল্প, মাঝারি ও মধ্যবর্তী পাল্লার ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম। এর মাধ্যমে রাডারে বহুদূরের অঞ্চলেও নজরদারি করা যায়। দক্ষিণ কোরিয়ায় সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থাড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা স্থাপন করেছে।
ইজেস ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা : যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে ইজেস ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এটা হল মিসাইল ডিফেন্স এজেন্সির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নৌবাহিনীর অংশ। এ প্রতিরক্ষা জাহাজগুলোয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পতন ঘটানোর প্রযুক্তি না থাকলেও এটি একে শনাক্ত করতে এবং আলাস্কা ও ক্যালিফোর্নিয়ায় দুটি সামরিক ঘাঁটিতে এ সংক্রান্ত তথ্য পাঠাতে সক্ষম। উৎক্ষেপণের কিছু সময়ের মধ্যে আইসিবিএম শনাক্ত করতে সক্ষম নৌবাহিনীর দ্রুতগামী এ যুদ্ধজাহাজগুলো।
মার্কিন সেনাবাহিনী, বিমান ও রণতরী : দক্ষিণ কোরিয়ায় স্থায়ীভাবে ২৮ হাজার ৫০০ মার্কিন সেনা রয়েছে। জাপানে রয়েছে ৫৪ হাজার। এ ছাড়া উত্তর কোরিয়া থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করে দিতে জাপানে মার্কিন নৌবাহিনী দ্রুতগামী যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে। আছে জাপানের ইয়োকোসুকা বন্দরে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস রোনাল্ড রিগান।
বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা : যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে যুদ্ধবিমানের বিশাল বহর। পেন্টাগন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণকারীরা বারবারই আশ্বাস দিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার যেকোনো হামলা ঠেকাতে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশি কার্যকর। কিন্তু গত কয়েক দশকে এ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তেমন কার্যকর প্রমাণিত হয়নি। প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধে ইরাকের ছোড়া স্কাড ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ইসরাইল ও সৌদি আরবকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে সহযোগিতা করে যুক্তরাষ্ট্র। প্রথমে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে ইরাকের ৪১-৪২টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা গেছে। পরে অবশ্য জানা যায়, মাত্র কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্রকে ভূপাতিত করা গিয়েছিল। সম্প্রতি এক হিসাবে দেখা গেছে, এ ক্ষেত্রে সফলতার হার গড়ে অর্ধেক।
যুক্তরাষ্ট্রের সক্ষমতা নিয়ে শঙ্কা : গুয়ামে উত্তর কোরিয়ার হামলার হুমকির পর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের উপদেষ্টা জর্জ চারফোরাস নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর তাদের আস্থা আছে বলে জানান। তিনি বলেন, ‘উত্তর কোরিয়া ধীরে ধীরে তাদের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। কিন্তু আমরা শুধু গুয়াম ও এর চারপাশ নয়, বরং পুরো মার্কিন সাম্রাজ্য রক্ষায় আমাদের সামর্থ্য নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। আমাদের কয়েক ধাপে উপমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।’ কিন্তু র্যাবন্ড কর্পোরেশনের একজন জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ব্রুস বেনেট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে কিনা, এটি শেষমেশ ট্রাম্পের মর্জির ওপর নির্ভর করবে। তিনি বলেন, এটি একটি পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা। আমরা সফলও হতে পারি কিংবা ব্যর্থও হতে পারি। আমরা নিশ্চিত নই। সেলফোন বানানোর সময় যতটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়, এই ক্ষেত্রে তার কিছুই হয়নি। তারপরও দেখা যায়, সেলফোনে আগুন ধরে যায়।’
হাওয়াই প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও ইউএস প্যাসিফিক কমান্ডের জয়েন্ট ইনটেলিজেন্স সেন্টারের সাবেক অপারেশন পরিচালক কার্ল সুস্টার বলেন, ইজেস ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসমৃদ্ধ একটি জাহাজ সম্ভবত দুটি ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করতে পারবে। উত্তর কোরিয়ার কয়েক দফা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে গত মে মাসে মার্কিন সেনারা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা পরীক্ষা চালায়। এরপর জুলাইয়ে কয়েক দফা। পরে অবশ্য জানা যায়, একটি ব্যর্থ হয়েছিল।
সেন্টার ফর আমেরিকান প্রোগ্রেসের জ্যেষ্ঠ ফেলো অ্যাডাম মাউন্ট বলেন, গুয়ামে পিয়ংইয়ংয়ের বারবার হামলার হুমকির বিষয়টি সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা যাচাই করে দেখার একটি কৌশল। সত্যি যুক্তরাষ্ট্রের সেই ক্ষমতা আছে, নাকি ফাঁকা বুলি, তাই দেখতে চাচ্ছে পিয়ংইয়ং। যদি উত্তর কোরিয়া একটি ক্ষেপণাস্ত্রও সফলভাবে মার্কিন ঘাঁটিতে আঘাত হানতে পারে, তবে তা এ রাষ্ট্রটির জন্য বড় বিজয় হবে। যুক্তরাষ্ট্র যদি প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়, তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হবে লজ্জার।
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস