রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
বিপিএলের পর্দা উঠছে আগামীকাল আগামীকাল থেকে ফের শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা গোয়েন্দা সংস্থা সংস্কারের ঘােষণা দিলেন সিরিয়ার নতুন গোয়েন্দা প্রধান ৩১ ডিসেম্বরের ঘোষণাপত্রটি লিখিত দলিল হবে: সারজিস বাস-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ, নারীসহ নিহত ৫ আবারও শাহবাগ অবরোধ করলেন চিকিৎসকরা সচিবালয়ে প্রবেশের অপেক্ষায় শতাধিক সাংবাদিক একদিনে আরও ৩৬ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল ভোটার এলাকা পরিবর্তনে ভোগান্তি কমছে নাগরিকদের নড়াইলের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে দ্যুতি ছড়াচ্ছে হলুদের আভা বেক্সিমকো ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতির কোনো দায় নেবে না সরকার হিন্দু সে‌জে ডাকা‌তির প্রস্তু‌তিকালে নারীসহ গ্রেপ্তার ১০ অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে ২ মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে বাংলাদেশি দম্পতির মৃত্যু তাদের শাস্তি না দিয়ে কী করে সংস্কার করবেন, প্রশ্ন সারজিসের দক্ষিণ কোরিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, ১৮১ আরোহীর ১৭৯ জনই নিহত নুরানী বোর্ডের ফল প্রকাশ, পাসের হার ৮৫.২৫ শতাংশ সচিবালয়ে প্রবেশ পাসের বিশেষ সেল গঠন মাশরাফির জন্য অপেক্ষা করবে সিলেট দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট হতেই হবে : এম সাখাওয়াত ট্রাইব্যুনালে প্রধান অভিযুক্তদের বিচার এক বছরের মধ্যে শেষ হবে

যাদের মতে টুইন টাওয়ার বিমানের আঘাতে ধ্বসে পড়েনি

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
  • ১৪৬ বার পড়া হয়েছে
৯/১১-র সেই আক্রমণ সারা পৃথিবীতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।

বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: এমন অনেক লোক পৃথিবীতে নানা দেশে আছেন, যারা ‘ষড়যন্ত্র-তত্ত্বে’ বিশ্বাসী – তাদের ধারণা: যে ভাবে অনেক বহুলপ্রচারিত ঘটনার কথা লোকে জানেন, আসলে ঘটনাটি সেভাবে ঘটে নি – এর পেছনে অন্য কিছু আছে। এর পক্ষে নানা তথ্য-প্রমাণও তারা হাজির করেন।

সাম্প্রতিক কালের যেসব ঘটনা নিয়ে এরকম ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়েছে তা মধ্যে অন্যতম হলো – যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলা।

সেদিন উগ্র ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীরা চারটি যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাই করে এবং এর দুটি আঘাত করে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভবনে, একটি আঘাত করে ওয়াশিংটনের পেন্টাগনে, এবং আরেকটি পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে বিধ্বস্ত হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার লোক নিহত হয়।

বিচিত্র সব ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ আছে ওই ঘটনা নিয়ে। যেমন: মার্কিন সরকার বা ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা এ হামলার পেছনে ছিল, ওই আক্রমণে কোন ইহুদি মারা যান নি, আসলে কোন বিমান টুইন টাওয়ারে বা পেন্টাগনে আঘাত করে নি – এই রকম নানা কিছু। আরেকটি বড় তত্ত্ব হচ্ছে – ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দুটি টাওয়ার ধ্বসে পড়েছিল বিমানের আঘাতে নয়, বরং ভবনটির ভেতরে বিস্ফোরক বসিয়ে তাউড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।

ওই ঘটনার ১৬ বছর পরও এসব তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা-বিতর্ক শেষ হয় নি।টুইন টাওয়ারে হামলার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ছড়ায় প্রথম ষড়যন্ত্র তত্ত্ব।

ডেভিড রস্টচেক নামের এক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী লিখলেন, “কেউ কি খেয়াল করেছেন যে ওয়ার্ল্ড টেড সেন্টার ভবনটি বিমানের আঘাতে ধ্বংস হয় নি? না কি শুধু আমিই এটা বুঝেছি?”

ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টাওয়ার দুটির শূন্য স্থানে আলোর স্মারক স্তম্ভ।

ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টাওয়ার দুটির শূন্য স্থানে আলোর স্মারক স্তম্ভ।

তার কথা ছিল, ভবনদুটিতে বিমান আঘাত করেছে এবং প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এটা ঠিক কথা – কিন্তু যে ভাবে টাওয়ার দুটি ভেঙে পড়েছে তার জন্য এর ভেতরে সঠিক জায়গায় বিস্ফোরক বসাতে হতো। এ কাজটা করতে হলে কাউকে অনেক সময় নিয়ে করতে হবে। প্রশ্ন হলো: প্লেনগুলোর তাহলে কি কাজ ছিল?

পরে অবশ্য তদন্ত করে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে বিমানের আঘাতের পর আগুনে টাওয়ার দুটির কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ওপরের তলাগুলো ভেঙে পড়তে থাকলে তার চাপে পুরো ভবনটিই ভেঙে পড়ে যায়।

কিন্তু এখনো কিছু লোক আছেন যারা এ কথা বিশ্বাস করেন না।

নিউইয়র্কে কিছু একটা ঘটেছে

সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখ লানজারোটেতে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন ম্যাট ক্যাম্পবেল। তার ত্রী দোকান থেকে কিছুএকটা কিনে ফিরে এসে বললেন ‘নিউ ইয়র্কে কিছু একটা ঘটেছে।’ এরপর তারা টিভিতে হামলার খবর দেখলেন।

কয়েক ঘন্টার মধ্যেই খবর এলো যে ম্যাটের ভাই জেফ নাকি ওই সময় উত্তর দিকের টাওয়ারে ছিলেন। এর পর থেকে জেফের আর কোন খবর পাওয়া যাচ্ছে না।

তিন ভাই রব (বাঁয়ে), ম্যাট আর জেফ।

তিন ভাই রব (বাঁয়ে), ম্যাট আর জেফ।

জেফ তার কয়েক বছর আগে থেকেই নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে বাস করছিলেন, কাজ করতেন রয়টার বার্তা সংস্থায়। নর্থ টাওয়ারে ১০৬ তলায় একটি সম্মেলন চলছিল, সেখানেই ছিলেন তিনি।

ম্যাট বলছিলেন, আমরা সবচেয়ে খারাপ ঘটনাটাই ঘটেছে বলে ধরে নিলাম।

নিউইয়র্কে গিয়ে নানা হাসপাতালে খোঁজ নিলেন তারা। কোন লাভ হলো না। তারা বুঝলেন, জেফ মারা গেছে।

শেষে তার কাঁধের হাড়ের একটি অংশ পাওয়া যায় ওয়ার্ল্ড টেড সেন্টারের ধ্বংসস্তুপে, ২০০২ সালে। তবে ওই ঘটনার তদন্ত শেষ হয় ২০১৩ সাল নাগাদ।

এর মধ্যেই ম্যাটের মনে ১১ই সেপ্টেম্বরের হামলার সরকারি ভাষ্য নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। তবে তিনি কোন একটি নির্দিষ্ট ষড়যন্ত্র তত্বে বিশ্বাসী ছিলেন না, যদিও অনলাইনে এরকম তত্ত্বের কোন অভাব নেই।

ম্যাট নিশ্চিত হলেন, তার ভাইয়ের মৃত্যু ঠিক কিভাবে হয়েছিল তা নিয়ে বহু কিছু আসলে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে, অনেক প্রশ্নের তিনি উত্তর পাচ্ছেন না। “২০০১ সালের অক্টোবর থেকেই এটা শুরু হয়েছিল। যতই দিন যাচ্ছে, আমি দেখলাম নানা রকম অসঙ্গতির সংখ্যা বাড়ছে।”

ম্যাট বলছেন, তিনি তথ্য জানার অধিকারসংক্রান্ত আইনের আশ্রয় নিয়ে এফবিআই এবং অন্য তদন্তকারী সংস্থার কাছে ওই ঘটনার বিস্তারিত জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তারা নানা কারণ দেখিয়ে তথ্য জানায় নি, আমি এখনো তাদের কাছ থেকে প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ পাইনি।

জেফ একা নন। ক্যালিফোর্নিয়ার চ্যাপম্যান বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৬ সালে এক জরিপ চালিয়ে বলেছে, অর্ধেকেরও বেশি আমেরিকান বিশ্বসা করে যে সরকার ৯/১১-র ঘটনা সম্পর্কে তথ্য গোপন করছে।

টুইন টাওয়ারের ধ্বংসস্তুপ।

টুইন টাওয়ারের ধ্বংসস্তুপ।

যেসব ষড়যন্ত্র তত্ব অনলাইনে ঘুরছে তার কিছু কিছু চরম নাটকীয়।

কোন কোনটিতে বলা হয়েছে, মার্কিন সরকার নিজেই ওই ঘটনায় জড়িত ছিল। কেউ বলেন, মার্কিন কর্মকর্তারা ইচ্ছে করেই আক্রমণটি ঘটতে দিয়েছেন। অন্য অনেকে বলেন, ঘটনার পরিকল্পনাতেই সরকার জড়িত ছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো ঝড়িয়েছে এই জন্য যে মাত্র কয়েকজন লোক মিলে অতিসাধারণ অস্ত্র দিয়ে এরকম ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাতে পারে তা লোকে বিশ্বাসই করতে পারে না।

কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কারেন ডগলাস বলছেন, যখন কোন একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে তখন লোকেরা এর একটা ব্যাখ্যা পেতে চায়, কিন্তু অনেকসময়ই সরকারি ব্যাখ্যা লোককে সন্তুষ্ট হতে পারে না।

“তারা চায়, ঘটনা যে মাপের – ব্যাখ্যাটাও সেই মাপের হতে হবে। সেটা না পেলেই ষড়যন্ত্র তত্বের জন্ম হয়” – বলছিলেন অধ্যাপক ডগলাস।

অন্যদিকে অনলাইন জগতে এসব তত্ত্ব ক্রমাগত প্রচার হতে থাকে – তাই এগুলো দেড় দশক পরও মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি।

অধ্যাপক ডগলাস বলছিলেন, ইন্টারনেটে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব তথ্য এমন লোকদের মধ্যেই শেয়ার হয় যাদের চিন্তাভাবনা একই ধরণের।

বেশ কিছু বই ও চলচ্চিত্র এসব ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব প্রচারে সহায়ক হয়েছে।

ডিভিড রে গ্রিফিন নামে দর্শন ও ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক ২০০৪ সালে একটি বই লেখেন – ‘দ্য নিউ পার্ল হারবার’ নামে। এতে তিনি ৯/১১-র ঘটনায় মার্কিন সরকারের জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন।

নিউইয়র্কে ৯/১১র মেমোরিয়াল।

নিউইয়র্কে ৯/১১র মেমোরিয়াল।

পরিচালক ডিলান এভারির ‘লুজ চেঞ্জ’ নামের ধারাবাহিক সিরিজের প্রথম পর্বটি প্রচার হয় ২০০৫ সালে। এতে ১১ই সেপ্টেম্বরের হামলা নিয়ে যেসব ‘জনপ্রিয়’ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আছে তার মধ্যে বেশ কয়েকটি স্থান পায়। কোটি কোটি লোক এগুলো দেখেছে, ইন্টারনেটে শেয়ার করেছে। এমনকি ওসামা বিন লাদেন নিহত হবার পর তার বাড়িতেও এর একটি ডিজিটাল কপি পাওয়া গেছে।

২০০৬ সালে রিচার্ড গেগ নামে একজন ক্যালিফোর্নিয়ান স্থপতি ৯/১১র সত্য প্রকাশের জন্য স্থপতি ও প্রকৌশলীদের একটি গ্রুপ গঠন করেন যার নাম এ ই নাইন ইলেভেন ট্রুথ। তারা ওই দিনের ঘটনার সরকারি বিবরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

বিবিসি রিপোর্ট

১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনা নিয়ে বিবিসির রিপোর্ট নিয়েও বহু প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছিল।

ঘটনাটি হচ্ছে, সেদিন ওয়ালর্ড ট্রেড সেন্টারের দুটি টাওয়ার ছাড়া ১০০ মিটার দূরের ডব্লিউটিসি নামে আরেকটি ৪৭ তলা ভবনও ধ্বংস হয়েছিল। কিন্তু ওই ভবনটিতে বিমানের আঘাত লাগেনি।

তবে ওই ভবনটি ভেঙে পড়া নিয়ে বিবিসির একটি রিপোর্টেও বিভ্রান্তি ও প্রশ্ন তৈরি হয়। ভবনটি আসলে যখন ভেঙে পড়েছিল তার ২০ মিনিট আগেই ভেঙে পড়ে বলে বিবিসির একটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল।

তবে ২০০৮ সালে আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ডস ও টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের এক রিপোর্টে বলা হয়, আগুন লেগে ভবনটির একটি প্রধান স্তম্ভ ভেঙে পড়ার পর পুরো ভবনটিই ভেঙে পড়ে।

তবে এ রিপোর্টও ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের খুশি করতে পারে নি। ম্যাট ক্যাম্পবেলও এখনো তার প্রশ্নের জবাব খুঁজে বেড়াচ্ছেন। ওই আক্রমণের মূল হোতা খালিদ শেখ মুহাম্মদের এক বিচার-পূর্ব শুনানীতে হাজিরা দেবার জন্য গুয়ানতানামো বে-তে গিয়েছিলেন তিনি।

সেই শুনানীকে ‘এক প্রহসন’ বলে আখ্যায়িত করেন ম্যাট ক্যাম্পবেল। “কিন্তু আমার ভাইয়ের হত্যাকান্ডের বিচার পাবার সবচেয়ে কাছাকাছি আমি যেতে পেরেছি সেখানেই” – বলেন তিনি।

বাংলা৭১নিউজ/সূত্র: বিবিসি বাংলা/এসএস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com