অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে মতিঝিলে যমুনা ব্যাংকের জন্য কমার্সিয়াল স্পেস ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলছে। এই অর্থের পরিমান প্রায় ২৫ কোটি টাকা হতে পারে বলে ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে। এখন প্রয়োজন শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন।
জানা যায়, ব্যাংকের একটি প্রভঅবশালী মহল সুপরিকল্পিতভাবে মতিঝিলে প্রস্তাবিত রূপায়ন রেড ক্রিসেন্ট টাওয়ারে ৮,৬৯৫ বর্গফুটের একটি কমার্সিয়াল স্পেস প্রতি বর্গফুট ৪৮ হাজার টাকা হারে ৫টি গ্যারেজসহ মোট ৪২ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে ক্রয়ের আয়োজন চুড়ান্ত করেছে। ব্যবসায়ীরা যখন মতিঝিল ছেড়ে গুলশানে ব্যবসায়ীক কার্যালয় স্থানান্তর করছে, তখন এ বিপুল পরিমান টাকা ব্যয়ে মতিঝিলে যমুনা ব্যাংকের কমার্সিয়াল স্পেস ক্রয় নিয়ে খোদ ব্যাংকের অভ্যন্তরেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
ঢাকা শহরের মতিঝিল এখন বলাযায় চলাচলের প্রায় অযোগ্য। একসময় মতিঝিল ছিল ঢাকার ব্যবসার কেন্দ্রস্থল। এখন তা চলে গেছে গুলশানে। সকল বাণিজ্যিক অফিসের প্রাণকেন্দ্রও এখন গুলশানে। সেখানে যমুনা ব্যাংকের জন্য মতিঝিলের মতো স্থানে এ বিপুল পরিমান টাকা ব্যয়ে স্পেস ক্রয় করার কারণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
জানা যায়, রূপায়ণ হাউজিং স্টেট লিমিটেড মতিঝিলের ৮৬-৮৭ হোল্ডিং ঠিকানায় ১৫ কাঠা জমির উপর ১৫ তলাবিশিষ্ঠ একটি ভবণ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রকল্পটি রাজউকের নীতিগত অনুমোদন পেলেও চুড়ান্ত অনুমোদন এখনও পায়নি। ২০২৪ সালের আগষ্ট মাসে যেটির কাজ সম্পন্ন হবার কথা রয়েছে। এ মুহুর্তে এর টাওয়ারের কাজ মাটির নীচে। রূপায়ণ হাউজিং স্টেট লিমিটেড যমুনা ব্যাংকের কাছে ৮,৬৯৫ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট প্রতি বর্গফুট ৫২ হাজার টাকা হারে ৪টি গ্যারেজসহ ৪৫ কোটি ৬০ লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রয়ের প্রস্তাব দেয়। ব্যাংক র্কতৃপক্ষ এনিয়ে একটি ক্রয় কমিটি গঠন করে। এই কমিটি প্রতিবর্গফুট স্পেসের দাম প্রতি ৫২ হাজার থেকে কমিয়ে ৪৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করে ৫টি গ্যারেজসহ ৪২ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকায় তা ক্রয়ের জন্য চুড়ান্ত করে।
জানা গেছে, বিধি মোতাবেক ব্যাংকের টাকায় কমার্সিয়াল স্পেসটি ক্রয়ের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। সে কাজটিই এখন করা হচ্ছে। সকল আয়োজন এখন সম্পন্ন। বাংলাদেশ ব্যাংকে গভর্নর বদল হবার আগেই তারাহুরো করে এ অনুমোদন আদায় করার জোড়া প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
যমুনা ব্যাংকের মত একটি সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠাণ কেন ন্যায়সঙ্গত (বাজার মূল্য) দামের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে মতিঝিলেে এমন ফ্ল্যাট ক্রয় করবে তা অনেকের কাছেই বোধগম্য নয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে যমুনা ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালকের দপ্তর থেকে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে রূপায়ণ বিল্ডিং স্টেট লিমিটেডের ৮৬-৮৭ মতিঝিল ঠিকানায় ১৫ কাঠা জমির উপর ১৫ তলাবিশিষ্ঠ নির্মানাধীন রূপায়ণ রেড ক্রিসেন্ট টাওয়ার নামে একটি ভবনে যমুনা ব্যাংকের জন্য ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর নির্মাণাধীন রূপায়ন রেড ক্রিসেন্ট টাওয়ার এর দ্বিতীয় তলায় প্রতি বর্গফুট ৫২ হাজার টাকা দরে ৮,৬৯৫ বর্গফুট সাইজের একটি স্পেস এবং ৪টি গ্যারেজ ৪৫ কোটি ৬০ লাখ ৪০ হাজার টাকায় ক্রয়ের জন্য একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। একই তারিখে অর্থাৎ ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর একই রেটে উল্লিখিত স্পেস ও গ্যারেজ বিক্রয়ের প্রস্তার দিয়ে ৫০ ভাগ টাকা বুকিং মানি প্রদানের প্রস্তাব দেয় রূপায়ণ বিল্ডিং স্টেট লিমিটেড। একই তারিখে এ দু’টি প্রস্তাবনার সাদৃশ্য নিয়ে বোর্ড সদস্যদের মধ্যেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
জানা যায়, ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর যমুনা ব্যাংকের ৩৯২ তম পরিচালনা পর্ষদে এটি আলোচ্য বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর ৩৯৪তম বোর্ড সভায় উল্রিখিত স্পেসটি যমুনা ব্যাংকের জন্য ক্রয়ের ব্যপারে একটি কমিটি গঠণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ওই বোর্ড সভায় বলা হয়, এমডি’র দপ্তর এ স্পেসের মূল্য প্রস্তার করেছে প্রতিবর্গফুট ৬৪ হাজার টাকা। অন্যদিকে, রূপায়ন রেড ক্রিসন্ট কর্তৃপক্ষ অফার দেয় ৫২ হাজার টাকা।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, একটি মহলের চাপে ২০২২ সালের ১৪ মার্চ, ব্যাংকের ৩৯৬ তম বোর্ড সভায় যমুনা ব্যাংকের জন্য উল্লিখিত ৮,৬৯৫ বর্গফুটের স্পেসটি প্রতিবর্গফুট ৪৮ হাজার টাকা দরে ৫টি গ্যারেজসহ ৪২ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ক্রয়ের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপেই এরকম নির্ধারিত বাজার দরের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে এরকম একটি বাণিজ্যিক স্পেস ক্রয় থেকে রক্ষা করতে পারে যমুনা ব্যাংকের মত সুপ্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিষ্ঠাণকে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ